Ajker Patrika

এসএসসির ফলাফল: ১৫ বছরে পাসের হার সর্বনিম্ন

রাহুল শর্মা, ঢাকা 
নয়টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর উল্লাসে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নয়টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর উল্লাসে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা প্রায় দেড় দশক ধরে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছিল। ২০২১ সালে তা গিয়ে ওঠে রেকর্ড ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশে। কিন্তু চলতি বছর সে ধারা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে। এবার এসএসসি ও সমমানে পাসের হার মাত্র ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১০ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার নয়টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার গড় পাসের হার গত বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মূলত তিনটি কারণে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এগুলো হলো গণিত ও ইংরেজিতে পাস করতে না পারা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বোর্ডের ফল বিপর্যয় এবং কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি আরোপ ও ‘যথাযথভাবে’ খাতা মূল্যায়নের উদ্যোগ।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির।

গণিত ও ইংরেজির প্রভাব ফলে

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার গণিত ও ইংরেজিতে খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে পাস নম্বর তুলতে পারেনি। সব বোর্ড মিলিয়ে গণিতে পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। যেসব বোর্ড এ বছর পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে, সেসব বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে গণিতেই।

এবার গণিতে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী পাস করেছে বরিশাল বোর্ডে। সেখানে এ বিষয়ে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বোর্ডে মাত্র ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে গণিতে। দুটি বোর্ডের গণিত এবং ইংরেজিতে পাস হার সামগ্রিক পাসের হারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ইংরেজিতেও সবচেয়ে খারাপ করেছে বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডের মাত্র ৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পাস করেছে। রাজশাহী ছাড়া অন্য কোনো বোর্ডের শিক্ষার্থীরাই ইংরেজিতে সন্তোষজনক ফলাফল করেনি।

ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল কবির বলেন, ‘উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়নের পর যা এসেছে, সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই।’

মানবিক ও বাণিজ্যে ধরাশায়ী শিক্ষার্থীরা

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মতো এবারও ভালো করলেও মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবার খুব একটা ভালো করতে পারেনি।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে এবার পাসের হার ৮৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সে তুলনায় মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ফল খুবই খারাপ হয়েছে। বাণিজ্য বিভাগে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৩২ শতাংশ আর মানবিকে মাত্র ৫৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মানবিক বিভাগের মধ্যে গণিতেই বেশি খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা।

SSC-Result

অনেক ফেল, কমেছে জিপিএ-৫

এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করেছে ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা বেশি। তথ্য বলছে, এসএসসিতে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল ৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন। আর মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৯ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন। সব মিলিয়ে এবার ফেল করেছে ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী।

এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ এবং ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী।

এবারও এগিয়ে মেয়েরা

সার্বিক ফল খারাপের মধ্যে এবারও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এবার মেয়েদের পাসের হার ৭১ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ছেলেদের ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত বছর মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ছেলেদের ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যেও এগিয়ে মেয়েরা। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬, আর ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।

১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই ফেল

চলতি বছর দেশের ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫১। আর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি।

পাসে শীর্ষে রাজশাহী, নিচে বরিশাল

পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে বরিশাল বোর্ডে, ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বরিশালের চেয়ে অল্প কিছু বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। এই বোর্ডে পাস করেছে ৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এর আগে ২০২৪ সালে যশোর বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আর সবচেয়ে কম পাসের হার ছিল সিলেট বোর্ডে, ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ-৫-এ সবার ওপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ শিক্ষা বোর্ডের ৩৭ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।

ফলাফলের সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় শিখন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এই ফল বিশ্লেষণের জন্য একটা কমিটি করা প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত