Ajker Patrika

যে কারণে হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ছেড়েছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

শহীদুজ্জামান সেলিম মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন হঠাৎ করেই। কোনো প্রস্তুতি ছাড়া। তবে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করেন বেশ প্রস্তুতি আর পরিকল্পনা নিয়ে। অনেকটা জেদ করেই টিভি নাটকে কাজ শুরু করেন সেলিম। কারণ, এর আগে দুটো সিনেমায় যুক্ত হওয়ার পরও বাদ পড়তে হয় শুধু অপরিচিত মুখ হওয়ার কারণে।

ফলে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করাটা তাঁর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৮৯ সালে ‘জোনাকি জ্বলে’ নাটক দিয়ে টিভিতে অভিষেক হয় সেলিমের। শুরু করেছিলেন দুটো দৃশ্য দিয়ে, আর যখন শেষ হয় ততদিনে সেলিম অভিনীত চরিত্রটি হয়ে উঠেছিল ধারাবাহিকটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।

অভিনেতা আবুল খায়ের খুবই পছন্দ করতেন তরুণ সেলিমকে। বিভিন্ন নির্মাতার কাছে তাঁর হয়ে সুপারিশ করতেন। ‘অয়োময়’ নাটকের জন্যও হুমায়ূন আহমেদের কাছে সেলিমের নাম প্রস্তাব করেছিলেন আবুল খায়ের। তবে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সেলিমের প্রথম আলাপ সুখকর হয়নি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ওই ঘটনা জানিয়ে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমাকে একটা ফোন নাম্বার দিয়ে খায়ের ভাই বলল যে, তুই কালকে ফোন করবি হুমায়ূন আহমেদকে। আমি বলে দিয়েছি। আমি উনাকে ফোন করলাম। উনি জানতে চাইলেন, আমি কী কী কাজ করেছি। আমি তখন টেলিভিশনে দুই একটা নাটক করেছি। কয়েকটি মঞ্চনাটকের নাম বললাম। উনি বললেন, আমি তো আপনার কোনো নাটক দেখিনি। আপনি কি আপনার অভিনয়ের কোনো ভিডিও ক্যাসেট আমাকে দেখাতে পারবেন?’

এ কথা শুনে খুব রাগ হয়েছিল শহীদুজ্জামান সেলিমের। মুখের ওপর হুমায়ূন আহমেদকে বলে দিয়েছিলেন, ‘আমি আমার অভিনয় দেখানোর জন্য ক্যাসেট করে পাঠাব, এটা আপনি ভাবলেন কী করে! আমার অভিনয় যদি আপনি দেখতে চান, তাহলে আপনাকে মহিলা সমিতিতে আসতে হবে। ঢাকা থিয়েটারের নাটক দেখতে হবে। দেখে আপনি আমাকে জাজ করবেন।’

এর পর স্বাভাবিকভাবেই অয়োময় ধারাবাহিকে আর কাজ করা হয়নি শহীদুজ্জামান সেলিমের। কয়েক বছর পর হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে যুক্ত হন তিনি। তবে অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। পর্যাপ্ত অভিনয়ের সুযোগ না পেয়ে মাঝপথে এই নাটক থেকে সরে আসেন। তাঁর এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছিলেন সবাই। হুমায়ূন আহমেদকেও বিস্মিত করেছিল তাঁর এমন সিদ্ধান্ত।

শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘এতে আমি অভিনয় করেছিলাম চিকিৎসক চরিত্রে। রিহার্সলে যাওয়ার পর দেখি, এক ঘন্টার পর্বে আমার মাত্র তিনটি দৃশ্য। প্রথমে ভেবেছিলাম— নতুন ঢুকেছি, এটা হতেই পারে। কিন্তু পরের পর্বগুলোতেও দেখি একই অবস্থা। এক মাস যায়, দুই মাস যায় আমার চরিত্র আর বাড়ে না। সে সময় নিয়ম ছিল, কেউ একটি নাটকে যুক্ত হলে বিটিভির অন্য নাটকে কাজ করতে পারত না। তাই এটা নিয়ে হতাশা কাজ করছিল। হুমায়ূন ভাইকে বলতে চাইছিলাম যে, আমি করব না। কিন্তু এই নাটকের অন্য শিল্পীরা আমাকে আটকে দিচ্ছিল।’

সহশিল্পীদের অনুরোধে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘পরে হুমায়ূন ভাইকে গিয়ে বললাম, আপনি আমাকে এই নাটক থেকে রিলিজ করে দেন। উনি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ইউনিটের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। হুমায়ূন আহমেদের নাটক রিফিউজ করছি! এটা তো বিগ ডিল। হুমায়ূন আহমেদ জিজ্ঞাসা করলেন, কেন? তাঁকে বললাম, আপনি তো আমাকে ব্যবহার করছেন না। প্রতি পর্বে আমার দুই থেকে তিনটি দৃশ্য থাকে। এভাবে তো আমি কাজ করব না। এরচেয়ে ভালো আপনি আমাকে ছেড়ে দেন। অন্য নাটকে আমার ভালো অফার আছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য তিনি স্তব্ধ হয়ে রইলেন। এরপর আমাকে বললেন, আর একটি পর্ব আমাকে সময় দেন। এরপর আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি।’

এরপর হুমায়ূন আহমেদের আর কোনো কাজে দেখা যায়নি শহীদুজ্জামান সেলিমকে। তিনি জানান, এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস তিনি পেয়েছেন হুমায়ূন ফরীদির কাছ থেকে। তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন নিজের অবস্থান কীভাবে সৃষ্টি করতে এবং ধরে রাখতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত