Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুই শিক্ষার্থীর সাফল্য

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
প্রথম স্থান অধিকারী দলের সদস্য আওসাফ জামান অনম ও রায়ীন আর রাদ
প্রথম স্থান অধিকারী দলের সদস্য আওসাফ জামান অনম ও রায়ীন আর রাদ

এই দেশের তরুণেরাও যে সুযোগ পেলে বিশ্বকে চমকে দিতে পারে, সেটিই প্রমাণ করে দেখাল দুই শিক্ষার্থী। দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কোরিয়া ডিজিটাল এডুকেশন ফ্রন্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (কেইএফএ) আয়োজিত বিশ্বখ্যাত ‘১৫তম ই-আইকন ওয়ার্ল্ড কনটেস্ট’-এ ৩৭টি দেশের ১৬১টি প্রকল্পকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের দল।

এই অসাধারণ সাফল্য বয়ে এনেছে সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়ীন আর রাদ ও বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আওসাফ জামান অনম। সম্প্রতি তারা দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার নেয়।

বাংলাদেশ দলকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. নাহিয়ান হোসেন। গ্লোবাল টিমের নেতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে ছিল আওসাফ জামান অনম, আর প্রধান ডেভেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল রায়ীন আর রাদ। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, দৃঢ় নেতৃত্ব এবং নিষ্ঠাবান পরিশ্রমের ফলে প্রতিযোগিতায় সাফল্যের শিরোপা অর্জনে সক্ষম হয়।

উদ্ভাবনের গল্প

এবারের প্রতিযোগিতার থিম ছিল ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ১৩’। এটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টির ভিত্তি গড়েছে। বাংলাদেশ এই থিম সামনে রেখে তৈরি করে ‘ক্লাইমাকোর’ নামের একটি স্মার্ট অ্যাপ। অ্যাপটি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে মানুষকে যুক্ত করতে সহায়তা করে।

প্রথম ধাপে তারা ৩০ মে প্রকল্পের প্রস্তাবনা জমা দেয়। সেখান থেকে বিশ্বের ৩৭টি দেশের ১৬১টি প্রস্তাবনার মধ্যে সেরা ১৫টি নির্বাচিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে, বাংলাদেশ দল কোরিয়ার দুই শিক্ষার্থী এবং এক শিক্ষকের সঙ্গে মিলে একটি গ্লোবাল টিম গঠন করে। অনলাইনে টানা তিন সপ্তাহ প্রকল্পের উন্নয়ন এবং পরিমার্জন কাজ চলে। চূড়ান্ত ধাপে বাংলাদেশ দলকে কোরিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে তারা পোস্টার প্রদর্শনী ও সরাসরি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাদের উদ্ভাবন তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক বিচারকেরা তাদের প্রেজেন্টেশন দারুণভাবে প্রশংসা করে।

প্রশংসায় ভাসল তরুণেরা

প্রেজেন্টেশনের সময় কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (কেএআইএসটি) অধ্যাপক ড. সাঙাই লি বলেন, এই প্রকল্প তরুণদের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন দিশা দেখায় এবং বাংলাদেশের এই সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়।

কেইএফএর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সো-হি লি মন্তব্য করেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ ই-আইকন প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করে আসছে। এ বছর তোমাদের দল তা আরও দৃঢ় করেছে। তোমাদের প্রেজেন্টেশন ছিল অন্য সবার থেকে আলাদা—সুন্দর, স্পষ্ট এবং দারুণভাবে সাজানো।

তরুণদের অনুভূতি

প্রথম স্থান অধিকারী দলের সদস্য আওসাফ জামান অনম বলে, ‘প্রতিযোগিতার প্রতিটি ধাপই ছিল চ্যালেঞ্জিং। জানতাম, আমাদের কাজ শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, মানুষের জীবনেও এর প্রভাব পড়বে। তাই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছি।’

আরেক সদস্য রায়ীন আর রাদ বলে, ‘অনলাইনে কাজের সময় নানা সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু দলের একতা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত।’

বাংলাদেশ দল শুধু প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়নি, তারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনা। দেশের পতাকা হাতে গ্লোবাল স্টেজে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, নেতৃত্ব আর নিষ্ঠা প্রমাণ করে দিয়েছে—বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত