Ajker Patrika

ফিরে দেখা ২০২৪ /ঘটনা দুর্ঘটনায় সরগরম ছিল মঞ্চাঙ্গন

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ০৯
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

নানা উত্থান-পতন আর ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সাল পার করল দেশের মঞ্চাঙ্গন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পদত্যাগ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন দলের নাটকের প্রদর্শনী হলেও, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ধীরে ধীরে কমতে থাকে প্রদর্শনী। গত ১৯ জুলাই শিল্পকলার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ম্যাড থেটারের ‘আনা ফ্রাঙ্ক’-এর প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর মঞ্চস্থ হয়নি। এরপর রাজনৈতিক কারণে বন্ধ হয়ে যায় একাডেমির মিলনায়তন ও মহড়াকক্ষ। প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১১ অক্টোবর জাতীয় নাট্যশালার মঞ্চে আবার প্রদর্শনী শুরু হয় নাটকের।

নতুন নাটক

বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভসের সূত্র অনুযায়ী গত বছর ৭৩টি নতুন নাটকের মঞ্চায়ন হলেও এ বছর মঞ্চে এসেছে ২৪টি নতুন নাটক। এসব নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘প্যারাবোলা (বাতিঘর), ‘পারো’ (দেশ নাটক), ‘কম্পানি’ (আরণ্যক), ‘মহাশূন্যে সাইকেল’ (অনুস্বর), ‘বিবিধ শোক অথবা সুখ’ (অনুস্বর), ‘টিনের তলোয়ার’ (প্রাঙ্গণেমোর), ‘উনপুরুষ’ (নবরস নৃত্য ও নাট্যদল), ‘দ্য ম্যান আউটসাইড’ (এক্টোমেনিয়া), ‘প্রায় তিন/চারজন’ (প্রচণ্ড কালেকটিভ), ‘মেয়েটি’ (নাট্যহীত, চট্টগ্রাম), ‘খোঁজ’ (ফেইম), ‘বোধ’ (স্বপ্নঘুড়ি রেপার্টরি) ইত্যাদি।

নতুন মহাপরিচালক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ১২ আগস্ট লিয়াকত আলী লাকী পদত্যাগ করলে ১০ সেপ্টেম্বর একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।

মাঝপথে বন্ধ ‘নিত্যপুরাণ’

নাট্যদল দেশ নাটকের এহসানুল এজাজ বাবুর একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২ নভেম্বর ‘নিত্যপুরাণ’ প্রদর্শনীর সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে একদল লোক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিল্পকলার মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধের সিদ্ধান্ত দেন। পরে মহাপরিচালক জানান, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মহাপরিচালকের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান অনেক নাট্যকর্মী। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশদ্বারের মুখে সমাবেশ করেন শতাধিক নাট্যকর্মী। সমাবেশে নাট্যজন মামুনুর রশীদের বক্তব্য চলাকালে কয়েকজন ডিম ছুড়ে মারেন। এমন ঘটনায় নাট্যকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নাট্যকর্মীরা জানান, শিল্পকলায় নাটক হবে, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে সবাই মিলে পাহারা দেবেন। এমন পরিস্থিতির মাঝে ২৭ নভেম্বর আবারও ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকটি একই মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়।

ফেডারেশনে ভাঙন

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সর্বশেষ সভা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এরপর ছয় বছর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী। ২৫ অক্টোবর ফেডারেশনের নির্বাহী পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সভায় অভিনেতা-নির্দেশক মামুনুর রশীদকে প্রধান করে ফেডারেশন পুনর্গঠন ও সংস্কারের জন্য পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীকে বহিষ্কার করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য লাকী ইনামকে। দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে ‘কাজের পদ্ধতিগত সংঘাতের’ কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন আহ্বায়ক কমিটির প্রধান মামুনুর রশীদ।

নতুন সংগঠন

আজাদ আবুল কালামকে সভাপতি এবং সাইফ সুমনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে ঢাকার নাট্যকর্মীদের নতুন সংগঠন থিয়েটার আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকা। ঢাকার মঞ্চনাটকের শিল্পীদের অধিকার রক্ষা ও সামগ্রিক কল্যাণে কাজ করতে চায় সংগঠনটি।

অভিনয় না করার অনুরোধ

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় ২৯ নভেম্বর শিল্পকলার মঞ্চে মামুনুর রশীদকে ‘কিছুদিন অভিনয় না করার’ পরামর্শ দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে নাট্যকর্মীরা এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।

মিলনায়তনের নাম পরিবর্তন

২০ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, একাডেমির ৭টি মিলনায়তনের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনের নামকরণ হয়েছে আলাওল নাট্যালয়, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের নাম সেলিম আল দীন নাট্যালয় এবং স্টুডিও থিয়েটার হলের নাম দেওয়া হয়েছে চন্দ্রাবতী নাট্যালয়। এ ছাড়া সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা ভবনের একটি মিলনায়তন ও নির্মাণাধীন আরেকটি মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও মরমি সাধক শাহ আবদুল করিমের নামে। চারুকলা ভবনের মিলনায়তন ও নির্মাণাধীন আরেকটি মিলনায়তনের নামকরণ হয়েছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ও ভাস্কর নভেরা আহমেদের নামে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ টিএসসিতে চতুর্দশ সঞ্জীব উৎসব

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সঞ্জীব চৌধুরী । ছবি : সংগৃহীত
সঞ্জীব চৌধুরী । ছবি : সংগৃহীত

প্রয়াত সংগীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর। প্রতিবছরের এই দিনে তাঁর স্মরণে সঞ্জীব উৎসবের আয়োজন করেন তরুণ সংগীতপ্রেমীরা। সে ধারাবাহিকতায় আজ বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে অবস্থিত সঞ্জীব চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে চতুর্দশ সঞ্জীব উৎসব

উৎসবটি আয়োজন করেছে আজব কারখানা। সঞ্জীব চৌধুরীর অমর সৃষ্টিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে উৎসবটি প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে। দীর্ঘ পরিক্রমায় এটি দেশের সংগীতপ্রেমীদের জন্য একটি অনন্য মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এবারের আয়োজনে গাইবেন জয় শাহরিয়ার, সন্ধি, সভ্যতা, সাহস মোস্তাফিজ, সুহৃদ স্বাগত, ফারাহ্‌দীবা তাসনীম, রাজেশ মজুমদার, রিহান রিজুয়ান প্রমুখ। আয়োজন তত্ত্বাবধানে রয়েছে সঞ্জীব উৎসব উদ্‌যাপন পর্ষদ। সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি।

আয়োজক ও সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা সঞ্জীবদার গান শুনে বড় হয়েছি। তাঁর গান শুধু বিনোদন নয়, সঞ্জীবদার একটা দর্শন ছিল। আমরা যারা সিংগার-সংরাইটার হিসেবে সেই দর্শনকে ধারণ করি, এটা তাদেরই সম্মিলিত আয়োজন। যাতে সঞ্জীবদার গান-দর্শন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে যায়।’

সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন একাধারে শিল্পী, লেখক ও সাংবাদিক। সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পা মজুমদার মিলে গড়ে তুলেছিলেন দলছুট ব্যান্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে কাজের পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন সংগীত ও সাহিত্যের চর্চা। ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’, ‘রঙ্গিলা’, ‘সমুদ্রসন্তান’, ‘জোছনাবিহার’, ‘তোমার ভাঁজ খোল’, ‘চাঁদের জন্য গান’, ‘স্বপ্নবাজি’, ‘বায়োস্কোপ’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সঞ্জীব চৌধুরীর নাম। ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সঞ্জীব চৌধুরী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনের টিভি আয়োজন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
দুরন্ত টিভির ‘হৈ হৈ হল্লা সিজন ৩’ নাটকের দৃশ্য	ছবি: সংগৃহীত
দুরন্ত টিভির ‘হৈ হৈ হল্লা সিজন ৩’ নাটকের দৃশ্য ছবি: সংগৃহীত

আজ বড়দিন। খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

রাত সাড়ে ১০টায় মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত হবে নাটক ‘দ্বিপ্রহর’। পিকাসো খুদার রচনায় এটি পরিচালনা করেছেন মারুফের রহমান। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্থ শেখ ও আইশা খান। গল্পে দেখা যাবে, অনেক চেষ্টার পর চাকরি পেয়ে রাহাত গ্রামে যায় মাকে সারপ্রাইজ দিতে। মাকে তার প্রেমিকা মিতুর কথা জানায়। মিতু একই গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। মিতুর বাবা বিয়েতে আপত্তি করে না। তবে কঠিন এক শর্ত দেয়।

এনটিভিতে রাত সাড়ে ৯টায় দেখা যাবে নাটক ‘ফেরা’। রচনা ও পরিচালনায় পাভেল ইসলাম। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রান্তর দস্তিদার, অনিন্দিতা মিমি, সুষমা সরকার, পাভেল ইসলাম, ফাহমিদা শারমিন ফাহমি প্রমুখ।

আরটিভিতে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘এই রাত তোমার আমার’-এর বিশেষ পর্ব। গান শোনাবেন সাব্বির জামান ও রাকিবা ঐশী। রাত ৮টায় দেখা যাবে নাটক ‘চলো বদলে যাই’। রচনা ও পরিচালনা ইসতিয়াক আহমেদ রুমেল। অভিনয়ে ফারহান আহমেদ জোভান, কেয়া পায়েল প্রমুখ।

বড়দিন উপলক্ষে শিশুতোষ টিভি চ্যানেল দুরন্ত টিভি প্রচার করবে একাধিক অনুষ্ঠান। দুপুর ১২টায় থাকছে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘আজি শুভদিনে’। বেলা ১টা ও রাত ৯টায় দেখা যাবে নাটক ‘হৈ হৈ হল্লা সিজন ৩’-এর বিশেষ পর্ব। গল্পে দেখা যাবে, ডাক্তার সফদার চৌধুরী এবং তাঁর বাড়ির বিভিন্ন ফ্ল্যাটের শিশুদের মধ্যে চলে বড়দিন উদ্‌যাপনের বিশেষ আয়োজন। ঘটনাক্রমে সান্তা ক্লজের পোশাকসহ বড়দিনের কেনা সব গিফট ছিনতাই হয়ে যায়। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, শাহনাজ খুশী, শিশুশিল্পী কাজী আফরা ইভিলিনা, ইশরাক, সমাদৃতা প্রহর, আয়াজ মাহমুদ প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন পার্থ প্রতিম হালদার।

বেলা ২টায় প্রচারিত হবে রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বানাই মজার খাবার মা-বাবা আর আমি’। এ পর্বের অতিথি হ্যানশেন লুকাস অধিকারী তমন ও তার মা। তারা আনন্দ করে, গল্প-আড্ডায় মেতে বড়দিনের স্পেশাল খাবার রান্না করে। পরিচালনা করেছেন আমিনা নওশিন রাইসা, সঞ্চালনায় রন্ধনশিল্পী আফিফা আখতার লিটা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সম্মানী না পাওয়ার অভিযোগ মতিন চৌধুরীর, অস্বীকার করলেন দীপন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সংগীতশিল্পী মতিন চৌধুরী	ছবি: সংগৃহীত
সংগীতশিল্পী মতিন চৌধুরী ছবি: সংগৃহীত

প্রায় তিন দশক আগে যখন বগুড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন, তখন ‘টিকাটুলীর মোড়ে একটা হল রয়েছে’ গানটি লিখেছিলেন সংগীতশিল্পী মতিন চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় এসে মামুন আকন্দের সংগীত পরিচালনায় গানটি রেকর্ড করেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত মতিন চৌধুরীর প্রথম অ্যালবাম ‘জীবন হলো সিগারেটের ছাই’-এ ছিল এই গান। গানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়। সিনেমা মুক্তির আট বছর পর সম্প্রতি মতিন চৌধুরী জানালেন, ঢাকা অ্যাটাক-এ টিকাটুলীর মোড়ে গানটি করার জন্য তিনি কোনো অর্থ পাননি। পরিচালক দীপংকর দীপন তাঁকে বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ মতিন চৌধুরীর।

মতিন চৌধুরী জানান, টিকাটুলীর মোড়ে গানটি ঢাকা অ্যাটাক সিনেমায় ব্যবহারের শর্ত হিসেবে ইউটিউব থেকে আয়ের অর্ধেক দাবি করেছিলেন তিনি। নির্মাতা তখন রাজি হলেও সে অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়নি তাঁকে। মতিন চৌধুরী বলেন, ‘দীপংকর দীপন সাহেব সিনেমায় গানটি ব্যবহারের জন্য তিন মাস আমাকে খুঁজেছেন। একসময় টঙ্গীতে আমার এক বন্ধুর স্টুডিওতে গিয়ে আমার নম্বর পান। এরপর সংগীত পরিচালক শাহীন কামাল ও মামুন আকন্দকে নিয়ে দীপংকর দীপনের অফিসে যাই। তিনি বলেন, গানটি ঢাকা অ্যাটাক সিনেমায় ব্যবহার করবেন। ভিডিওতে আমি থাকব। বিনিময়ে আমার কী চাহিদা জানতে চাইলে বলেছিলাম, আমার বেশি চাহিদা নেই। ইউটিউবে এই গানের ব্যবসা থেকে আমাকে অর্ধেকটা দিতে হবে। এটা স্ট্যাম্পে ডিড করতে হবে বলে জানাই। তিনিও রাজি হন।’

মতিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘এক মাস পর উনি ফোন করে বলেন, গানের শুটিং আছে, আমি যেন গ্রুপ নিয়ে এফডিসিতে যাই। সে সময়ও তাঁকে ডিডের কথা মনে করিয়ে দিই। উনি জবাব দেন, অবশ্যই ডিড করব, আপনি চলে আসেন। কথা অনুযায়ী এফডিসিতে দুই রাত শুটিং করলাম। কিন্তু ডিড আর করা হলো না। আমার সঙ্গে তাঁরা বেইমানি করেছেন। এই গান থেকে আমি কিছু পাইনি। অথচ, তাঁরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। শুধু তা-ই নয়, দীপংকর সাহেব বলেছিলেন, আমাকে বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভ গান করার সুযোগ করে দেবেন। সেটাও করেননি। আজ আমি লাখ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন দীপংকর সাহেব।’

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেন সানী সানোয়ার। ২০২১ সালে সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমায় মতিন চৌধুরী গেয়েছিলেন টিকাটুলীর মোড়ে গানের নতুন ভার্সন ‘পান্থপথের মোড়ে’। সে সময় ঢাকা অ্যাটাকের চুক্তির বিষয়টি প্রযোজককে জানিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে মতিন চৌধুরী বলেন, ‘তখন আমাকে বলেছিল দীপংকর দীপনের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করবেন। নতুন গানের জন্য আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর কোনো সমাধান হয়নি।’

মতিন চৌধুরীর অভিযোগের বিষয়ে পরিচালক দীপংকর দীপনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই নির্মাতা। দীপংকর দীপন বলেন, ‘বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। গানের জন্য সে সময় তাঁর পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। আর ইউটিউবের বিষয়টি তিনি এখন কেন বলছেন, তা আমার জানা নেই। যখন ঢাকা অ্যাটাক তৈরি হয় তখন আমাদের দেশে ইউটিউবের এত প্রচলন ছিল না। এ নিয়ে আলোচনা হবে কীভাবে? আমি যখন তাঁকে টিকাটুলীর মোড়ে গানটি সিনেমায় ব্যবহারের প্রস্তাব দিই, তখন তিনি খুশি ছিলেন। তাঁর শুধু চাহিদা ছিল পর্দায় যেন তাঁকে দেখা যায়।’

দীপন আরও বলেন, ‘পারিশ্রমিকের বিষয়টি দেখভাল করেন প্রযোজক। ঢাকা অ্যাটাকের অন্য কুশলীদের মতো আমিও পারিশ্রমিক নিয়েছি। পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো ঝামেলা হলে তিনি প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলবেন। আর যদি কোনো ঝামেলা থাকত তাহলে তো ঢাকা অ্যাটাকের পর মিশন এক্সট্রিম সিনেমায় মতিন চৌধুরী গাইতেন না। ওটা তো একই প্রযোজক নির্মাণ করেছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মঞ্চে আসছে শিশুতোষ নাটক ‘আনারসের ঢাকা সফর’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শিশুতোষ নাটক ‘আনারসের  ঢাকা সফর’ । ছবি: সংগৃহীত
শিশুতোষ নাটক ‘আনারসের ঢাকা সফর’ । ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও নান্দনিক চর্চার প্ল্যাটফর্ম ঢাকা লিটল অপেরা। গত অক্টোবরে যাত্রা শুরু করা প্ল্যাটফর্মটি এবার মঞ্চে নিয়ে আসছে তাদের প্রথম নাটক। নাম ‘আনারসের ঢাকা সফর’। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর মহিলা সমিতিতে বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত হবে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। সন্ধ্যা ৭টায় হবে দ্বিতীয় প্রদর্শনী। নাটকটি লিখেছেন আনজীর লিটন, নির্দেশনায় মনামী ইসলাম কনক, সহযোগী নির্দেশনায় আছেন মনিরুজ্জামান রিপন।

টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের একটি বাগানের আনারসের ঢাকায় আসার গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে নাটকটি। মধুপুরের বাগানে শিয়াল, কোকিল, কাক, ইঁদুর আর বিড়ালের খুনসুটি, দুষ্টুমির সঙ্গে এই বাগান ছেড়ে মানুষের কল্যাণে আনারসের বৃহত্তর আত্মত্যাগের গল্প নিয়েই এগিয়ে চলে আনারসের ঢাকা সফর।

কাওরানবাজারে বিক্রির পরে মানুষের পুষ্টি জোগাতে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায় আনারসগুলো। মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাওয়াই আনারসের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আনারসগুলো বিক্রির মাধ্যমে একজন সাধারণ কৃষকের শ্রম, সংগ্রাম ও আশা-ভরসার গল্পকে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সব আনারস বিক্রি হয়ে গেলেও দুটি আনারস আবার ফিরে আসে মধুপুরে। আনারস দুটির এই ফিরে আসা যেন শিকড়ের কাছেই ফিরে আসা। ওই আনারসের মাথার মুকুট থেকে আবারও নতুন বাগান গড়ে তোলে কৃষক ফুলগাজি।

ঢাকা লিটল অপেরার ডিরেক্টর মনিরুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আনারসের ঢাকা সফর একটি বর্ণিল ও কল্পনাপ্রবণ নাট্য প্রযোজনা, যা গ্রামের জীবন ও শহরের সঙ্গে তার সংযোগকে তুলে ধরেছে। এই প্রযোজনার মধ্য দিয়ে শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে গল্প বলার একটি নতুন যাত্রা শুরু করল ঢাকা লিটল অপেরা।’

মনিরুজ্জামান রিপন আরও বলেন, ‘ঢাকা লিটল অপেরা শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও নান্দনিক চর্চার আদর্শ একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। শিশুদের প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত আয়োজন করবে নাটক, কবিতা আবৃত্তি, পাঠাভিনয়, নৃত্য ও বাচিকসহ নানা সৃজনশীল কার্যক্রম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত