Ajker Patrika

প্রতারণাকে শৈল্পিক রূপ দিয়েছিলেন শিকদার: র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রতারণাকে শৈল্পিক রূপ দিয়েছিলেন শিকদার: র‍্যাব

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। বেকার তরুণ-তরুণীরা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আবেদন করলে, কৌশলে নিজের পরিচালিত কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতেন। এরপর চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হতো ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিতেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।

নিজেকে মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেওয়ার শাহিরুল ইসলাম শিকদার নামের ওই ব্যক্তি প্রতারণাকে শৈল্পিক রূপ দিয়েছিলেন। 

আজ শনিবার বিকেলের কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। 

রামপুরা বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে শুক্রবার রাত ৪টা থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ে অর্থ আত্মসাতকারী সিকদারকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৪। 

এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৩টি বিদেশি পিস্তল, একটি শটগান ও একটি এয়ারগান, একটি এয়ারগান, ২৩৭ রাউন্ড গুলি,৫টি ম্যাগাজিন,৫টি খোসা, ২২টি কার্তুজ,৪টি চাকু, একটি লোহার স্টিক,৩টি ডামি পিস্তল, গোপন ক্যামেরা, বুলেট প্রুফ জ্যাকেটসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছে র‍্যাব। 

মোজাম্মেল জানান, কম সময়ে বেশি টাকার মালিক হতে কোম্পানি খুলে বসেন শাহিরুল। রামপুরা এলাকায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা শুরু করেন। 

কী পরিমাণ সম্পদ শাহিরুলের রয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, ২০০৩ সাল থেকে তিনি প্রতারণায় জড়িত। সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় দুটি বাড়ি, দুটি ফ্ল্যাট, দুটি দামি গাড়ি ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নামে ২৪ কাঠা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ আমরা পেয়েছি। তবে ব্যাংক, ফিক্সড ডিপোজিট, স্বজনদের নামে কী পরিমাণ সম্পদ আছে, তা এখনো জানা যায়নি। 

মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচয় দিতেন শাহিরুল ইসলাম। তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করেছে র‍্যাবক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য নামীদামি ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রদর্শন করতেন এবং বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া শাহিরুল প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী ও পুরুষকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড, ড্রাইভার, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, বিক্রয় কর্মকর্তা, লাইনম্যান ইত্যাদি পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। 

র‍্যাব জানিয়েছে, শাহিরুল নিজেকে শুটিং ক্লাবের সদস্য বলেও পরিচয় দিতেন। প্রশিক্ষণ, ইউনিফরম ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবেও টাকা নেওয়া হতো। এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অফিস বা বাসায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে অস্ত্র দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখাতেন। 

প্রতারক শাহিরুল নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচয় দিতেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রামপুরা থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত