Ajker Patrika

প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ জরুরি 

আশিকুর রহমান সমী 
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৩৭
প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ জরুরি 

বাংলাদেশের আয়তন খুব বেশি না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। ইন্দোচায়না ও ইন্দোবার্মা নামক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থানের কারণে এই প্রাচুর্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবসৃষ্ট কারণে এ দেশের বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আজ হুমকির মুখে। 

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তবে আমাদের প্রাণিবৈচিত্র্যের অনেক তথ্য এখনো আমাদের অজানা, বিশেষ করে অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বেলায় এটি বেশি খাটে। ফলে জানার আগেই হারানোর পথে আছে কোনো কোনো প্রজাতি। 

বন্যপ্রাণীর জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি আবাসস্থল নষ্ট হওয়া। প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা। তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাসস্থলের গুণগত মান। 

প্রজাতিভেদে প্রাণীদের বেঁচে থাকার চাহিদা, পরিবেশ, বাস্তুসংস্থানে খাপ খাওয়ানোর ধরন ভিন্ন। আর প্রতিবেশব্যবস্থার এই ভিন্নতা তৈরি করেছে জীববৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যময়তায় এক প্রাণী আরেক প্রাণীর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এই বাস্তুতন্ত্র বিভিন্ন জৈব নিয়ামক নিয়ে গঠিত। এর কোনো একটিতে পরিবর্তন হলে আক্রান্ত হয় ওই পরিবেশকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা প্রাণীরা এবং পুরো বাস্তুতন্ত্র। 

আজ থেকে বছর দশেক আগেও চারপাশে যে জীববৈচিত্র্যের সমাহার ছিল, তা কি আজ আছে? বাড়ির পাশেও যে ঘন জঙ্গল ছিল, সেই জঙ্গল কি এখনো সবুজ? কিংবা ওই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা লতাগুল্মেরই বা কী অবস্থা? কিংবা জলাশয়গুলো, জলজ উদ্ভিদ, সবকিছু ঠিক আছে তো? 

প্রকৃতির এক অনন্য উপাদান ফড়িং। তারা জলাশয়ের সুস্থতা নির্দেশক প্রাণী। একটি পরিবেশ কতটা সুস্থ তা বোঝা যায় ফড়িংয়ের উপস্থিতি দেখে। মশাসহ ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে ফড়িং আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি এই শিকারি পতঙ্গ খায় ফসলের পোকা। যদি বলা হয় সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে কেন এত মশার প্রাদুর্ভাব, তাহলে বলতে হবে, ফড়িংয়ের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া এতে ভূমিকা রেখেছে। 

নিজের করা এক গবেষণা থেকে জেনেছি, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের দিকে ঢাকা শহরে ৫০ প্রজাতির বেশি ফড়িং দেখা যেত। পাশাপাশি এসব ফড়িংয়ের সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ক্রমাগত জলজ পরিবেশের দূষণ, জলাশয় ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে ফড়িং আজ হুমকির মুখে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এই ফড়িংয়ের এখন টিকে থাকা প্রজাতির সংখ্যা ৩৭। এদের সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ, যা মশাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পোকামাকড়ের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ। সময় এখন জলাভূমিগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের। না হলে ক্রমাগতই আমরা হারিয়ে ফেলব আমাদের ফড়িংদের। 

প্রজাপতি প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি হলেও দিনে দিনে এর সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। প্রজাপতিবিদ শাওন চৌধুরীর গবেষণা অনুযায়ী পাঁচ বছর আগেও ঢাকা শহরে ১৩৭ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই সংখ্যা এখন ৫০-৬০-এ এসে দাঁড়িয়েছে। শহর সবুজে ঘেরা পরিবেশ হারানোয় বিপদে আছে এখানে বাস করা পাখিরা। ছবি: লেখকবিজ্ঞানীরা মনে করেন এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রজাপতির দেশীয় পোষক উদ্ভিদের সংখ্যা কমে যাওয়া। বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এসব পোষক উদ্ভিদের সংখ্যা কমার বড় কারণ। এ ছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ, কলকারখানার বিস্তার, বনভূমি উজাড় করে কৃষি সম্প্রসারণ, যানবাহনে অধিক চাপ, অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে প্রজাপতি সংখ্যা আজ হুমকির মুখে।

বিজ্ঞানীদের মতে, বেশ কিছু প্রজাপতি যেমন স্পটেড ব্ল্যাক ক্রো, কমন রেভেন, লেজার ব্যাটউইং, হোয়াইট টাইগারের মতো প্রজাপতির বিস্তৃতি দেশব্যাপী কমে গেছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা না করতে পারলে আমরা হারাব অসংখ্য প্রজাপতি, যা হুমকিস্বরূপ হবে আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে। 

ব্যাঙ প্রকৃতির এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। পরিবেশ, প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে রয়েছে এই প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মো. মাহাবুব আলম তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, একটি ব্যাঙ জীবনে ৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। কিন্তু এ দেশের জলাশয় ও জলজ পরিবেশ ক্রমশ ধ্বংসের পথে। প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশের গুণাগুণ হারিয়ে এখন দূষিত। পাশাপাশি ক্রমশ ভরাট হচ্ছে জলাশয়। জলাভূমি দূষণ, নগরায়ণ, ফসলের খেতে কীটনাশকের অধিক প্রয়োগসহ বিভিন্ন কারণে আবাসস্থলের সংকটে উভচর প্রাণীরা। এতে ক্রমেই কমছে কৃষকের নীরব বন্ধু এই প্রাণীর সংখ্যা। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান, মো. ফজলে রাব্বিসহ একটি গবেষণা দলের গবেষণায় বাংলাদেশে কাইট্রিড নামক ছত্রাক এবং রানা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কাইট্রিডের উপস্থিতির গবেষণাপত্রটি ইকো হেলথ নামক আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই ছত্রাকঘটিত রোগের কারণে বিলুপ্তির সম্মুখীন হতে পারে আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু ব্যাঙ। 

অতি প্রাচীনকাল থেকে এ দেশের মানুষের মধ্যে আছে সরীসৃপজাতীয় প্রাণী, বিশেষ করে সাপের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাস, যা এখনো কাটেনি। দিন যত যাচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে মানুষ হাত বাড়াচ্ছে বনের দিকে। খাদ্যচাহিদা পূরণে অধিক ফসলের জন্য নতুন জমি, নতুন আবাসস্থল, স্থাপনা—সবকিছুই হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে। এতে তৈরি হচ্ছে মানুষ-সরীসৃপ সংঘাত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারা পড়ছে সাপ, কিছু ক্ষেত্রে মানুষ। মানুষের আবস্থলের আশপাশে ছয় প্রজাতির বিষধর সাপের বসবাস। কিন্তু মানুষ অজ্ঞতার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারা পড়ে নির্বিষ সাপও। মারা যাচ্ছে পরিবেশের বন্ধু গুইসাপও। 

সম্প্রতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান এবং তার গবেষণা দলের গবেষণায় দেখা যায় ২০১৮-১৯ সালে আমাদের উত্তরবঙ্গে সাপ নিয়ে মানুষের ধারণায়ও এ তথ্য বের হয়ে আসে। ‘স্টুডেন্ট পারসেপশন অন স্নেইক ইন নর্থ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটি ‘এশিয়ান জার্নাল অব এথনোবায়োলজি’ নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। এতে জানা গেছে, ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপ ক্ষতিকর প্রাণী, ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, সাপ মানুষকে আক্রমণ করে, ৯২ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় সাপ মারতে দেখেছে, ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেরাই সাপ মেরেছে আর ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সাপ মারার মাধ্যমে আনন্দ পায়। 

গবেষণা চলাকালে শিক্ষার্থীরা সাপ সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণা উল্লেখ করে। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপের মণি আছে। ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায় সাপুড়ের বীনের তালে সাপ নাচে। সাপ দুধ খায় কি না—এই প্রশ্নে ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপ দুধ খায়। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সাপ কোনো ধরনের তরল খাদ্য গ্রহণে অক্ষম। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো, ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপ প্রতিশোধ নিতে পারে। পাশাপাশি ওঝার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের থেকে। তাহলে এটা স্পষ্ট, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেই বাংলাদেশে সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি হচ্ছে না। তাহলে বোঝাই যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থেকে দূরে। 

প্রায়ই আসে তক্ষক বা কচ্ছপের পাচার ও আটকের সংবাদ। মানুষের ভ্রান্ত ধারণার কারণে তক্ষক প্রাণীটি এখন বিপন্ন। আর কচ্ছপের সংখ্যা তো কমতে কমতে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে এ দেশের ৩০ প্রজাতির মধ্যে ২২ প্রজাতির কচ্ছপ এখন বিপদাপন্ন প্রাণীর তালিকায়। 

গ্রাম হোক বা শহর, বর্তমানে ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে গাছপালার সংখ্যা। বুনো যে দেশজ গাছপালা ছিল, যে গাছগুলোর ফল বুনো পাখিরা খেত কিংবা আশ্রয়স্থল ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন হারিয়ে গেছে এবং যা অবশিষ্ট আছে, তা-ও বিলুপ্তির মুখে। সরাসরি অর্থনৈতিক অবদান না থাকায় নতুন করে গাছগুলো আর রোপিত হচ্ছে না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গাছগুলোকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা পাখি। শহর এলাকায় এর মাত্রা মারাত্মক। 

বন্যপ্রাণীর মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে জলচর পাখি। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা অনন্য। কিন্তু তবু এসব পাখি সারা বছর, বিশেষ করে শীত মৌসুমে অবৈধভাবে শিকার হচ্ছে মানুষের হাতে। ফলে ক্রমেই কমে যাচ্ছে এসব পাখির সংখ্যা। বিশেষভাবে পরিযায়ী হাঁস, বগা-বগলা, শামুকখোল বা বড় বকজাতীয় পাখি শিকার হচ্ছে নিয়মিত। ফাঁদ, বিষটোপ ও বন্দুক ব্যবহার করে মারা হচ্ছে এসব পাখি। 

নিজের এক গবেষণা থেকেই জানতে পেরেছি, বাংলাদেশের গঙ্গা অববাহিকায় প্রত্যন্ত এলাকার পাখিরা ভালো নেই। অবৈধ শিকার, অনিয়মতান্ত্রিক পর্যটন, জলাশয় বা প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট, পাখি চোরাচালানে পাখিরা আজ বিপন্ন। পাখির গুরুত্ব এখনো সাধারণ মানুষের দুয়ারে তেমনভাবে পৌঁছায়নি। ফলে এখনো বিভিন্ন পাখিকে ক্ষতিকর মনে করে হত্যা করে মানুষ। ২০২৩ সালে যেমন ফসলের খেতের পাশের বাবুই পাখিদের ধরে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ মানুষ ভেবেছিল এসব পাখিরা তাদের ফসলের একটা বড় অংশ খেয়ে ফেলে। অথচ তারা জানেনই না যে এসব পাখি তাদের ফসলকে ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। ঠিক তেমনি হত্যার শিকার হচ্ছে জলাশয়ের আশপাশের বা জলাশয়ের মধ্যে থাকা পাখিরা। পাশাপাশি আবাসস্থলের গুণগত মান নষ্ট হওয়া, আবাসস্থলের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়া, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কারণে আজ পাখিরা বিপন্ন। 

বাংলাদেশের নগরগুলোতে আজ পাখিরা সব থেকে বেশি বিপন্ন। কারণ শহর হারাচ্ছে সবুজে ঘেরা পরিবেশ। আর পাখিরা হারাচ্ছে আবাসস্থল। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এ রকম কিছু তথ্য পেয়েছি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান এবং আমার নিজের গবেষণায়। ঢাকা শহরের পাখিরা আজ চরম হুমকির মুখে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের চারপাশের পাখিরা। যেখানে একসময় পাখির প্রজাতি সংখ্যা ছিল ১৩০ আজ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী নেমে এসেছে ৭৭-এ। 

এ দেশে একসময় মিঠাপানির শুশুকের দেখা খুব সহজে পাওয়া গেলেও এখন আর সহজে দেখা যায় না। জলাশয়গুলো ক্রমেই দূষিত হচ্ছে। আর নষ্ট হচ্ছে জলজ পরিবেশে। এখনো কোথাও কোথাও শুশুক ধরে বিক্রি হয়। আর বড় বড় নদীতে মাছের জালে আটকা পড়ে শুশুক। গত কয়েক বছরে সমুদ্রের পাড়ে মৃত তিমি বা ডলফিন ভেসে আসতে দেখা গেছে। কিন্তু এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা এখনো সম্ভব হয়নি।গবেষণায় দেখা গেছে একটি ব্যাঙ জীবনে ৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। ছবি: লেখকডাঙার সর্ববৃহৎ প্রাণী হাতির আবাস ছিল একসময় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগের বড় বনগুলোতে। কিন্তু কালক্রমে এখন বইয়ের পাতায় ছবি হওয়ার অপেক্ষায়। গত দুই বছরে মৃত্যু হয়েছে ৩৪টি হাতির। যদিও মৃত্যু বললে ভুল হবে, আসলে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে এ দেশের মহাবিপন্ন এই প্রাণীকে। যদি গত পাঁচ বছরের হিসাব করা হয়, সংখ্যাটি ৭০-এর বেশি। আর ২০১৬ সালের আইইউসিএনের তথ্যমতে, হাতির সংখ্যা ২৬৮। এরপর এখন কতটি হাতি টিকে আছে তার সঠিক সংখ্যা অজানা। 

বর্তমানে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলে ও সীমান্তবর্তী এলাকায় দেখা মেলে বুনো হাতির। কিন্তু মানুষ বন উজাড় করছে, হাতির চলাচলের পথে কাটাতাঁর দিচ্ছে, পানির উৎস নষ্ট করছে, হাতির খাদ্যের উৎস নষ্ট করে ফসলের খেত তৈরি করছে, কিন্তু দোষটা দিচ্ছে হাতির ওপর। হাতিকে বৈদ্যুতিক শকসহ বিভিন্ন পন্থায় করা হচ্ছে হত্যা। হাতি-মানুষের এই দ্বন্দ্বে মারা যাচ্ছে অনেক হাতি। এভাবে আর কিছুকাল পরেই হয়তো প্রাণীটির জায়গা হবে শুধু জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, সাফারি পার্ক আর বইয়ে পাতায়। 

এমন একটি সপ্তাহ নেই যেখানে দু-একটি মেছো বিড়ালের মৃত্যুর খবর বা উদ্ধারের খবর না আসে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এবং গণমাধ্যমে কিছু খবর সামনে এলেও বেশির ভাগ অজানা। অনেক ক্ষেত্রে নিশাচর এই প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এ দেশের কোনো মহাসড়কই বন্যপ্রাণী পারাপারের উপযোগী করে গড়ে উঠছে না। ফলে প্রাণ যাচ্ছে উপকারী বন্যপ্রাণীর। সম্প্রতি একটি মর্মর বিড়াল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে চট্টগ্রামে। অথচ এই প্রাণীকে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে মাত্র কয়েকবার দেখা গেছে এর আগে। 

এ ছাড়া এই প্রাণীগুলোর প্রতি মানুষের রয়েছে অহেতুক ভয়। যেমন—মেছো বিড়াল, চিতা বিড়ালকে বাঘের বাচ্চা মনে করা। আছে নানান ভুল ধারণা, যেমন—শিয়ালের চামড়ার বা মাংসের ঔষধি গুণ আছে, বিন্টুরং মৃত মানুষের কবর খুঁড়ে লাশ খায়। এ কারণে বছর দুয়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বিন্টুরং পিটিয়ে মারা হয়। এ ছাড়া মেছো বিড়ালকে বাঘ মনে করে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। মারা হচ্ছে চিতা বিড়ালকেও। বন্যায় শিয়ালের গর্ত পানিতে ডোবে। এ সময় প্রাণীগুলো আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের চারপাশে চলে আসে। আর মানুষ অমানবিকভাবে হত্যা করছে প্রাণীদের। 

২০২২ সালে প্রকাশিত আমার একটি গবেষণা অনুযায়ী কোভিড ১৯ মহামারি সময়ে ১২ প্রজাতির মাংসাশী স্তন্যপায়ীর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে সব থেকে বেশি ছিল মেছো বিড়াল। ঘটনাগুলো বেশি ঘটেছে গ্রামীণ এলাকায়। 

শহর অঞ্চলের আশপাশে সাধারণত রেসার্স বানর, যশোরের হনুমানের বসবাস। কিন্তু নগরায়ণের ফলে কমেছে তাদের আবাসস্থল, দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক খাদ্যের সংকট। তাই উপায় না পেয়ে প্রাণীগুলো ক্ষুধা মেটাতে হানা দিচ্ছে মানব বসতিতে। যদিও মানুষই প্রাণীগুলোর আবাসস্থানে গড়ে তুলছে নিজেদের বাড়ি-ঘর। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হলো কাঁকড়াভুক বানর। বাকিরাও রয়েছে নানা সমস্যায় জর্জরিত। 

বিগত সময়ে বনখেকোদের অত্যাচারে বাংলাদেশের সব বনের অবস্থা শোচনীয়। বন থেকে উজাড় হয়েছে অসংখ্য বৃক্ষ, যার ফলে অস্তিত্বের সংকটে দেশের বন্যপ্রাণী। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে আবাসস্থল। জলাভূমিগুলোয় জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা আজ হুমকির মুখে। 

বর্তমান সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা তারা জনগণের আশার আলোর প্রতিফলন ঘটাবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও। ঠিক তেমনি আমাদেরও দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। 

লেখক: বন্যপ্রাণী গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সারা দেশেই শীত বাড়ছে, ১৬ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সারা দেশেই শীত বাড়ছে, ১৬ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা

উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশেই শীত পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। রাজশাহীতে আজ সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন ঘণ্টা আগে ভোর ৬টায় যা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৯টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দিন ও রাতে তাপমাত্রা আর কমতে পারে। এর মধ্যে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমলেও রাতের বেলা কমতে পারে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ অবস্থায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশেই শীত বাড়বে। তবে আপাতত আরও দুই-তিন তাপমাত্রা কমবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে, দিল্লির অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ সোমবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।

রাজধানী শহর ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহরটির বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২৬২। যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৪৯০, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৯৪), ভারতের কলকাতা (১৯৯) ও বসনিয়া হার্জেগোভিনার সারাজেভো (১৭৭)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো— আইসিডিডিআরবি ৩০৬, দক্ষিণ পল্লবী ২৭৪, ইস্টার্ন হাউজিং ২৭১, বেচারাম দেউড়ি ২৬৩, বেজ এজওয়াটার আউটডোর ২৬২, কল্যাণপুর ২৫৫, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ২৩৫ ও গোড়ান ২৩২।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সারা দেশে বাড়ছে শীতের অনুভূতি, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহী ও তেঁতুলিয়ায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশের প্রায় সব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি বাড়ছে। আজ সোমবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সারা দেশে আজকের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে সোমবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ সকাল ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৯ শতাংশ। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১১ মিনিটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারা দেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশেই শীত বাড়বে। তবে আপাতত আরও দুই-তিন তাপমাত্রা কমবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস, মহানগরীর ৮ এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৬
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকা দীর্ঘস্থায়ী এবং বিপজ্জনক বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

অবশ্য শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ রোববার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২১৩। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ চতুর্থ স্থানে আছে ঢাকা।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৬৮৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৫৪), কুয়েতের কুয়েত সিটি (২৮৬), ভারতের কলকাতা (১৯৬), পাকিস্তানের করাচি (১৬১) এবং ইরাকের বাগদাদ (১৫৬)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং ২২৬, দক্ষিণ পল্লবী ২২৭, কল্যাণপুর ২১৩, বেজ এজওয়াটার ২২৭, আইসিডিডিআরবি ২৫০, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ১৯৬, গোরান ১৯৪ এবং বেচারাম দেউড়ি ২২৯।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত