মীর রাকিব হাসান
ঢাকা: সুজান হক, অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার মা। বছর ৩০ আগের গল্প, প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন সুজান। কিন্তু ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারেননি স্বামী। স্পর্শিয়ার বয়স তখন এক বছর। সংসার-সন্তান-স্ত্রী ছেড়ে স্পর্শিয়ার বাবা পাড়ি জমালেন বিদেশে। সুজান হক যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন স্বামীর সঙ্গে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। একটা সময় জানা গেল, সেখানেই বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন সুজানের স্বামী ও স্পর্শিয়ার বাবা। তার পর থেকে শুরু মা–মেয়ের সংগ্রাম। এতটা বছর চলার পথে তেমন কাউকেই সঙ্গে পাননি। এমনকি সুজানের পরিবারের মানুষও থাকেন দেশের বাইরে। একা এক হাতে মেয়ের আজকের অবস্থান তৈরি করেছেন। নিজের সুনামও অক্ষুণ্ন রেখেছেন। কিছু আক্ষেপ তো রয়েই যায়। সেই থেকে শুরু করলেন সুজান, ‘সমাজ একজন স্বামী চায়, সেটা পরতে পরতে বুঝতে হয়েছে। স্বামী মন্দ হলেও অসুবিধা নেই। এই সমাজে স্বামী থাকতেই হবে। স্বামী না থাকা মানেই মহিলার হয়তো কোনো ত্রুটি আছে। সমাজ আমাকে এটা বুঝিয়েছে ভালো করে। অনেক কিছু ফেইস করেছি।’
উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন তিনি, ‘একক মহিলাদের জন্য যে কতটুকু নিরাপত্তার অভাব আমাদের দেশে, সেটা বুঝেছি, অনেক কিছু বুঝেছি। কত বাসা ভাড়া নিয়েছি। কোনো বাসায় বাড়িওয়ালা, কোনো বাসায় বাড়িওয়ালার ছেলে, কোনো বাসায় বাড়িওয়ালার ভাই প্রেম করতে চেয়েছে আমার সঙ্গে। যখনই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি, বাসা ছেড়ে দিয়েছি। এভাবে করে করে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। নিরাপত্তার অভাব কতটা যে বোধ হতো, সেটা শুধু আমি আর আমার মেয়েই জানে। ও যে স্কুলে পড়ত সেই স্কুলের অভিভাবক, টিচাররা মিলে এমন পরিবেশ তৈরি করেছিল– ওর বাবা নেই কেন? ওর বাবা নেই–ও ভালো নয়। ওর সঙ্গে বাকি ছেলেমেয়েদের মিশতে দেওয়া যাবে না। সেটাও ফেইস করেছি। তখন এর প্রতিবাদ জানাতে হয়েছে। বলেছি, এটা নিয়ে আমি নিউজ করব। তখন তো আমি পত্রিকায় কাজ করি। তখন ওরা ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।’
স্পর্শিয়াও মায়ের কথায় সায় দিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। খোলাখুলিভাবে বললে একটা সিঙ্গেল ওমেনকে খুব খারাপ চোখে দেখা হয়। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, নিশ্চয়ই বউয়ের দোষ। মেয়েটারই তো দোষ। সেই জায়গা থেকে শুধু যে অর্থনৈতিক তা নয়, মানসিক স্ট্রাগলও ছিল। নিজের খাওয়া–পরা–থাকার সঙ্গে আরও একটা মেয়েকে বড় করা এই শহরে। এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।’
মা–মেয়ের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। সুজান হকের মতে, ‘আমি মনে করি প্রত্যেক বাবা-মায়ের আগে বন্ধু হতে হবে। তাহলে সন্তানের কষ্ট বা দুঃখটা জানা যায়। সুখটা তো এমনিতেই চোখেই পড়ে। এতে সন্তান নিরাপদ বোধ করে। এ জন্য আমি মা না হয়ে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেছি।’
স্পর্শিয়া বলেন, ‘আমার মায়ের লাইফের পার্ট নিয়ে একটা মুভি হওয়া উচিত। কারণ, তাঁর স্ট্রাগলটা ছোট করে বলা সম্ভব নয়। বলা শুরু করলে রাত পার হয়ে যাবে। কোনো বাসায় থাকলে বাড়িওয়ালা বা পাড়া–প্রতিবেশী যেমন ডিস্টার্ব করত, তেমনি অনেক সময় চাকরি পরিবর্তন করতে হয়েছে। বসরা ডিস্টার্ব করত। আমাদের সমাজে একা একটা সিঙ্গেল মেয়েকে পাবলিক প্রপার্টি হিসেবে দেখা হয়। ওইটাও একধরনের স্ট্রাগল ছিল আমার ও আমার মায়ের।’
স্পর্শিয়া কথা বলছিলেন হেসে হেসে। কিন্তু তাঁর মনের কষ্টটা চোখেমুখে স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘সে চাইলে বিয়েও করতে পারতেন। সেটাও সে করেননি। আমাকে আঁকড়ে রেখেছেন। একটা মানুষ এত ডেডিকেটেড হতে পারে সন্তানের প্রতি! সেটা আমাকে অবাকই করে। কারণ, আমি আরও অনেক বাবা-মা দেখেছি। পুরো লাইফটাই লিখে দিল আমাকে! এমনকি তাঁর কাছের বন্ধুবান্ধবও তেমন নেই। আমিকেন্দ্রিকই তাঁর জীবন। এটা নিয়েই আমাদের ঝগড়া হয় প্রায়ই। আমি এখনো বলি, একটা প্রেম করো বিয়ে করো। করবে না সে। আমার সঙ্গে বয়সেরও কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই তাঁর।’
সুজান হকের সাংবাদিকতার পরিচয় অনেকেই জানেন। দেশের একটি প্রথম সারির পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন। শিক্ষকতাও করেছেন। তবে তিনি এখন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। লেখালেখির পাশে আছে বুটিকস হ্যান্ডি ক্রাফটসের হাউস। বাগান আছে, পোষা প্রাণী আছে, আর মেয়ের স্ক্রিপ্ট তো তাঁরই আগে পড়া হয়। এখন একটা ছোট গল্প অনুবাদ করেছেন। গত বছর বইমেলাতে ছোটদের বই ‘হেলেনের অহংকারী ফুল’ প্রকাশ করেছেন। এ জীবনে বেশ কিছু বই লিখেছেন, কবিতার বই ‘তুমি সেই ভ্যালেন্টাইন’, বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, ফিচার লিখেছেন, তার সংকলন নিয়েও বই প্রকাশ করেছেন। মাইকেল জ্যাকসন যখন প্রয়াত হন, তখন তাঁকে নিয়ে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি মাইকেল জ্যাকসন’ নামে একটা বই লিখেছেন। ‘অ্যা পোরট্রেট অব ফাদার রিগান’ বই তাঁর লেখা। ফটোগ্রাফি করেন। আছেন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত।
স্পর্শিয়া এখন কম কাজ করেন। আর এটাতে তৃপ্ত তাঁর মা। তিনি সাধুবাদ জানান মেয়ের এমন সিদ্ধান্তে। তাঁর মতে, এটা ভালো। যেটাতে ও স্বস্তিবোধ করবে, আমি স্বস্তিবোধ করব। সেই জায়গার কথা ভাবা লাগবে। ‘অনেকেই বলে মেয়েকে মিডিয়ায় কাজ করতে দিয়েছি। কেন! তারা তো কাছ থেকে দেখেন না মিডিয়াকে। ভালো–মন্দ তো সব সেক্টরেই আছে। একজন শিল্পীর যেভাবে স্ট্রাগল করতে হয়, সেটা তো মিডিয়ার বাইরের মানুষ বুঝবে না। মিডিয়া মানেই খারাপ নয়, আমি তো বলি তোমরা আসো, এসে দেখো ওরা কি ফেইস করে, এখানে কি ভালো–মন্দ আছে। তারপর বলো। মিডিয়ার মানুষও ভালো থাকতে পারে। খারাপ প্রস্তাব যে সব মিডিয়া থেকে আসে, তা তো নয়। তাহলে শোবিজের বাইরে এত ক্রাইম হচ্ছে কেন!’
অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার আজকের অবস্থানের পেছনে সবটাই মায়ের অবদান বলে মনে করেন স্পর্শিয়া। তিনি বলেন, ‘আম্মুর কখনো চাওয়া ছিল না যে আমার মেয়ের ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে। আমি ছবি আঁকতাম। সেটাতেও তাঁর সায় ছিল। উৎসাহিত করত আমি যেন ছবি আঁকায় মন দিই। লেখালেখি করতাম, সে উৎসাহ দিত যেন আমি লেখক হই। আমি যখনই যেটা করতে ভালোবেসেছি, সেটাই সে চেয়েছে যেন আমি মন দিয়ে করি। ছোটবেলা থেকেই তো শোবিজের মানুষজন দেখে বড় হয়েছি। মা যেহেতু বহু বছর সাংবাদিকতায় ছিলেন। কিন্তু মা চাপিয়ে দেননি– তোমার অভিনেত্রী হতে হবে। সে কখনো তাঁর পরিচিত কাউকে বলেওনি যে আমার মেয়েকে কাজ দেও। কিন্তু যখন আমি নিজে শুরু করেছি, তখন সে পাশে ছিল। আমার ভালো–মন্দের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ছিল। আমার স্ক্রিপ্ট পড়া থেকে বিদেশ ট্যুর– সবখানেই মা সঙ্গী হন। যেমনটা তাঁকে দেখেছি সেই শৈশব থেকে হাত ধরে চলা শেখাতে।’
খাবার খাওয়া নিয়ে দুজনার খুব ঝগড়া হয়। এক বেলার খাবার আরেক বেলা খায় স্পর্শিয়া। তখন এই নিয়ে মায়ের অনেক কথা শুনতে হয়। মেয়েকে নিয়মিত বকাঝকা করার আরও কারণ আছে,‘ও খুব সরল টাইপের। যে যা চায় সব বিলিয়ে দেয়। তখন রাগ হয়। আমারও কোনো একটা শখের জিনিস কেউ চাইল, অমনি সে দিয়ে দেয়। আমার লাইব্রেরি থেকে অর্ধেক বই দিয়ে দিয়েছে মানুষকে। আমি বাসায় না থাকলে দিয়ে দেয়। আমি এলে বলেও না। অনেকে পারিশ্রমিক ঠিকমতো দেয় না। চেনা মুখের আবদার রাখতে হয়। দেখা গেল সেই কাজটা করলে একটু মানহানি হয়। তখন রাগারাগি করি যে এটা কেন করেছ।’
স্পর্শিয়া মনে করেন, ‘তাঁর মা এই সময়ের প্রত্যেকটা নারীর জন্য উদাহরণ। প্রত্যেকটা নারীর আসলে তাঁর সঙ্গে কথা বলা উচিত, তাঁর সম্পর্কে জানা উচিত। আমি তাঁকে আইডল মানি। কারণ, সে যেভাবে কারও সাপোর্ট ছাড়া নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন, আমাকেও বড় করেছেন। আমি যে বদের হাড্ডি, আমাকেও সামলিয়েছেন। এটা আমি সব সময় সব জায়গাতেই বলি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক মেয়ের কথা শুনলে আমি বলি আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তাহলে কিছুটা হলেও উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে। আমি নিজে যখন অনেক আপসেট হয়ে যাই, অনেক কিছু নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি, তখন আমার চোখের সামনে তিনি চলে আসেন। তাঁর কথা চিন্তা করি। তখন ভাবি এই মহিলাটা কীভাবে আসলে এত স্ট্রাগল করেছে। এত বড় করেছে আমাকে। ওই জায়গায় তো আমি কিছুই না।’
স্পর্শিয়ার জীবনেও ঘটেছে বিয়ে এবং ডিভোর্সের মতো ঘটনা। বিয়ের সিদ্ধান্তটা স্পর্শিয়া নিজেই নিয়েছিলেন। স্পর্শিয়ার মায়ের কথা, ‘এত অল্প বয়সে তো আমি বিয়ের সিদ্ধান্ত দেব না। ও আবেগে পড়ে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এটা তোমার সঙ্গে যায় না। তোমার বয়স এখনো অনেক পড়ে আছে। আমি পাশে আছি। এখন আর আবেগকে প্রশ্রয় দেবে না হয়তো। শিক্ষা হয়েছে। আমি আছি, ওকে আর এমন সিদ্ধান্ত নিতেও দেব না। লম্বা জীবন আছে। সেখানে আমিই ওর সাথি খুঁজে দেব। আমার পছন্দের বাইরে গিয়ে তো একবার শিক্ষা হলো।’
স্পর্শিয়াও হাসিমুখে তাঁর মায়ের কথা মেনে নিলেন, ‘যখন ভুল করেছি, সে বলেছে এটা কোরো না, এটা ভুল। সে আমার চেয়ে অবশ্যই ম্যাচিউরড। সেই জায়গা থেকে আমি শুনিনি। তাঁর যেটা শুনেছি সেটা তো ভালো। যেটা শুনিনি বাঁশ খেয়েছি এই আর কি।’
ঢাকা: সুজান হক, অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার মা। বছর ৩০ আগের গল্প, প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন সুজান। কিন্তু ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারেননি স্বামী। স্পর্শিয়ার বয়স তখন এক বছর। সংসার-সন্তান-স্ত্রী ছেড়ে স্পর্শিয়ার বাবা পাড়ি জমালেন বিদেশে। সুজান হক যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন স্বামীর সঙ্গে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। একটা সময় জানা গেল, সেখানেই বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন সুজানের স্বামী ও স্পর্শিয়ার বাবা। তার পর থেকে শুরু মা–মেয়ের সংগ্রাম। এতটা বছর চলার পথে তেমন কাউকেই সঙ্গে পাননি। এমনকি সুজানের পরিবারের মানুষও থাকেন দেশের বাইরে। একা এক হাতে মেয়ের আজকের অবস্থান তৈরি করেছেন। নিজের সুনামও অক্ষুণ্ন রেখেছেন। কিছু আক্ষেপ তো রয়েই যায়। সেই থেকে শুরু করলেন সুজান, ‘সমাজ একজন স্বামী চায়, সেটা পরতে পরতে বুঝতে হয়েছে। স্বামী মন্দ হলেও অসুবিধা নেই। এই সমাজে স্বামী থাকতেই হবে। স্বামী না থাকা মানেই মহিলার হয়তো কোনো ত্রুটি আছে। সমাজ আমাকে এটা বুঝিয়েছে ভালো করে। অনেক কিছু ফেইস করেছি।’
উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন তিনি, ‘একক মহিলাদের জন্য যে কতটুকু নিরাপত্তার অভাব আমাদের দেশে, সেটা বুঝেছি, অনেক কিছু বুঝেছি। কত বাসা ভাড়া নিয়েছি। কোনো বাসায় বাড়িওয়ালা, কোনো বাসায় বাড়িওয়ালার ছেলে, কোনো বাসায় বাড়িওয়ালার ভাই প্রেম করতে চেয়েছে আমার সঙ্গে। যখনই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি, বাসা ছেড়ে দিয়েছি। এভাবে করে করে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। নিরাপত্তার অভাব কতটা যে বোধ হতো, সেটা শুধু আমি আর আমার মেয়েই জানে। ও যে স্কুলে পড়ত সেই স্কুলের অভিভাবক, টিচাররা মিলে এমন পরিবেশ তৈরি করেছিল– ওর বাবা নেই কেন? ওর বাবা নেই–ও ভালো নয়। ওর সঙ্গে বাকি ছেলেমেয়েদের মিশতে দেওয়া যাবে না। সেটাও ফেইস করেছি। তখন এর প্রতিবাদ জানাতে হয়েছে। বলেছি, এটা নিয়ে আমি নিউজ করব। তখন তো আমি পত্রিকায় কাজ করি। তখন ওরা ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।’
স্পর্শিয়াও মায়ের কথায় সায় দিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। খোলাখুলিভাবে বললে একটা সিঙ্গেল ওমেনকে খুব খারাপ চোখে দেখা হয়। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, নিশ্চয়ই বউয়ের দোষ। মেয়েটারই তো দোষ। সেই জায়গা থেকে শুধু যে অর্থনৈতিক তা নয়, মানসিক স্ট্রাগলও ছিল। নিজের খাওয়া–পরা–থাকার সঙ্গে আরও একটা মেয়েকে বড় করা এই শহরে। এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।’
মা–মেয়ের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। সুজান হকের মতে, ‘আমি মনে করি প্রত্যেক বাবা-মায়ের আগে বন্ধু হতে হবে। তাহলে সন্তানের কষ্ট বা দুঃখটা জানা যায়। সুখটা তো এমনিতেই চোখেই পড়ে। এতে সন্তান নিরাপদ বোধ করে। এ জন্য আমি মা না হয়ে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেছি।’
স্পর্শিয়া বলেন, ‘আমার মায়ের লাইফের পার্ট নিয়ে একটা মুভি হওয়া উচিত। কারণ, তাঁর স্ট্রাগলটা ছোট করে বলা সম্ভব নয়। বলা শুরু করলে রাত পার হয়ে যাবে। কোনো বাসায় থাকলে বাড়িওয়ালা বা পাড়া–প্রতিবেশী যেমন ডিস্টার্ব করত, তেমনি অনেক সময় চাকরি পরিবর্তন করতে হয়েছে। বসরা ডিস্টার্ব করত। আমাদের সমাজে একা একটা সিঙ্গেল মেয়েকে পাবলিক প্রপার্টি হিসেবে দেখা হয়। ওইটাও একধরনের স্ট্রাগল ছিল আমার ও আমার মায়ের।’
স্পর্শিয়া কথা বলছিলেন হেসে হেসে। কিন্তু তাঁর মনের কষ্টটা চোখেমুখে স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘সে চাইলে বিয়েও করতে পারতেন। সেটাও সে করেননি। আমাকে আঁকড়ে রেখেছেন। একটা মানুষ এত ডেডিকেটেড হতে পারে সন্তানের প্রতি! সেটা আমাকে অবাকই করে। কারণ, আমি আরও অনেক বাবা-মা দেখেছি। পুরো লাইফটাই লিখে দিল আমাকে! এমনকি তাঁর কাছের বন্ধুবান্ধবও তেমন নেই। আমিকেন্দ্রিকই তাঁর জীবন। এটা নিয়েই আমাদের ঝগড়া হয় প্রায়ই। আমি এখনো বলি, একটা প্রেম করো বিয়ে করো। করবে না সে। আমার সঙ্গে বয়সেরও কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই তাঁর।’
সুজান হকের সাংবাদিকতার পরিচয় অনেকেই জানেন। দেশের একটি প্রথম সারির পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন। শিক্ষকতাও করেছেন। তবে তিনি এখন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। লেখালেখির পাশে আছে বুটিকস হ্যান্ডি ক্রাফটসের হাউস। বাগান আছে, পোষা প্রাণী আছে, আর মেয়ের স্ক্রিপ্ট তো তাঁরই আগে পড়া হয়। এখন একটা ছোট গল্প অনুবাদ করেছেন। গত বছর বইমেলাতে ছোটদের বই ‘হেলেনের অহংকারী ফুল’ প্রকাশ করেছেন। এ জীবনে বেশ কিছু বই লিখেছেন, কবিতার বই ‘তুমি সেই ভ্যালেন্টাইন’, বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, ফিচার লিখেছেন, তার সংকলন নিয়েও বই প্রকাশ করেছেন। মাইকেল জ্যাকসন যখন প্রয়াত হন, তখন তাঁকে নিয়ে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি মাইকেল জ্যাকসন’ নামে একটা বই লিখেছেন। ‘অ্যা পোরট্রেট অব ফাদার রিগান’ বই তাঁর লেখা। ফটোগ্রাফি করেন। আছেন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত।
স্পর্শিয়া এখন কম কাজ করেন। আর এটাতে তৃপ্ত তাঁর মা। তিনি সাধুবাদ জানান মেয়ের এমন সিদ্ধান্তে। তাঁর মতে, এটা ভালো। যেটাতে ও স্বস্তিবোধ করবে, আমি স্বস্তিবোধ করব। সেই জায়গার কথা ভাবা লাগবে। ‘অনেকেই বলে মেয়েকে মিডিয়ায় কাজ করতে দিয়েছি। কেন! তারা তো কাছ থেকে দেখেন না মিডিয়াকে। ভালো–মন্দ তো সব সেক্টরেই আছে। একজন শিল্পীর যেভাবে স্ট্রাগল করতে হয়, সেটা তো মিডিয়ার বাইরের মানুষ বুঝবে না। মিডিয়া মানেই খারাপ নয়, আমি তো বলি তোমরা আসো, এসে দেখো ওরা কি ফেইস করে, এখানে কি ভালো–মন্দ আছে। তারপর বলো। মিডিয়ার মানুষও ভালো থাকতে পারে। খারাপ প্রস্তাব যে সব মিডিয়া থেকে আসে, তা তো নয়। তাহলে শোবিজের বাইরে এত ক্রাইম হচ্ছে কেন!’
অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার আজকের অবস্থানের পেছনে সবটাই মায়ের অবদান বলে মনে করেন স্পর্শিয়া। তিনি বলেন, ‘আম্মুর কখনো চাওয়া ছিল না যে আমার মেয়ের ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে। আমি ছবি আঁকতাম। সেটাতেও তাঁর সায় ছিল। উৎসাহিত করত আমি যেন ছবি আঁকায় মন দিই। লেখালেখি করতাম, সে উৎসাহ দিত যেন আমি লেখক হই। আমি যখনই যেটা করতে ভালোবেসেছি, সেটাই সে চেয়েছে যেন আমি মন দিয়ে করি। ছোটবেলা থেকেই তো শোবিজের মানুষজন দেখে বড় হয়েছি। মা যেহেতু বহু বছর সাংবাদিকতায় ছিলেন। কিন্তু মা চাপিয়ে দেননি– তোমার অভিনেত্রী হতে হবে। সে কখনো তাঁর পরিচিত কাউকে বলেওনি যে আমার মেয়েকে কাজ দেও। কিন্তু যখন আমি নিজে শুরু করেছি, তখন সে পাশে ছিল। আমার ভালো–মন্দের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ছিল। আমার স্ক্রিপ্ট পড়া থেকে বিদেশ ট্যুর– সবখানেই মা সঙ্গী হন। যেমনটা তাঁকে দেখেছি সেই শৈশব থেকে হাত ধরে চলা শেখাতে।’
খাবার খাওয়া নিয়ে দুজনার খুব ঝগড়া হয়। এক বেলার খাবার আরেক বেলা খায় স্পর্শিয়া। তখন এই নিয়ে মায়ের অনেক কথা শুনতে হয়। মেয়েকে নিয়মিত বকাঝকা করার আরও কারণ আছে,‘ও খুব সরল টাইপের। যে যা চায় সব বিলিয়ে দেয়। তখন রাগ হয়। আমারও কোনো একটা শখের জিনিস কেউ চাইল, অমনি সে দিয়ে দেয়। আমার লাইব্রেরি থেকে অর্ধেক বই দিয়ে দিয়েছে মানুষকে। আমি বাসায় না থাকলে দিয়ে দেয়। আমি এলে বলেও না। অনেকে পারিশ্রমিক ঠিকমতো দেয় না। চেনা মুখের আবদার রাখতে হয়। দেখা গেল সেই কাজটা করলে একটু মানহানি হয়। তখন রাগারাগি করি যে এটা কেন করেছ।’
স্পর্শিয়া মনে করেন, ‘তাঁর মা এই সময়ের প্রত্যেকটা নারীর জন্য উদাহরণ। প্রত্যেকটা নারীর আসলে তাঁর সঙ্গে কথা বলা উচিত, তাঁর সম্পর্কে জানা উচিত। আমি তাঁকে আইডল মানি। কারণ, সে যেভাবে কারও সাপোর্ট ছাড়া নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন, আমাকেও বড় করেছেন। আমি যে বদের হাড্ডি, আমাকেও সামলিয়েছেন। এটা আমি সব সময় সব জায়গাতেই বলি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক মেয়ের কথা শুনলে আমি বলি আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তাহলে কিছুটা হলেও উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে। আমি নিজে যখন অনেক আপসেট হয়ে যাই, অনেক কিছু নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি, তখন আমার চোখের সামনে তিনি চলে আসেন। তাঁর কথা চিন্তা করি। তখন ভাবি এই মহিলাটা কীভাবে আসলে এত স্ট্রাগল করেছে। এত বড় করেছে আমাকে। ওই জায়গায় তো আমি কিছুই না।’
স্পর্শিয়ার জীবনেও ঘটেছে বিয়ে এবং ডিভোর্সের মতো ঘটনা। বিয়ের সিদ্ধান্তটা স্পর্শিয়া নিজেই নিয়েছিলেন। স্পর্শিয়ার মায়ের কথা, ‘এত অল্প বয়সে তো আমি বিয়ের সিদ্ধান্ত দেব না। ও আবেগে পড়ে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এটা তোমার সঙ্গে যায় না। তোমার বয়স এখনো অনেক পড়ে আছে। আমি পাশে আছি। এখন আর আবেগকে প্রশ্রয় দেবে না হয়তো। শিক্ষা হয়েছে। আমি আছি, ওকে আর এমন সিদ্ধান্ত নিতেও দেব না। লম্বা জীবন আছে। সেখানে আমিই ওর সাথি খুঁজে দেব। আমার পছন্দের বাইরে গিয়ে তো একবার শিক্ষা হলো।’
স্পর্শিয়াও হাসিমুখে তাঁর মায়ের কথা মেনে নিলেন, ‘যখন ভুল করেছি, সে বলেছে এটা কোরো না, এটা ভুল। সে আমার চেয়ে অবশ্যই ম্যাচিউরড। সেই জায়গা থেকে আমি শুনিনি। তাঁর যেটা শুনেছি সেটা তো ভালো। যেটা শুনিনি বাঁশ খেয়েছি এই আর কি।’
চলে গেলেন লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন। আজ শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩। তিনি স্বামী ও চার সন্তান রেখে গেছেন।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলা গানের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে মারা যান প্লেব্যাক সম্রাটখ্যাত এই শিল্পী। মৃত্যুর পাঁচ বছর পর তাঁর নামে পাঠানো হয়েছে বকেয়া কর পরিশোধের নোটিশ।
৩ ঘণ্টা আগেএকসময়ের টিভি নাটকের নিয়মিত মুখ অভিনেতা ওমর আয়াজ অনি থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। পাঁচ বছর পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। আবার দেশের মিডিয়ায় নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন অনি। ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপন, ওটিটি ও সিনেমা নিয়ে নির্মাতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা।
১৭ ঘণ্টা আগেসোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করলেও চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীরের নামে রয়েছে বেশ কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট। আছে ফ্যান গ্রুপও। আলমগীরের ছবি ও নাম ব্যবহার করে তৈরি এসব আইডি ও গ্রুপ নিয়ে সতর্ক করলেন তাঁর মেয়ে সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর।
১৭ ঘণ্টা আগে