Ajker Patrika

গাইবান্ধায় হঠাৎ বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, টার্গেট হচ্ছেন মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা 
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০: ০৪
গাইবান্ধায় হঠাৎ বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, টার্গেট হচ্ছেন মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা

গাইবান্ধা শহরে হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠছে চুরি ও ছিনতাইকারী চক্র। হঠাৎ করেই পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়ায় বেড়েছে চুরি-ছিনতাই। ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছেন চুরি, মোটরসাইকেল। গেল কয়েক দিনে গাইবান্ধা সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। টার্গেট করা হয় শহরের মেসে থেকে পড়াশোনা করা অপরিচিত মুখ। 

শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে চলন্ত রিকশা বা পায়ে হেঁটে যাওয়ার পথে মারধর করে টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। শুধু রাতেই নয়, দিনের আলোতেও সমান তালে ছিনতাই করে যাচ্ছে তারা। ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগ ভুক্তভোগী মামলা বা থানায় অভিযোগ দেন না। তাই পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। তবে ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

জেলা শহরের ছাত্র-ছাত্রীদের মেস/আবাসস্থল হিসেবে বেশি পরিচিত কলেজপাড়া, সুন্দরজাহান মোড়, প্রফেসর কলোনী, থানাপাড়া, মুন্সিপাড়া, পলাশপাড়া, মাস্টার পাড়া, ডেভিড কোম্পানি পাড়া। বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন তারা। চুরি ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া পরও প্রকাশে কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না মেসের থাকা শিক্ষার্থীরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেসে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সহপাঠীদের সঙ্গে কোনো আড্ডা বা গল্প করতে দেখলেই তাদের ডাকা হয়। ডেকে কথা বলে বাসা কোথায়? এখানে এসব কি করছে, ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া, মিথ্যা অপবাদ অথবা কাজী ডেকে বিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে স্বর্ণের চেইন মোবাইল ঘড়িসহ নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এ ছাড়া স্থানীয় টোকাই, ছাত্রলীগের পরিচয় নামধারী নেতাদের বিরুদ্ধে মেসে থাকা ছাত্রদের কাজ থেকে প্রভাব খাঁটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করা এবং রাতে মেসে ঢুকে চুরি করাও অভিযোগ আছে। 

ছিনতাইয়ের শিকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এখন চলাফেরা করা কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন পয়েন্টে অত পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই হচ্ছে। এদের অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রভাব কাটিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে সব সময় থেকেই যায়। 

গত শক্রবার (২ ডিসেম্বর) রোজিনা খাতুন নামে এক নারী শহরের বাস টার্মিনাল থেকে রিকশাযোগে থানা পাড়া বাসায় যাওয়ার পথে কলেজে হোস্টেলের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে ২০ হাজার ৭০০ টাকা ব্যবহৃত মোবাইল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে কলেজ পাড়া রেজাউল আলমের বাসার গ্রিল কেটে তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। 

এ ছাড়া গত ২৬ নভেম্বর (সোমবার) সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র একরামুল। শহরের কলেজপাড়া একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। বই কেনা জন্য শহরে সন্ধ্যার দিকে যাওয়ার পথে থানাপাড়া এলাকায় দুই তিনজন ছেলে তাঁকে ডাক দেয়। সাড়া দিয়ে গেলে তাঁর কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। 

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক মেসে থাকা এক ছাত্র বলেন, ‘স্থানীয় ছেলেরা প্রায় রুমে গিয়ে সমস্যা করে। আমরা পড়াশোনা করার জন্য এসেছি। বাঁধা দিলে হিতে বিপরীত হবে। তাই এমনটা ভেবে কষ্ট হলেও মেনে নিয়ে থাকতে হয়। আমরা তো সারা জীবন এখানে থাকার জন্য আসিনি। যারা ডিস্টার্ব করে তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রোগ্রামে দেখা যায়।’ 

ভুক্তভোগী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী হওয়ায় আলাদা জায়গায় থাকি। গত ২৭ নভেম্বর মোটরসাইকেল রেখে আমার স্ত্রী জেলার সুন্দরগঞ্জ এবং আমি বগুড়ায় অবস্থা করি। গত ১ ডিসেম্বর শহরের বাসায় এসে দেখি মেইন গেট ভেঙে বাসার ভেতরে ঢুকে আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে গেছে। নিজের বাসায় যদি জিনিসপত্র নিরাপদ না হয় তাহলে রাখব কোথায়!’ 

এসব বিষয়ে জানতে চাই নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক গাইবান্ধা কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘যারা প্রকৃত ছাত্রলীগ করে তারা এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। কিছু সুবিধাবাদী দুই-এক দিন প্রোগ্রামে এসে ছাত্রলীগের নাম ভাঙাতে পারে। অপরাধী যেই হোক না ক্যানো তার শাস্তি চাই। কোনো অপরাধের সঙ্গে ছাত্রলীগ আপস করে না এবং কোনো দিন করবে না।’ 

জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের জেলা সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ বাবু বলেন, ‘যারা শহরে এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত তারা সমাজের প্রভাবশালীর ছত্রচ্ছায়ায় চলাফেরা করেন।’ 

সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু বলেন, ‘শহরে হঠাৎ করে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। যত বড় প্রভাবশালীর অনুসারী হোক না ক্যানো এসব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’ 

গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক ও বারের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক অবনতি হয়েছে। এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা অজানা। জেলায় দিন দিন চুরি ছিনতাই বেড়ে চলছে। এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে। যেন পরবর্তী এসব কাজে আর কোনো দিন জড়িয়ে না পড়ে।’ 

এ নিয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদার রহমান দৈনিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চুরি ছিনতাইয়ে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ বেশ কয়েকজন চোর এবং ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারও করেছেন। আরও যারা চুরি-ছিনতাইয়ে সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

সাবেক ‘র’-এর প্রধানের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত