Ajker Patrika

‘মানুষটারে না মেরে হাত-পা ভেঙে দিলেও মনটারে বুঝাইতে পারতাম’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ১৫: ৩৯
‘মানুষটারে না মেরে হাত-পা ভেঙে দিলেও মনটারে বুঝাইতে পারতাম’

ভালোবেসে অনেকেই ঘর ছাড়েন। বাঁধেন নতুন ঘর। কিন্তু ঘর ছাড়ার অপরাধে কোনো মাকে প্রাণ দিতে হবে, সেটা যদি সন্তান জানতেন তাহলে হয়তো কারও হাত ধরে কেউ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতেন না। ময়মনসিংহে প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়ার অপরাধে গত মঙ্গলবার প্রাণ দিতে হয়েছে লাইলী বেগম নামে এক নারীকে।

জানা যায়, নিহত লাইলী বেগম (৩৮) মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া এলাকার আব্দুর রশিদের স্ত্রী। তাঁর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২০) প্রতিবেশী খুকি আক্তারকে (১৭) নিয়ে গত ২৬ জুন পালিয়ে যান। এ ঘটনার জেরে খুকি আক্তারের পরিবারের সদস্যরা লাইলী বেগমকে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় গত ২৮ জুন নিহত লাইলী বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ আটজনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুকি আক্তারের চাচা জাহাঙ্গীর এবং চাচি আছমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলাম এবং প্রতিবেশী খোকন মিয়ার মেয়ে খুকি আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। তবে বিষয়টি মেনে নেয়নি খুকির পরিবারের লোকজন। সম্প্রতি খুকির বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে অন্যত্র। বিষয়টি খুকি জানতে পেরে গত রোববার সিরাজুলের সঙ্গে খুকি পালিয়ে যান। 

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সকালে খুকির বাবা খোকন মিয়া (৪২), মা নাসিমা আক্তার কণা (৩৬), চাচা কামাল মিয়া (৪৫), জাহাঙ্গীর (৩৫), বাবুল (৩৮), চাচি নাসিমা আক্তার বৃষ্টি (৩৮), আছমা (৩২) এবং রোমান (৩২) সিরাজুল ইসলামের মায়ের হাত-পা বেঁধে একটি ঘরে নিয়ে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করেন। সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাইলীর মৃত্যু হয়। 

নিহত লাইলীর স্বামী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মানুষটারে না মেরে হাত-পা ভেঙে দিলেও মনটারে বুঝাইতে পারতাম। চোখের সামনে পেতাম। এখন চিরতরে বিদায় জানাতে হলো। তারা আগে থেকেই হুমকি দিচ্ছিল আমাদের ক্ষতি করার। কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রাণ নিয়ে নেবে, তা ভাবতে পারেনি। করোনার আগে ছেলে এসএসসি পাস করে নানার বাড়ি তারাকান্দার গোপালপুরে থাকত। মেয়ে কলেজে যাওয়ার কথা বলে তারাকান্দা থেকে ছেলেকে নিয়ে পালিয়েছে। ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়। তারা চলে গেছে আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু মেয়েপক্ষের টাকাপয়সা, প্রভাব-প্রতিপত্তির কাছে আমি হেরে গেলাম।’ 

আব্দুর রশিদ আরও বলেন, ‘মা বেঁচে নেই ছেলে হয়তো শোনেনি, শুনলে অন্তত মাকে মাটি দিতে হলেও আসত। এখন আমার ১৬ বছরের মেয়েটাকে নিয়ে বিপদে আছি। আমার আর কোনো স্বজন নেই। কার কাছে, কোথায় মেয়েটাকে রেখে কাজে যাব, তা-ও ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না। আমার স্ত্রীকে তারা যেভাবে মেরেছে তাদের এমন মৃত্যু চাই। আমার আর কিছুই চাওয়া নেই।’ 

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, প্রেম করা কোনো অপরাধ নয়। তারা পালিয়ে যাওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে মেয়ের উপস্থিতি না থাকায় তাকে আসামি করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাকি ছয় আসামিসহ ছেলে-মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের তিনটি দল কাজ করছে। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর এবং আছমাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে গত বুধবার বিকেলে ১ নম্বর আমলি আদালতে তোলা হলে বিচারক রিমান্ড শুনানির তারিখ নির্ধারণ না করে তাদের জেলহাজতে পাঠান। নিহত লাইলী বেগমকে গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

এ বিষয়ে খোকন মিয়ার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ঘটনার দিন তাঁরা ঘরে তালা দিয়ে পালিয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত