Ajker Patrika

রাবি উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়েছেন এডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা

প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ২২: ০২
রাবি উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়েছেন এডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা

রাবি: কর্মস্থলে পদায়নের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রশাসন ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়েছে সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের মাধ্যমে এডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। তাঁদের বাধার মুখে আজ শনিবার অনুষ্ঠেয় ফাইন্যান্স কমিটির সভা ও আগামী মঙ্গলবারের সিন্ডিকেট সভা স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তবে দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলছিল।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টার উপাচার্যের বাসভবনে ফাইন্যান্স কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল। এদিন সকাল ৮টা থেকে প্রশাসন ভবনের পেছনে পরিবহন মার্কেটে অবস্থান নিতে থাকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরবর্তীতে রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা।

নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের ভাষ্য, রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো করবেন না। তাই তাঁদের যোগদান করানোর আগেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সভা হতে দেবে না।

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত ফারদিন ইসলাম বলেন, ‘আমরা যোগদান করতে গেলে রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য বলেছিলেন, এটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে তাঁর যোগদান করাতে কোনো আপত্তি নেই।’

সাবেক ছাত্রলীগের এ নেতা আরও বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, এডহকে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ সভা করবেন না। কিন্তু আমাদের যোগদানের আগেই তিনি ফাইন্যান্স কমিটি ও সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। তাই আমরা প্রশাসন ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়েছি। পরবর্তীতে তাঁর বাসভবনে গেলে উপাচার্য সভা স্থগিত করেন।’

তালা কবে খুলবেন এমন প্রশ্নে ফারদিন ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। তালা খোলা বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

উপাচর্যের বাসভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন এডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরাসকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনে গেটে তালা ঝুলছে। পাশে বসে থাকা নিরাপত্তাকর্মী সোহেল জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছাত্রলীগের ৩৫-৪০ নেতা কর্মী আসেন। ভবনের ভেতরে কেউ আছে কি–না জানতে চান। একপর্যায়ে তাঁরা তালা লাগিয়ে চলে যান। একই দৃশ্য উপাচার্যের বাসভবনের গেটেও।

এদিকে সোয়া ১০টায় অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার বাসভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক এডহক নিয়োগপ্রাপ্ত তাঁর বাড়ির প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন। এ সময় উপাচার্য ঘর থেকে বের হলে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাঁদের যোগদানের দাবি জানান। অন্যথায় সভা বন্ধের দাবি করেন। এ নিয়ে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশ কিছুক্ষণ তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে রুটিন উপাচার্য ফাইন্যান্স কমিটির সভা ও সিন্ডিকেট মিটিং স্থগিত ঘোষণা করেন।

এদিকে শনিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত পুলিশ দেখা যায়। এ বিষয়ে মতিহার থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল। তাই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।’

উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছেন এডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরাএ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা ও ফাইন্যান্স কমিটির সভায় বাধে দেওয়া হবে এমনটা আমরা আগেই জেনে ছিলাম। সেই কারণে উপাচার্যের নির্দেশে প্রক্টরের মাধ্যমে মতিহার থানায় লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়।’

সার্বিক বিষয়ে রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, অনিবার্য কারণবশত আমাদের এফসি ও সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের তালা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সাহা বলেন, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি আছে, বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখছে। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া আমার পক্ষে যোগদান করানো সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে (গত ০৬ মে) ১৩৮ জনকে এডহকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগকে এরই মধ্যে অবৈধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা কর্মস্থলের পদায়নের দাবিতে বেশ কিছুদিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত