Ajker Patrika

বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল, সার্কভুক্ত দেশের সিনেমা আমদানির দাবি জানালেন প্রদর্শকেরা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ২৩
বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত

কমতে কমতে দেশের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। প্রতি ঈদে সব মিলিয়ে ১২০টির মতো হলে সিনেমা মুক্তি পেলেও সারা বছর চালু থাকা হলের সংখ্যা এখন ৫০টির কম। এমন অবস্থায় সিনেমা প্রদর্শনের জন্য সিনেপ্লেক্সগুলোই হয়ে উঠেছে নির্মাতা ও প্রযোজকদের ভরসা। এবার সিনেপ্লেক্সও নাম লেখাল বন্ধ হওয়া হলের তালিকায়। সম্প্রতি দর্শকখরা ও প্রদর্শনের জন্য উপযুক্ত সিনেমা না পাওয়ার অভিযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স।

গত শুক্রবার থেকে সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে গেছে মধুবন সিনেপ্লেক্সে। হল বন্ধের কারণ হিসেবে মধুবনের মালিক রোকনুজ্জামান ইউনুস জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত দর্শক, প্রদর্শনের জন্য সিনেমা না পাওয়াসহ নানা কারণে হলটির কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। হল থেকে প্রত্যাশিত আয় না আসায় বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন দীর্ঘদিন ধরে টানা সম্ভব হচ্ছে না। সিনেমা চালালে যে খরচ হয়, ইদানীং সেটাও আসছে না। একই কারণে কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাস বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন সিনেপ্লেক্সটির কর্ণধার মির্জা আবদুল খালেক। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সিনেমা হল মণিহার ভেঙে সেখানে শপিং কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা করছে মালিকপক্ষ। সামনে আসতে পারে আরও কয়েকটি হল বন্ধের ঘোষণা।

হল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয় বলে জানালেন প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল। তাঁর মতে, মানসম্মত সিনেমার অভাবেই দর্শকশূন্য হয়ে পড়েছে হলগুলো। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিদেশি সিনেমা আমদানির দাবি জানান এই প্রদর্শক নেতা।

আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘সিনেমা হলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটাই কারণ, প্রদর্শনের জন্য এবং দর্শক ধরে রাখার মতো মানসম্মত সিনেমা আমাদের নেই। ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। সারা বছর হলগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আমাদের হলগুলো সচল রাখতে সার্কভুক্ত দেশের সিনেমা উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।’

আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল। ছবি: সংগৃহীত
আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল। ছবি: সংগৃহীত

আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ঈদ ছাড়া দর্শকদের ভালো সিনেমা উপহার দিতে পারছি না। ঈদের পরে সারা বছরে আমরা কোনো ভালো সিনেমা পাচ্ছি না। উপায় না পেয়েই হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মালিকেরা। বড় বড় সিনেপ্লেক্সগুলো খালি পড়ে থাকছে। প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, সিনেমার অভাবে আমাদের প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে হলে এখন সার্কভুক্ত দেশের সিনেমা উন্মুক্ত করে দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে হয়তো হল বন্ধের এই ফ্লো থামতে পারে। তথ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, আপনারা আমাদের দিকে একটু নজর দিন। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখানে অনেক মানুষ কাজ করে। সবাইকে বাঁচাতে হলে হলগুলো চালু রাখতে হবে। হল চালু রাখতে হলে নিয়মিত ভালো সিনেমা থাকতে হবে, যা এখন আমাদের নেই। তাই বিদেশি সিনেমা, বিশেষ করে সার্কভুক্ত দেশের সিনেমা উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত।’

বিদেশি সিনেমা চললে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হবে না বলেও মনে করেন উজ্জ্বল। তাঁর ভাষ্য, ‘আমাদের দেশে যখন ভালো গল্পের ভালো সিনেমা তৈরি হবে, তখন হলমালিকেরা বিদেশি সিনেমা চালাবেন না। দর্শকও দেশের ভালো সিনেমা রেখে বিদেশি সিনেমা দেখবে না। আমাদের দাবি, যখন দেশের সিনেমা থাকবে না, তখন যেন আমরা হল চালু রাখতে, দর্শক ধরে রাখতে বিদেশি সিনেমা পাই।’

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে পাঁচ শর্তে দেশের হলে উপমহাদেশীয় ভাষার সিনেমা মুক্তির অনুমতি দিয়েছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ওই বছরের মে মাসে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ দিয়ে শুরু হয় সেই যাত্রা। এরপর মুক্তি পেয়েছে ১০টি সিনেমা; যার মধ্যে একটি নেপালি সিনেমা ছাড়া সব কটি ছিল ভারতীয় সিনেমা। তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির প্রভাব পড়ে সিনেমা আদান-প্রদানেও। গত এক বছরে মাত্র একটি ভারতীয় সিনেমা দেখা গেছে বাংলাদেশের হলে। সর্বশেষ গত বছর ১ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল ‘স্ত্রী ২’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত