আ.লীগে অঙ্ক জটিল, নির্ভার বিএনপি

আমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আসন শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১)। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯১ সাল থেকে গত ছয়বারের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমানে সমান বিজয়ী। আগের টানা তিনবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া সংসদ সদস্য থাকলেও পরের তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল হয়েছেন তিনজন। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল।

স্থানীয়রা বলছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা কাজ করলেও ভারতের সীমান্তঘেঁষা এ সংসদীয় আসনের রাজনীতি এরই মধ্যে জমে উঠেছে। নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

পাড়া-মহল্লায় এখন ভোটারদের আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে কে পাচ্ছেন নৌকার টিকিট, আর কেই-বা হচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী। এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। তাঁদের সমর্থকেরা মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছেন। প্রচার চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।

এবার জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন প্রার্থীর কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ের জনমত গঠনে কাজ করছেন সম্ভাব্য এসব প্রার্থী। তাঁরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জিল্লার রহমান। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী ও শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হকও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে নৌকার টিকিট পেতে পাঁচজন নেতা তৎপর। প্রার্থী বেশি হওয়ায় শুরু হয়েছে জটিল সমীকরণ।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বর্তমান সংসদ সদস্যের তেমন ভূমিকা নেই। সরকারের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কোনো সহযোগিতা পাননি তাঁরা। তাই উপজেলা ও ইউনিয়নের অনেক নেতা তাঁর সমালোচনায় মুখর। 
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ আসনে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত চার বছরে স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ এলাকার প্রচুর উন্নয়ন করেছি। ফলে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক জনসমর্থন আমার পক্ষে আছে। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। তবে এ ক্ষেত্রে দলীয়  সভাপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ 

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগে আমাদের পারিবারের বিশেষ অবদান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সব দুর্যোগে জনগণের পাশে ছিলাম। নিশ্চয়ই দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, শিবগঞ্জ বিএনপির ঘাঁটি। এ আসনে দলটির প্রার্থী কে হবেন, তা প্রায় চূড়ান্ত। তাই দলটি অনেকটা নির্ভার। জানা গেছে, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিয়াই হবেন বিএনপির প্রার্থী। তবে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

জানতে চাইলে শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দল-মতনির্বিশেষে সবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। শিবগঞ্জ বিএনপির দুর্গ। এ আসনে আগামী নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হলে অতীতের মতো এ আসনে আমি আবারও জয়ী হব বলে আশাবাদী।’

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এ আসনের প্রার্থী হিসেবে ড. কেরামত আলীর নাম ঘোষণা করেছে। রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির কেরামত আলী দুবার শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ভেতরে-ভেতরে তৎপরতা চালাচ্ছেন।