Ajker Patrika

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৪ কোটি টাকার ভবন নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে জানে না কেউ

রুবায়েত হোসেন, খুবি 
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ১৪
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৪ কোটি টাকার ভবন নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে জানে না কেউ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছর। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইইআর)’ ভবনটির নির্মাণকাজ অর্ধেকও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে ফলক স্থাপনের মাধ্যমে এই নির্মাণকাজের সূচনা করেন। প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ভবনটির নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার কথা। তবে চুক্তির মেয়াদ পেরোলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সাততলাবিশিষ্ট আইইআর ভবনটির মোট আয়তন হবে ২ হাজার ৯২১ বর্গমিটার। ২০২০ সালে ভবনটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিএএল অ্যান্ড টিবিইএএলকে (জেভি) দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ভবনটির সিংহভাগ কাজ এখনো বাকি। ভবনটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার কাজ আংশিক সম্পন্ন হলেও বাকি রয়েছে বেশির ভাগ কাজ। দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হলেও বাকি রয়েছে দেয়াল নির্মাণ, রং,পলেস্তারা ও ভেতরের নানান কাজ। কবে নাগাদ পুরো ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাজারে রড-সিমেন্টের লাগামহীন দামের কারণও কাজের গতিকে ব্যাহত করেছে। মাঝপথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ চলমান রাখতে অপারগতা জানানোয় তা বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া নতুন করে পাইলিং, নকশা পরিবর্তন ও ভবন নির্মাণের স্থান পরিবর্তনের কারণেও সেখানে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়েছে। 

কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন করে টেন্ডার দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। নতুন একটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজ হস্তান্তর করা হবে। তবে সেটা কবে নাগাদ হবে, তা বলতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ চলমান রাখতে ততটা সক্ষম নয়, যার ফলে মাঝপথে কাজ বন্ধ করেছে তারা। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, সাততলা ভবন কমিয়ে চারতলা করা হতে পারে।’ 

এদিকে শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের ডিসিপ্লিনে এখন পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। এ ছাড়া ল্যাব ও ক্লাসরুমের জন্য একই কক্ষ ব্যবহার করা হয়। ফলে একটা ক্লাস করে তাঁদের পরবর্তী ক্লাসের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। ক্লাসরুমের অপ্রতুলতার কারণে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। 

ওই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সাজিদ আবীর বলেন, ‘আমাদের আগে তিনটা ক্লাসরুম থাকলেও বর্তমানে মাত্র দুইটা ক্লাসরুম রয়েছে। মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের রুমটিতে ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমরা এখন সেই ক্লাসরুম ব্যবহার করতে পারি না। যখন আমাদের মাস্টার্স শুরু হবে, তখন তো এভাবে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে যাবে। নতুন ভবন চালু না হলে রেগুলার ক্লাসই ইভিনিংয়ে করা লাগবে।’

আবীর বলেন, ‘আমরা প্রতিটা শিক্ষার্থীই চাই যেন দ্রুত নতুন ভবনের কাজ শেষ হয়। একই সঙ্গে সেখানে যেন আমরা শিক্ষাগ্রহণের একটা উপযুক্ত পরিবেশ পাই।’ 

এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাজারদরের সঙ্গে পেরে ওঠা যাচ্ছে না। প্রতিটা ছাদ ঢালাইয়ের জন্য কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা লাগবে। প্রকল্প শেষ করতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অপারগতা জানিয়েছে। ফলে ভবনের কাজও থমকে গেছে। তবে এ বিষয় সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টার সুরাহা হলে দ্রুত আবার কাজ শুরু হবে বলে আশা করি। তবে এতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগতে পারে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি। সরকার সিদ্ধান্ত দেবে তারপর কী হবে, প্রক্রিয়াটা কী তারা বলবে। এ ছাড়া পাইলিংয়ের কাজ, নকশা পরিবর্তন ও নতুন উপাচার্য আসার পর ভবন নির্মাণের জায়গা পরিবর্তনের কারণে সেখানে বেশ সময় চলে যায়। এতে কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি কাজে অনেক নিয়মকানুন ও নির্দেশনা থাকে। সে অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করতে হয়। এসব ভবনে পাইলিংয়ের কাজে অনেক সময় চলে যায়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না।’ 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘করোনার কারণে কাজ অনেকটা থমকে গিয়েছিল। এ ছাড়া প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস উপাচার্য না থাকায় প্রায় এক বছর ঠিকভাবে তদারক হয়নি। এতে কাজের অগ্রগতি কমে যায়। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে কাজে গড়িমসি করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য দায়িত্বে আসার পর তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে আবার কাজ শুরু করেন। বর্তমান প্রশাসন এ বিষয়ে সব সময় তৎপর রয়েছে। আশা করি দ্রুত ভবনের কাজ শেষ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

১৯৪৭ থেকে ২০২৫: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত