Ajker Patrika

ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে বৃষ্টি, এরপর বাড়বে গরম 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭: ১৮
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে বৃষ্টি, এরপর বাড়বে গরম 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ পরিবর্তিত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়া এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার সারা দিনে কক্সবাজারে প্রায় ২০ ইঞ্চি বৃষ্টি (৫০১ মিলিমিটার) বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশে আরও এক দিন অর্থাৎ আগামীকাল রোববারও বৃষ্টিপাত হবে। এরপর বৃষ্টি কমে বাড়বে ভ্যাপসা গরম।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি স্থূল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি হচ্ছে, এটি আগামীকালও থাকবে। এরপর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যাবে। বৃষ্টি কমে গেলে গরম বাড়বে।’

ওমর ফারুক বলেন, ‘আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া, কুতুবদিয়ায় ৫৮ মিলিমিটার, হাতিয়া ৪৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। খুলনা বিভাগের যশোরে ২১ মিলিমিটার, কয়রাতে ২০ মিলিমিটার এবং বরিশাল বিভাগে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’

আবহাওয়ার অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কুতুবদিয়াতে ২৭৩ মিলিমিটার বা ১০ ইঞ্চি বৃষ্টি, সন্দীপে ১৫২ মিলিমিটার বা ৬ ইঞ্চি। এ সময় ঢাকায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উত্তর–পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ, পরবর্তীকালে গভীর স্থূল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আজ শনিবার সকাল ৯টায় যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিম বঙ্গ, গভীর স্থূল নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ ছাড়া মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এর আগে রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, গত সপ্তাহের শনিবার ভিয়েতনামে আঘাত হেনেছে দক্ষিণ চীন সাগর উৎপত্তি ঝড় ‘ইয়াগি’। এই ঝড়ের পরবর্তী প্রভাব বাংলাদেশের কাছাকাছি আসতে পারে। এর প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে সে সময় বলেন, মঙ্গলবার থেকে দেশে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে ইয়াগির কারণে। তিন-চার দিন বৃষ্টির প্রভাব থাকবে।

বৃহস্পতিবার থেকেই কক্সবাজারে বৃষ্টি শুরু হয়। ওই দিন রাতে শুক্রবার সারা দিনে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়। আবহাওয়ায় অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৪৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ জুন ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের সকল প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম বিভাগের মুহরী, ফেনী ও মাতামুহুরি নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে, গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে অপরদিকে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি. মি/ ২৪ ঘণ্টা) প্রবণতার প্রেক্ষিতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর স্থল নিম্নচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী দুই দিন উপকূলীয় ও দেশের মধ্যাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (২৮৯ মি. মি/ ২৪ ঘণ্টা) পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত