Ajker Patrika

সমকামিতার ফাঁদ: এক অপহরণ মামলা থেকে দুই হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ২২: ০৩
সমকামিতার ফাঁদ: এক অপহরণ মামলা থেকে দুই হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে সমকামিতার ফাঁদে পড়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন আমির হোসেন (২৫)। তিনি রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে বড় বোনের বাসায় ওঠেন। সমকামিতার ফাঁদ পেতে রাখা চক্রের সদস্যরা আমিরকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মুক্তিপণ না পেয়ে তাঁকে হত্যা করে। 

আমির অপহরণের ঘটনায় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল অপহরণ মামলা করেন আমিরের বড় ভাই বিল্লাল। মামলার তদন্ত উদ্‌ঘাটন করতে গিয়ে দুটি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে দক্ষিণখান থেকে নিখোঁজ আমিরের অর্ধগলিত মরদেহ গাজীপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপর দিকে ছয় মাস আগে নাটোর সদর থেকে নিখোঁজ রুবেল উদ্দিনের (৩৪) মরদেহের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। 

অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক (এসআই) রেজিয়া খাতুন আজ শনিবার আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানান। 

এর আগে দক্ষিণখানের আশকোনার মেডিকেল রোড থেকে ভিকটিম আমির ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। পরে আমির হোসেনের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে তাঁর বোনের নম্বরে অপহরণকারীরা ফোন করে মুক্তিপণ হিসাবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই বিল্লাল প্রথমে জিডি এবং পরে গত ১৩ এপ্রিল দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেন। 

ওই মামলায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া মাইজদী এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার সমকামিতার প্রলোভন দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মূল দুই হোতা তারেক আহমেদ ওরফে তারেক হাসান (৩৫) ও মো. হৃদয় আলীকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশ থেকে আশরাফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০) নামের আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তারেক ও হৃদয়ের দেওয়া তথ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের দারোগার চালা এলাকার একটি পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংক থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় আমিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে মূল হোতা তারেক ও হৃদয়ের চার দিন এবং বাকি তিনজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০১৫ সালে এক যুবকের সঙ্গে তারেক আহমেদের পরিচয় হয়। তখন তিনি গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে ইনপুটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। ওই যুবক তারেককে সমকামিতার অফার করলে তাঁকে গাজীপুরের চৌরাস্তায় ডেকে আনা হয়। পরে বন্ধুরা মিলে যুবকটিকে চিপা গলিতে নিয়ে ৭০০-৮০০ টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে ২০০-৩০০ টাকা ভাগ পান তারেক। প্রথমে এমনটা করেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমির ছলে। 

কিন্তু পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে একপর্যায়ে এটিই পেশা হয়ে দাঁড়ায় তারেকের। যার কারণে ফেসবুকে ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ভুয়া আইডি খুলে সমকামিতার জন্য যুবকদের ডেকে নিয়ে আসা হতো। পরে সেভেন আপের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাইয়ে অচেতন করে রাখা হতো গাজীপুরের একটি মেসে। তারপর ভুক্তভোগীদের পরিবারকে ফোন দিয়ে আদায় করা হতো মুক্তিপণের অর্থ। না দিলেই করা হতো হত্যার পর লাশ গুম। প্রতিনিয়ত এমন তিন-চারজনকে গাজীপুরের চৌরাস্তায় ডেকে আনা হতো। যাদের সঙ্গে নগদ টাকা পয়সা থাকত, তাদের মারধর করে সব রেখে দেওয়া হতো। 

এ ছাড়া মুক্তিপণের জন্য নোয়াখালীর আমির হোসেনকে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর এবং নাটোরের রুবেল উদ্দিনকে একই বছরের ১১ নভেম্বর হত্যা করে লাশ গুম করে রাখা হয়। হত্যার পরও রুবেলের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসাবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আদায় করে চক্রটি। 

এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, নাটোর সদরের রুইয়েরবাগ গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিলের এসএসসি পাস করা ছেলে তারেক। একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় ২০১৪ সালে বিয়ে করেন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর গ্রামের হৃদয়ের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০২০ সালে তাঁর স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। স্ত্রী চলে যাওয়ার কিছুদিন পর চাকরিও থাকে না। এদিকে ২০২১ সালে সংসারের হাল ধরতে হয় তারেককে। বৃদ্ধ মা-বাবা ও বন্ধু হৃদয়কে নিয়ে চলছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু ছাগল পালন ও কৃষিজমিতে সেচপাম্পের পানি দিয়ে মাসে আয় হতো সাত-আট হাজার টাকা। যদিও সংসারের খরচ ছিল ১০ হাজারেরও বেশি। যার কারণে সাত-আট মাসের বেশি এ কাজটিও করতে পারেননি। পরে তিনি ফেসবুকে ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ভুয়া আইডি দিয়ে সমকামিতার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়ের নেশায় মেতে ওঠে। 

রেজিয়া আরও বলেন, ফেসবুকে রুবেলের সঙ্গে পরিচয় তারেকের। সমকামিতার জন্য গত বছরের ১১ নভেম্বর রুবেলকে তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে যান। পরে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে ঘোরাঘুরি করেন। রাত ১১টার দিকে সেভেন আপের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়ান। এরপর ঘুমিয়ে গেলে রশি দিয়ে জানালার সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ বস্তায় ভরে রাতের অন্ধকারে বাসার পাশের বাগানে পুঁতে রাখেন। সেই রাতে সেখান থেকে ভাতিজির বাড়ি চলে যান। যাওয়ার সময় রুবেলের মোবাইল ফোনটি নাটোরের একটি বাসে ফেলে দেন। কিন্তু রুবেলকে হত্যার পরও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। 

পুলিশ কর্মকর্তা রেজিয়া বলেন, পরে তিনি পালিয়ে গাজীপুরে চলে আসেন। এসে আবার নোয়াখালীর আমির হোসেনকে একইভাবে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে একই কৌশলে তারেক ও তাঁর বন্ধু হৃদয় তাঁকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে সাত-আট দিন অচেতন রাখেন এবং পরিবারের কাছ ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকাও চান তাঁরা। কিন্তু কোনো টাকা না পাওয়ায় তাঁকেও হত্যা
করা হয়। 

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, আমির হোসেনকে হত্যার পর প্রথমে আত্মগোপনের জন্য টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে যান। সেখান থেকে কয়েক দিন পর কাকরাইল মসজিদে গিয়ে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে চলে যান। অবশেষ নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তাবলিগ জামাতের সঙ্গে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারেক ও হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত