Ajker Patrika

প্রতি বছর জরিমানা দিয়েই চলে নকল খাদ্যদ্রব্যের কারখানা

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৫২
প্রতি বছর জরিমানা দিয়েই চলে নকল খাদ্যদ্রব্যের কারখানা

'সারা দেশে প্রতি বছর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে র‍্যাব। আমাদের এখানেও অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। এ নিয়ে গত তিন বছরে তিনবার জরিমানা করা হয়েছে।' 

রাজধানীর উত্তরখানের উজামপুরের ফৌজারবাড়ী এলাকার ১৪ / ৬ শাহী কনজুমার প্রোডাক্টস নামক একটি জুস ও চিপস কারখানায় মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে এভাবেই বলছিলেন কারখানাটির মালিক সাইফুল ইসলাম। 

সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের এখানে মাপক যন্ত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ থাকার কারণে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।' বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া ঢাকা সুইটস পটেটো চিপস, ম্যাজিক জেলী এবং মাই লাইক চকলেট তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। সাইফুল বলেন, 'আমরা মাত্র দুই মাস যাবৎ এসব প্রোডাক্টস তৈরি শুরু করেছি। আস্তে আস্তে সকল অনুমোদন নিয়ে নিব।' এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনাকারীরা শাহী কনজুমার প্রোডাক্টসকে শেষ বারের মত ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন বলে জানান। তাঁরা বলেন, কারখানাটি নজরদারিতে রাখা হবে, পরবর্তীতে এমন অনিয়ম পাওয়া গেলে তা সিলগালা করে দেওয়া হবে। 

উজামপুরের ফৌজারবাড়ী এলাকার ১৭ / ৬ নম্বর বাসার গ্রীণ-৯ কোম্পানি নামক চকলেট কারখানা, শাহী কনজুমার প্রোডাক্টস লি. এর জুস ও চিপস কারখানা এবং একই এলাকার আইয়ুবের ভাড়া বাড়ির বোরহান উদ্দিনের চিপস-জুস কারখানায় মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিকেলে পর্যন্ত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ। এতে র‍্যাব-১ ও বিএসটিআই এর কর্মকর্তাগণ সহযোগিতা করেন। এ সময় র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন কারখানাকে মোট সাড়ে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রীণ-৯ কোম্পানি নামক চকলেট কারখানাটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, বিএসটিআর এর অনুমোদন ছাড়া ডেইরি মিল্ক, ডেইরি বার, চকোচকো, রেসিং বার (গাড়ি চকলেট), ম্যাজিক স্টার, ম্যাজিক বল ও মজামহা নামের বিভিন্ন ধরনের চকলেট তৈরি করা হচ্ছে। ফ্লোরের মধ্যে কাগজ বিছিয়ে খালি হাত দিয়ে করা হচ্ছে চকলেট প্যাকিংজাত। 

অনুমোদন ছাড়া চিপস বানানো হচ্ছেশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কারখানাটির মালিক নয়জন। তাই কারখানার নাম গ্রীণ-৯। বর্তমানে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন ইয়াছিন আরাফাত। তিনি অবৈধভাবে চকলেট তৈরি করে বিক্রি করার অর্থ দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব। 

কারখানাটির শ্রমিক আয়েশা, রাধা রানি, সাইফুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'কারখানাটিতে ৫ হাজার টাকা বেতনে দৈনিক আট ঘণ্টা করে কাজ করছেন তারা। এই কারখানাটি কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। তারাই খাদ্যদ্রব্য তৈরি করেন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেন। প্রতিটি চকলেট ও চকোচকোর মেয়াদ এক বছর করে দেওয়া হয়। 

শাহী কনজুমার প্রোডাক্টস নামের চিপস-জুস কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ওই কারখানাতে নোংরা পরিবেশে অনুমোদন ছাড়াই চিপস ও মাই লাইক চকলেট তৈরি করা হচ্ছে। যদিও কারখানাটিতে শুধু মাত্র শাহী জুসের অনুমোদন ছিল। এ ছাড়া জুস, চিপস ও চকলেটে পরিমাণেও কম দেওয়া হতো। 

ফৌজারবাড়ী এলাকার মৃত আইয়ুবের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সম্পূর্ণ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জুস ও চিপস তৈরি করা হচ্ছে। যে তেল দিয়ে চিপস ভাজা হতো তাও ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ। সেই সঙ্গে কাপড়ের রং মিশিয়ে জুস ও চিপস রঙিন করা হতো। বাড়িটির কোথাও কারখানার কোন সাইন বোর্ড পাওয়া যায়নি। র‍্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'এই বাড়িটিতে রাতের আঁধারে জুস-চিপস তৈরির কাজ চলতো। কিন্তু দিনের বেলায় তা বন্ধ রাখা হতো। যেন কেউ সহজে না বুঝতে পারেন, এখানে কী হচ্ছে।' 

এ বিষয়ে র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএসটিআই এর অনুমোদন ব্যতীত বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে গ্রীণ-৯ কোম্পানি লি. নামের চকলেট কারখানাকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শাহী কনজুমার প্রোডাক্টস লি. নামের কারখানাকে ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন ২০১৮ এ আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে সঙ্গে নামবিহীন কারখানাকে ভোক্তা অধিকার আইনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।' 

এসব কারখানাগুলো ভবিষ্যতেও নজরদারিতে থাকতে। আবারও কোন অনিয়ম পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত