Ajker Patrika

শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস, মহানগরীর ৮ এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৬
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকা দীর্ঘস্থায়ী এবং বিপজ্জনক বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

অবশ্য শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ রোববার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২১৩। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ চতুর্থ স্থানে আছে ঢাকা।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৬৮৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৫৪), কুয়েতের কুয়েত সিটি (২৮৬), ভারতের কলকাতা (১৯৬), পাকিস্তানের করাচি (১৬১) এবং ইরাকের বাগদাদ (১৫৬)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং ২২৬, দক্ষিণ পল্লবী ২২৭, কল্যাণপুর ২১৩, বেজ এজওয়াটার ২২৭, আইসিডিডিআরবি ২৫০, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ১৯৬, গোরান ১৯৪ এবং বেচারাম দেউড়ি ২২৯।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...