Ajker Patrika

যে নজির শুধু কনসার্ট ফর বাংলাদেশের

পরাগ মাঝি
যে নজির শুধু কনসার্ট ফর বাংলাদেশের

আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগে। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্ক নগরের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছিল, যার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কোনো দিন ছিল না। কারণ, পৃথিবীর ইতিহাসে সেদিনই প্রথম গান গেয়ে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত শিল্পীরা। আর সেই গানের অনুষ্ঠানটির নাম ছিল—‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।

বাংলাদেশে তখন চলছে মুক্তিযুদ্ধ। তার ওপর আঘাত হেনেছে সাইক্লোন আর বন্যা। সব দিক মিলিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত সময় পাড়ি দিচ্ছিল এ দেশের মানুষ। সেদিন মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনপিআরের একটি রেডিও অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বাংলাদেশ সম্পর্কে বলছিলেন—‘ঘর–বাড়ি হারিয়েছে ৬০ লাখ বাঙালি। তাদের বেশির ভাগই অপুষ্টি আর কলেরাসহ অন্যান্য রোগে ভুগছে। পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক সময় পাড়ি দিচ্ছে এখন এই মানুষগুলো।’ সত্যিকার অর্থেই তত দিনে এ দেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল কঙ্কালসার মানুষ। অপুষ্টি আর ক্ষুধা–তৃষ্ণায় শুধু মৃত্যুই বাকি ছিল তাদের। 

অসহায় বাংলাদেশিদের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারছিলেন না ভারতীয় সেতারবাদক ও বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু পণ্ডিত রবি শংকর। মানবিক কারণ তো বটেই, তা ছাড়া তাঁর আদিপুরুষদের বাড়ি ছিল বাংলাদেশেরই নড়াইল জেলায়। তাই তিনি বিটলস ব্যান্ডের সাবেক সদস্য জর্জ হ্যারিসনের কাছে গিয়ে হাজির হন। হ্যারিসন ছিলেন তাঁর কাছের বন্ধু। বাংলাদেশের জন্য কিছু একটা করার কথা বলেন। কিন্তু গায়কের গান গাওয়া ছাড়া আর কী–বা করার ছিল। 

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু পণ্ডিত রবি শংকরই নিয়েছিলেন বাংলাদেশের জন্য গান গেয়ে তহবিল সংগ্রহের এই উদ্যোগসংগীতবিষয়ক সাংবাদিক গ্রায়েম থমসন সেই মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, ‘এবং এ ব্যাপারে তিনি (হ্যারিসন) একটা কিছু করার মনস্থির করে ফেলেন...ব্যাস এটুকুই।’ 

হ্যারিসনের তৎপরতা সম্পর্কে থমসন আরও লিখেছেন, ‘একজন বিটলস হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর (বিভিন্ন মহলে) দারুণ যোগাযোগ ছিল। তিনি তাঁর বন্ধুদের ডাকলেন।’ 

মুহূর্তের মধ্যে বিটলসের আরেক সদস্য রিঙ্গো স্টার সাড়া দিলেন। পাওয়া গেল বব ডিলানকেও। ইংলিশ রক অ্যান্ড ব্লুজ গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপটনও ছিলেন সেই আয়োজনে। আর রবি শংকর তো সেতার নিয়েই দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন। আর কী লাগে? জমে গেল কনসার্ট! পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কনসার্ট—মানুষকে সহায়তা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করাই যার লক্ষ্য। ২ লাখ ৪০ হাজার ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল সেদিন। সে সময়ের হিসেবে এটা ছিল বিপুল অঙ্কের অর্থ। 

থমসনের কথা হলো—সেদিনের সেই কনসার্টই রক গায়কদের জগতে বিরাট এক পরিবর্তন নিয়ে এল। এই কনসার্ট ছিল তহবিল সংগ্রহ করার একটি অভিনব ধারণা মাত্র। এই ধারণা থেকেই পরে ১৯৮০–এর দশকে বিশ্বজুড়ে চ্যারিটি কনসার্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত