Ajker Patrika

দারিদ্র্য, বিবাহবিচ্ছেদ জয় এবার পড়বেন মেডিকেলে

মো. আতাউর রহমান, জয়পুরহাট
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৫০
দারিদ্র্য, বিবাহবিচ্ছেদ জয় এবার পড়বেন মেডিকেলে

শারমিন আক্তার সুমি একজন অদম্য মেধাবী। তিনি একজন রিকশাচালকের মেয়ে। সংসারে নিত্য অভাব। এ জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার কয়েক মাস আগে সুমিকে বিয়ে দেন মা-বাবা। কিন্তু বিয়ে টেকেনি। মাত্র তিন মাসের মাথায় ছাড়াছাড়ি হয়। তবে সুমি এতে দমে যাননি। তিনি জোর প্রস্তুতি নেন মেডিকেলে ভর্তির। দিনরাত একাকার করে পড়াশোনা করেন। এ পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

সুমি জয়পুরহাট সদর উপজেলার কয়তাহার গ্রামের বাসিন্দা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে তাঁর রিকশাচালক বাবা গোলাম মোস্তফা আর গৃহিণী মা তহমিনা বেগম বেজায় খুশি। আগামী ৮ মে সুমির ভর্তি হওয়ার কথা। মা-বাবা বলেন, তাঁদের যা কিছু আছে, সব বিক্রি করে হলেও মেয়েকে পড়াবেন।

সুমির মা-বাবা আরও বলেন, তাঁদের মেয়ে স্কুলজীবন থেকেই পড়াশোনায় ভালো। সেই ছোট্টবেলায়ই সুমি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। মাধাইনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি এবং কালাই সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন সুমি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে বৃত্তি পান। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তারপর মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন সুমি। শেষমেশ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ আসে। কিন্তু ভর্তি এবং পড়ালেখার খরচ জোগানোর কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন সুমি। আর তখনই মা-বাবা বলেন, সুমিকে ডাক্তার হতেই হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বসতবাড়ির ১০ শতক এবং ৩৯ শতক আবাদি জমি বিক্রি করে দেবেন।

এই প্রেক্ষাপটে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু প্রতিনিধি পাঠিয়ে সুমির মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে লেখাপড়ার সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সুমিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুল হক সহযোগিতা দেবেন বলে সুমির পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন।

এদিকে অদম্য মেধাবী সুমির সাফল্য ও আর্থিক টানাটানির বিষয়ে ১১ এপ্রিল ফেসবুকে পোস্ট দেন লালন হোসেন নামের এক ব্যক্তি। পোস্টটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। মেডিকেলে ভর্তি এবং লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সুমিকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুমির বাবার বিকাশ অ্যাকাউন্টে আর্থিক সহযোগিতা আসা শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে সুমির বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় খুব খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে জমিজমা বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু এখন দুজন সাংসদসহ অনেকেই সুমির পাশে আছেন। এখন খুবই ভালো লাগছে।’

সুমি বলেন, ‘সহায়-সম্বল বিক্রি করে হলেও মা-বাবা আমাকে ডাক্তারি পড়াবেন—এ কথা শোনার পর মন খুব খারাপ ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাচ্ছি। আমার স্বপ্নপূরণে এসব হৃদয়বান মানুষের সহযোগিতা সহায়ক হবে। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। ডাক্তার হয়ে আমি মানুষের সেবায় কাজ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত