Ajker Patrika

পদ্মা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১০: ১০
পদ্মা

দূরের পদ্মা এসে হাজির হলো গ্রামের কাছে। দূর থেকে যে পদ্মাকে দেখে আসতে হতো, তা আশপাশের চর ভাঙতে ভাঙতে ফুঁসতে লাগল। গোল গোল ঘূর্ণিগুলো প্রথমে এসে মাটিকে আঘাত করে। তারপর পাড়ের নিচের মাটি ধুয়ে ফেলে। এরপর বিকট শব্দে গাছগাছালিসহ অনেকখানি জমি পানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

পদ্মা কারও কথা শোনে না। কিন্তু অসহায় মানুষদের পাশে তো দাঁড়াতে হবে। জসীমউদ্‌দীন আলাপে বসেন মনাদার সঙ্গে। স্কুলের বড় ছেলেরা তো ঘরহীন মানুষের ভাঙা ঘরগুলো নিয়ে বন্যার ভয়হীন জায়গায় রেখে আসতে পারে। ছোট ছেলেরা তাদের হাঁড়ি-পাতিল, আসবাব নিরাপদ জায়গায় রেখে আসতে পারে। মনাদা একটা আবেদন করলেন স্কুলের হেডমাস্টার বরাবর। হেডমাস্টার সাহেব খুব খুশি হলেন। ক্লাসে ক্লাসে প্রচার করার হুকুম দিলেন তিনি। স্কুলের ছেলেরা দলে দলে সাহায্য করতে ছুটল।

ফরিদপুরের দুই প্রসিদ্ধ উকিল বাবু পূর্ণচন্দ্র মৈত্র আর মথারানাথ মৈত্রের চোখে তা ভালো লাগল না। তাঁরা দুজন চিঠি লিখলেন হেডমাস্টার বরাবর, বললেন, ‘নদীভাঙনের লোকদিগকে ছেলেরা যে সাহায্য করিতে যাইতেছে, তাহারা যদি জলে ডুবিয়া মরে, সে জন্য কে দায়ী হইবে?’ হেডমাস্টার পরদিন থেকে ছাত্রদের আর সাহায্যে যেতে অনুমতি দিলেন না।

তখন মনাদা উকিল দুজনের নামে অনামী পত্র লিখলেন। এই দুই উকিল এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তাই চিঠিতে মনাদা লিখলেন, ‘তাঁরা দুজন কোন অধিকারে পূর্ববঙ্গের ছেলেদের অভিভাবক হইয়া বসিলেন? অসহায় গ্রামবাসীদের দুঃখে পূর্ববঙ্গের ছেলেদের সেবাকার্যে যদি তাহারা সত্য সত্যই বাধা হইয়া দাঁড়ান, তবে ইহার প্রতিকার পূর্ববঙ্গের ছেলেরাই করিবে।’

এটি লাইব্রেরির নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দিলেন মনাদা আর জসীম। নোটিশখানি পড়ে অন্য সব উকিল ওই দুই উকিলের নামে ছি ছি করতে লাগলেন। আর মৈত্রদ্বয় ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। তাঁরা ভাবলেন এ বিপ্লবীদের কাজ। তাঁরা নিজেদের চিঠি প্রত্যাহার করে নিলেন। ছেলেরা আবার অসহায় মানুষের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে শুরু করল।

সূত্র: জসীমউদ্‌দীন, জীবনকথা, পৃষ্ঠা ২৩০-২৩২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত