মো. ফজলুল আলম
খাদ্যনিরাপত্তা পরিভাষাটির প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্যবহার হয় ১৯৭৪ সালে, বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি সুস্থ ও অর্থবহ জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে সব সময় সব মানুষের প্রবেশযোগ্যতাকে খাদ্যনিরাপত্তা বলে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্যনিরাপত্তার বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যনিরাপত্তা: ইসলামে শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় উৎপাদন ও সুষম বণ্টনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। তবে এ বিষয়ে লিখিত দলিল খুব কমই পাওয়া যায়। অল্প যা সংরক্ষিত আছে, তা মূলত পণ্যের হালাল-হারাম কিংবা এ-সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা। কারণ ইসলাম মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে সম্পর্ক এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে নৈতিকতা ও সততার রজ্জু দিয়ে বাঁধতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে সমাজে খুব সহজেই সুষম বণ্টনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইসলামি রাষ্ট্র মৌলিকভাবে তিনটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলত—কোষাগার, খাদ্য সংরক্ষণ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ। একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ পরিষদ সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ, ক্রমোন্নতি ও পরিকল্পনা করার দায়িত্বে থাকত।
প্রসিদ্ধ সব মাজহাব মতে, মুসলমানদের একটি অংশকে অবশ্যই উৎপাদনকাজে নিয়োজিত থাকতে হবে, যাতে ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এটি ফরজে কেফায়া।
ইমাম কুরতুবি বলেন, ‘সমৃদ্ধির অন্যতম শর্ত হলো চাষাবাদ। তাই মুসলিম রাষ্ট্রের অভিভাবকদের অবশ্যই পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে জমি চাষ এবং আবাদে বাধ্য করতে হবে।’
তা ছাড়া হাদিসে খাদ্য উৎপাদনকে সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহিহ্ তারগিব: ৯৫৯) শুধু তা-ই নয়, নিরাপদ খাদ্য অন্বেষণ ইসলামে ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। (সুরা বাকারা: ৫৭ ও ১৭২)
খাদ্যনিরাপত্তায় মহানবী (সা.)-এর পদক্ষেপ: ভৌগোলিক কারণে আরব উপদ্বীপে পর্যাপ্ত উৎপাদন সম্ভব হতো না। ফলে প্রায়ই দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। এ সমস্যা মোকাবিলায় মহানবী (সা.) বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিলাল আল-মুজানিকে লোহিত সাগর এবং শীলা পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক বিস্তীর্ণ জমি দিয়ে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.)-এর অনেক সাহাবি কৃষিকাজ করতেন এবং মদিনায় তাঁদের খামার ও বাগান ছিল। তিনি অনেক সাহাবিকে বিস্তীর্ণ জমি চাষাবাদ এবং তাতে বিনিয়োগ করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
মহানবী (সা.)-এর সময়ে মুসলিমরা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করত; অর্থাৎ একজন মুসলিম অন্য এক মুসলিমের জমি চাষাবাদ করত, যাতে চাষি বীজ, সেচ ও জমি দেখভাল করত আর ফসল তোলার সময় জমির মালিককে এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ ফসল দিত। এতে অনাবাদি জমির পরিমাণ একেবারেই কমে আসে এবং নিরাপদ খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায়।
তা ছাড়া বাজার তত্ত্বাবধানের জন্য রাসুল (সা.) একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করতেন, যাকে মুহতাসিব বলা হতো। ইসলামের প্রথম মুহতাসিব ছিলেন সাইদ ইবনে আনাস (রা.)।
চার খলিফার আমলে খাদ্যনিরাপত্তা: খোলাফায়ে রাশেদা খাদ্যনিরাপত্তায় রাসুল (সা.)-এর গৃহীত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করেন। ওমর (রা.) ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি অনাবাদি জমি আবাদ করবে, সেটা তাকে দেওয়া হবে। এতে প্রায় সব অনাবাদি জমি ফসলে ভরে ওঠে। তাঁর পরের খলিফারাও একই পন্থা অবলম্বন করেন। তাঁর আমলে আরবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যার অন্যতম হলো—মানুষের শাস্তির বিধান শিথিল করা এবং মুসলিম বিশ্বের সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য এনে দুর্ভিক্ষকবলিত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা। এ ছাড়া কৃষির উন্নয়নে জাকাত ফান্ড ব্যবহার, শস্যভান্ডার তৈরি ও সুষম বণ্টন এবং জনকল্যাণে বায়তুল মাল গঠন খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওমর (রা.)-এর দূরদর্শিতার প্রমাণ।
রাসুল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা ইসলামের সোনালি যুগে খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, বর্তমান বিশ্বসংকট মোকাবিলায় তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: মুসলিম হেরিটেজ ডটকম
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
খাদ্যনিরাপত্তা পরিভাষাটির প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্যবহার হয় ১৯৭৪ সালে, বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি সুস্থ ও অর্থবহ জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে সব সময় সব মানুষের প্রবেশযোগ্যতাকে খাদ্যনিরাপত্তা বলে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্যনিরাপত্তার বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যনিরাপত্তা: ইসলামে শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় উৎপাদন ও সুষম বণ্টনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। তবে এ বিষয়ে লিখিত দলিল খুব কমই পাওয়া যায়। অল্প যা সংরক্ষিত আছে, তা মূলত পণ্যের হালাল-হারাম কিংবা এ-সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা। কারণ ইসলাম মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে সম্পর্ক এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে নৈতিকতা ও সততার রজ্জু দিয়ে বাঁধতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে সমাজে খুব সহজেই সুষম বণ্টনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইসলামি রাষ্ট্র মৌলিকভাবে তিনটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলত—কোষাগার, খাদ্য সংরক্ষণ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ। একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ পরিষদ সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ, ক্রমোন্নতি ও পরিকল্পনা করার দায়িত্বে থাকত।
প্রসিদ্ধ সব মাজহাব মতে, মুসলমানদের একটি অংশকে অবশ্যই উৎপাদনকাজে নিয়োজিত থাকতে হবে, যাতে ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এটি ফরজে কেফায়া।
ইমাম কুরতুবি বলেন, ‘সমৃদ্ধির অন্যতম শর্ত হলো চাষাবাদ। তাই মুসলিম রাষ্ট্রের অভিভাবকদের অবশ্যই পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে জমি চাষ এবং আবাদে বাধ্য করতে হবে।’
তা ছাড়া হাদিসে খাদ্য উৎপাদনকে সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহিহ্ তারগিব: ৯৫৯) শুধু তা-ই নয়, নিরাপদ খাদ্য অন্বেষণ ইসলামে ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। (সুরা বাকারা: ৫৭ ও ১৭২)
খাদ্যনিরাপত্তায় মহানবী (সা.)-এর পদক্ষেপ: ভৌগোলিক কারণে আরব উপদ্বীপে পর্যাপ্ত উৎপাদন সম্ভব হতো না। ফলে প্রায়ই দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। এ সমস্যা মোকাবিলায় মহানবী (সা.) বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিলাল আল-মুজানিকে লোহিত সাগর এবং শীলা পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক বিস্তীর্ণ জমি দিয়ে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.)-এর অনেক সাহাবি কৃষিকাজ করতেন এবং মদিনায় তাঁদের খামার ও বাগান ছিল। তিনি অনেক সাহাবিকে বিস্তীর্ণ জমি চাষাবাদ এবং তাতে বিনিয়োগ করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
মহানবী (সা.)-এর সময়ে মুসলিমরা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করত; অর্থাৎ একজন মুসলিম অন্য এক মুসলিমের জমি চাষাবাদ করত, যাতে চাষি বীজ, সেচ ও জমি দেখভাল করত আর ফসল তোলার সময় জমির মালিককে এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ ফসল দিত। এতে অনাবাদি জমির পরিমাণ একেবারেই কমে আসে এবং নিরাপদ খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায়।
তা ছাড়া বাজার তত্ত্বাবধানের জন্য রাসুল (সা.) একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করতেন, যাকে মুহতাসিব বলা হতো। ইসলামের প্রথম মুহতাসিব ছিলেন সাইদ ইবনে আনাস (রা.)।
চার খলিফার আমলে খাদ্যনিরাপত্তা: খোলাফায়ে রাশেদা খাদ্যনিরাপত্তায় রাসুল (সা.)-এর গৃহীত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করেন। ওমর (রা.) ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি অনাবাদি জমি আবাদ করবে, সেটা তাকে দেওয়া হবে। এতে প্রায় সব অনাবাদি জমি ফসলে ভরে ওঠে। তাঁর পরের খলিফারাও একই পন্থা অবলম্বন করেন। তাঁর আমলে আরবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যার অন্যতম হলো—মানুষের শাস্তির বিধান শিথিল করা এবং মুসলিম বিশ্বের সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য এনে দুর্ভিক্ষকবলিত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা। এ ছাড়া কৃষির উন্নয়নে জাকাত ফান্ড ব্যবহার, শস্যভান্ডার তৈরি ও সুষম বণ্টন এবং জনকল্যাণে বায়তুল মাল গঠন খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওমর (রা.)-এর দূরদর্শিতার প্রমাণ।
রাসুল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা ইসলামের সোনালি যুগে খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, বর্তমান বিশ্বসংকট মোকাবিলায় তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: মুসলিম হেরিটেজ ডটকম
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪