Ajker Patrika

পুণ্যাহ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ১০: ৪৫
পুণ্যাহ

রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন উনত্রিশ-ত্রিশ, তখন তিনি জমিদার হয়ে প্রথম যান শিলাইদহে। নতুন জমিদার পুণ্যাহে আসছেন, সেটা জেনে কুঠিবাড়িতে উৎসব লেগে গেল। আমলা-গোমস্তারা ছোটাছুটি লাগিয়ে দিলেন। প্রজারাও উৎসুক হয়ে ভিড় জমালেন কুঠিবাড়ির সামনে। রবীন্দ্রনাথের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামনে আরও কিছু চেয়ার। আর রয়েছে শতরঞ্জি, কিছু চাদরে ঢাকা, কিছু চাদর ছাড়া।

নায়েব এসে বললেন, ‘বসুন, বাবু মশাই, অনুষ্ঠান এখনই শুরু হবে।’ রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘না, অনুষ্ঠান এখনই শুরু হতে পারে না। আমি বসতে পারি না। আগে এই চেয়ারগুলো সরান।’এই চেয়ার রাখা ছিল বড়লোক প্রজা আর আমলাদের জন্য। নায়েব বললেন, ‘এটাই নিয়ম। প্রিন্স দ্বারকানাথের আমল থেকে এই নিয়ম চলে আসছে।’ 
রবীন্দ্রনাথ জানতে চাইলেন, ‘শতরঞ্জির একটি অংশ চাদরে ঢাকা, অন্য অংশে চাদর নেই কেন?’নায়েব বললেন, ‘চাদরে ঢাকা অংশে বসবে হিন্দু প্রজা, অন্য অংশে মুসলমান প্রজা।’

রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘এই মিলনের দিনে চেয়ার তো সরাতেই হবে, হিন্দু-মুসলমান সব প্রজার জন্য এক ব্যবস্থা করতে হবে। হয় সবার জন্য চাদর, নয় কারও জন্য চাদর বিছানো হবে না।’নায়েব বিপর্যস্ত হয়ে বললেন, ‘বরাবর এই নিয়ম চলে আসছে। আমি কোনো পরিবর্তন করতে পারব না।’
রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘পরিবর্তন না হলে আজ পুণ্যাহ হবে না।’

‘আমি তাহলে পদত্যাগ করব।’‘তা করতে পারেন। কিন্তু ভেদাভেদ না তুললে আমি তো বসবই না, পুণ্যাহও হবে না।’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর জায়গা থেকে সরলেন না। চেয়ার সরে গেল, সবার বসার জন্য একই ব্যবস্থা করা হলো।এবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর জন্য রাখা জমকালো সিংহাসনটির দিকে তাকালেন। তারপর সেটা সরিয়ে দিয়ে শতরঞ্জির ওপর গালিচা পেতে বসলেন। পুণ্যাহ সমাপ্ত হলো। 

সূত্র: অমিতাভ চৌধুরী, একত্রে রবীন্দ্রনাথ, পৃষ্ঠা ১৮১-১৮২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত