Ajker Patrika

দুবাইয়ে পরিকল্পনা করে টিপুকে হত্যা, দাবি র‍্যাবের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ২৫
দুবাইয়ে পরিকল্পনা করে টিপুকে হত্যা, দাবি র‍্যাবের

রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী চারজনকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) ও মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১)।

খন্দকার আল মঈন জানান, র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৩-এর অভিযানে গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর মুগদা, শাহজাহানপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে নজরদারির কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এবং হত্যার জন্য দেওয়া ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইলসহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি শিকার করেছেন।

খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত মোরশেদুল আলম এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই যান। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়। হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘটিত হলেও দুবাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দেশ থেকে কিলার নাছির, কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েক দিন যাবৎ মুসার কাছে তথ্য পাঠাতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তারকৃত কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে জানান। পরে টিপুর গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় কাইল্লা পলাশ তাঁকে নজরদারিতে রাখেন এবং তাঁর অবস্থান সম্পর্কে তিনি ফ্রিডম মানিককে জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। 

 র‍্যাবের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ নিহত টিপু ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছিল। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। মিল্কী হত্যাকাণ্ডের তিন বছরের মধ্যে একই এলাকার বাসিন্দা রিজভি হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। 

পরে গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক ও অন্য সহযোগীরা স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে।

খন্দকার আল মঈন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুকের সঙ্গে টিপুকে হত্যার জন্য হত্যাকারীদের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। এই টাকার মধ্যে ওমর ফারুক ৯ লাখ এবং অবশিষ্ট টাকা অন্য আসামিরা দিয়েছেন। দুবাইয়ে যাওয়ার সময় মুসা ৫ লাখ টাকা নিয়ে যান এবং হুন্ডির মাধ্যমে মুসাকে আরও ৪ লাখ টাকা পাঠান। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়। উল্লেখ্য, মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত ৩ নম্বর আসামি। 

র‍্যাবের দাবি, গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য তত্ত্বাবধান ও অর্থ লেনদেন করেন। গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত ৪ নম্বর আসামি এবং উক্ত মামলায় সে ইতিপূর্বে কারাভোগ করেছেন।

কিলার নাছির এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সময় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য অর্থ প্রদান করেন। ঘটনাস্থলের কাছে তাঁকে সাদা শার্ট, জিনস প্যান্ট ও কেডস/জুতা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ঘটনার পর তিনি তাঁর মোবাইল ফ্লাশ করে বিক্রি করে দেন এবং সিমকার্ড ভেঙে ফেলেন। র‍্যাব পরে ওই মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড উদ্ধার করে। এ ছাড়া ঘটনার আগের দিন তিনি সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম এলাকায় এক দিন অবস্থান করেছিলেন। তিনি রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ১ নম্বর চার্জশিটভুক্ত আসামি। তাঁর নামে অস্ত্র আইনে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারি ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সমন্বয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ প্রদানের সঙ্গে জড়িত। তিনি রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ২ নম্বর চার্জশিটভুক্ত আসামি। তাঁর নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে তিনি কারাভোগ করেছেন।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ মার্চ রাতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে বাসায় ফেরার পথে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাঁকে লক্ষ্য করে ১১টি গুলি ছোড়ে। এতে টিপু ও তাঁর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া যানজটে আটকে পড়া রিকশারোহী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন।। পরে তিনজনকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এ ঘটনায় ২৫ মার্চ নিহত টিপুর স্ত্রী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে রাজধানীর শাজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। তবে মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর পরদিন ২৬ মার্চ রাতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল শুটার মাসুম ওরফে আকাশকে বগুড়া থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর গতকাল শুক্রবার এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শাহজাহানপুরের স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরফান উল্লাহ দামালকেও গতকাল গ্রেপ্তারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত