Ajker Patrika

মেরামতকারী থেকে কারখানার মালিক স্বপন, দৈনিক বিক্রি ২০০ নকল ফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ২০: ৪৩
মেরামতকারী থেকে কারখানার মালিক স্বপন, দৈনিক বিক্রি ২০০ নকল ফোন

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় অভিযান চালিয়ে নকল মোবাইল ফোন ও ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‍্যাব। কারখানা থেকে অসংখ্য নকল মোবাইল ফোন ও যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। কারখানার মালিক এবং প্রধান কারিগর মো. স্বপনকেও (২৬) আটক করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ এনে গুলিস্তানে স্বপনের কারখানায় ফোন তৈরি করা হতো। সেসব ফোন দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে চলে যেত সাধারণ গ্রাহক ও অপরাধীদের হাতে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) সহযোগিতায় স্বপনের কারখানায় র‍্যাবের অভিযানে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মোবাইল ফোন, ৩ হাজার ৩৭০টি মোবাইলের নকল ব্যাটারি, ১২০টি হেডফোন, চার্জার কেবল ৩৮৫টি, নকল মোবাইল চার্জার ১ হাজার ১৫৫টি, সিলার মেশিন, হিট গান, ৪৩টি মোবাইল ডিসপ্লে, ইলেকট্রিক সেনসর ১০টি, ১৩টি আইএমইআই কাটার মেশিন জব্দ করা হয়। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড উদ্ধার করা হয়েছে। 

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

আরিফ মহিউদ্দিন জানান, একটি বেসরকারি অফিসে পিয়নের কাজ করতেন স্বপন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তিতে আগ্রহ তাঁর। এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন মেরামতের সূত্রে গুলিস্তান এলাকার একজন মেকানিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেই মেকানিকের মাধ্যমে স্বপন জানতে পারেন, মোবাইল মেরামতের ব্যবসা বেশ লাভজনক। তখন একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে বিনা বেতনে কাজ শিখতে শুরু করেন। দ্রুতই বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে আরও জানার জন্য অনলাইনে সার্চ করেন। একপর্যায়ে নিজেই মোবাইল ফোন তৈরি এবং আইএসআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মোবাইল ফোন তৈরি শুরু করেন। স্বপন প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল ফোন তৈরি করতে পারেন। তাঁর কারখানায় আরও কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

স্বপনের কারখানা থেকে জব্দ নকল মোবাইল ফোন ও ফোন অ্যাকসেসরিজস্বপনের কারখানায় তৈরি করা এসব মোবাইল ফোন দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। কারখানায় তৈরি করা এসব মোবাইলে সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাম লিখে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল প্যাকেট মুড়িয়ে বিক্রি করা হতো। এসব মোবাইল বিটিআরসির ডেটাবেইসে নিবন্ধিত না থাকায় বিক্রির পর অধিকাংশেরই কোনো না কোনো সমস্যা হতো। তাই গ্রাহকদের প্রচুর অভিযোগ আসত। বারবার ফোন নষ্ট হওয়ায় গ্রাহকেরা হয়রানির শিকার হতেন। তখন মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি আর ফেরত নিতে আসতেন না গ্রাহকেরা। তখন ওই মোবাইল মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হতো। এযাবৎ স্বপনের কারখানায় তৈরি ১০ হাজার মোবাইল ফোন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়েছে। এই মোবাইল বিক্রির ৩০ লাখ টাকার বেশি অর্থ দিয়ে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন তিনি।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক আরও জানান, স্বপনের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি পাস। তিনি এক বছর ধরে মোবাইল ফোন তৈরির কারখানার অনুমোদন চেয়ে আসছিলেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার অনুমোদন না পেলেও কারখানায় দিনে ৫০টি করে ফোন তৈরি করে আসছিলেন। দৈনিক ২০০টির বেশি মোবাইল ফোন বিক্রি করতেন তিনি। তাঁর কারখানায় সাধারণ আকারের মোবাইলের পাশাপাশি বিশেষ আকৃতির (২.৫ ইঞ্চি) মোবাইল ফোন তৈরি হতো। এসব মোবাইল দিয়ে কথা বলা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই মোবাইল ফোনগুলো কোনো অপরাধী চক্র অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কি না জানতে তদন্ত করছে র‍্যাব। 

এ ঘটনায় আটক স্বপনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এ র‍্যাব কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত