Ajker Patrika

শামীম মোল্লার দুঃসহ পৌনে ৩ ঘণ্টা, উপস্থিত থেকেও দায় এড়াচ্ছে প্রশাসন

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ২৭
শামীম মোল্লার দুঃসহ পৌনে ৩ ঘণ্টা, উপস্থিত থেকেও দায় এড়াচ্ছে প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে ক্যাম্পাসের প্রক্টর অফিস ও নিরাপত্তা কার্যালয়ের পাশেই কয়েক দফা মারধর করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরো ঘটনার দায় এড়িয়ে গেছে। যদিও ঘটনার দিন ১৮ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা শাখা ও প্রক্টর অফিসে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ছিল প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। 

এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার তিন নম্বর আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

এর আগে গত ১৫ জুলাই মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন উপাচার্য নুরুল আলমের বাসভবনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিলেন। সেদিন পুলিশ, শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হামলা করেছিল ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা। উপাচার্যের বাসভবনেও ওই দিন নিরাপদ ছিলেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য দরজা আটকিয়ে বাসভবনে বসে ছিলেন, কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। 

জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) সুদীপ্ত শাহীন ২০ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার কাছে শামীম মোল্লাকে মারধরের ঘটনার বর্ণনা করেন। সুদীপ্ত শাহীন প্রক্টরিয়াল বডির কিছু না করতে পারা ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান আসার পর মারধরকারী সাঈদ ভূইয়া উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এমন তথ্য দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য। পরদিন জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রশাসনের অবস্থান জানানো হয়। 

সেখানে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ব্যতিরেকে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দোষারোপ করা দুরভিসন্ধিমূলক। 

প্রশাসনের উপস্থিতি ছিল সার্বক্ষণিক
আজকের পত্রিকা শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা কার্যালয়ে মারধরের দিনের বিভিন্ন সময়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপস্থিতি জানার চেষ্টা করেছে। শামীম মোল্লার মারধরের সময়ে প্রক্টরিয়াল বডির তিনজন ও নিরাপত্তা শাখার সাতজন উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর ছাড়াও দুজন সহকারী প্রক্টর—ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আল-আমিন খান উপস্থিত ছিলেন। আর নিরাপত্তা শাখার উপস্থিত ছিলেন— প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন (নিরাপত্তা-১), মো. জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল (নিরাপত্তা-২), নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ. এস. এম রাশিদুল হাসান রাসেল, মো. রাসেল মিয়া স্বাধীন, নিরাপত্তা কর্মী রিয়াজুল, মনির ও সালাম। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে (প্রান্তিক গেট) একাই অবস্থান করছিলেন। বিকেল আনুমানিক সোয়া ৫টার দিকে তাঁকে সেখানে আটক করে মারধর করেন কিছু শিক্ষার্থী। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে নিরাপত্তা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা একটি ফোন কলে বিষয়টি জানতে পারেন। ৫টা ৫৭ মিনিটে ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ অন্যরা প্রান্তিক গেটে হাজির হন। সেখানে প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলমও ছিলেন। নিরাপত্তা কর্মীরা শামীম মোল্লাকে একটি রিকশায় করে প্রক্টর অফিসে নেন। আরেকটি রিকশায় প্রক্টর ও সেই নিরাপত্তা কর্মকর্তাও সেখানে যান। শামীম মোল্লাকে প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনের একটা কক্ষে রাখা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয় বলে জানান প্রক্টর। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী ওই কক্ষ থেকে শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা শাখার নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনের করিডরে নিয়ে যায়। 

নিরাপত্তা অফিসের সামনের এই করিডোরেই শামীম মোল্লাকে পেটানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাপ্রক্টর অফিস ও নিরাপত্তা শাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো রেজিস্ট্রার ভবনে। দুই দপ্তরের মধ্যে দূরত্ব আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ ফুট। করিডরে নিয়ে যাওয়ার পর শামীম মোল্লাকে আবার মারধর করা হয়। তিনি চিৎকার করছিলেন। সেসময় প্রক্টর তাঁর কার্যালয়েই ছিলেন। একপর্যায়ে প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মীরা এসে মারধরকারীদের নিবৃত্ত করেন। সেখানে ৮–১০ জনের উপস্থিতি দেখা গেছে। এরপর শামীমকে গুরুতর আহত অবস্থায় রেখেই সামনের কলাপসিবল গেটে তালা মেরে একজন নিরাপত্তাকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাকিরা আবার প্রক্টরের অফিসে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই কিছু শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হয়ে মারমুখী আচরণ করলে নিরাপত্তা কর্মীরা শিক্ষার্থীদের বাধা দিলে নিরাপত্তা শাখার দুই কর্মকর্তা এ. এস. এম রাশিদুল হাসান ও মো. রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়। তখন প্রক্টরের অফিসে থাকা সহকর্মীদের ডাকে ওই দুই কর্মকর্তা অন্য একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। শিক্ষার্থীরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলে ওই দুই কর্মকর্তা একপর্যায়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। 

শিক্ষার্থীরা আবার শামীমকে মারতে আসে। তারা শামীমের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মী রিয়াজুলের কাছ থেকে চাবি চায়। রিয়াজুল দৌড়ে প্রক্টর অফিসের দিকে গেলে সেখানে গিয়ে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তারা তালা খুলতে পারেনি। এরপর সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ফেলে শামীমকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মীরা গিয়ে মারধরকারীদের সরিয়ে দেন। শামীম তখন নিথর অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিলেন। তাঁকে সেভাবে রেখেই কলাপসিবল গেটে আরেকটি তালা মেরে প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মীরা স্থান ত্যাগ করেন। 

শামীমকে পুলিশের হাতে দিতেও দেরি
আনুমানিক ৭টা ২০ মিনিটে উপাচার্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, উপাচার্যের একান্ত সচিব মো. মঞ্জুরুল করিমসহ আরও কিছু কর্মকর্তা। উপাচার্য প্রক্টর অফিসে গেলে সাবেক কিছু শিক্ষার্থী তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। রাত পৌনে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। উপাচার্য তখনো সেখানে ছিলেন। পুলিশ শামীম মোল্লাকে নিয়ে যায় রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে। উপাচার্য ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন রাত আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে। রাত ৯টায় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে শামীমকে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

পুলিশের কাছে শামীমকে হস্তান্তর করা হয় পৌনে এক ঘণ্টা পর। কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে এ নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়। ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর কথা বলা হয়। কিন্তু মামলা না থাকায় শামীমের নামে আগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

নিরাপত্তা অফিসের সামনের এই করিডোরেই শামীম মোল্লাকে পেটানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকারাত সোয়া ৮টার দিকে উপাচার্য চলে যাওয়ার পর শামীম মোল্লাকে পুলিশের কাছ হস্তান্তরের জন্য নিরাপত্তা অফিসের পাশের করিডর থেকে প্রক্টর অফিসে নেওয়া হয়। মারধরকারীরা সেসময় শামীমকে আবার ওই করিডরে নিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর করে। পরে প্রক্টর, নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ শামীমকে ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে তোলে। 

আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে শামীম মোল্লা পুলিশ ভ্যানে ওঠেন। তখনো পেছন থেকে তাঁকে ধাক্কা ও কিলঘুষি মারা হচ্ছিল। গাড়িতে উঠেই শামীম পড়ে যান। এরপর পুলিশের গাড়ি সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যায়। 

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, আনার পর পরীক্ষা করে দেখা যায় শামীম মোল্লা মৃত। অর্থাৎ তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এন্ট্রি বইয়ে শামীম মোল্লাকে রাত ৯টায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে তথ্য রয়েছে। 

ঘটনার দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন জহির রায়হান ফিল্ম সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ। তিনি জাবি প্রেস ক্লাবের সদস্য। 

জুবায়ের আজকের পত্রিকাকে বলেন, শামীম মোল্লাকে প্রক্টর অফিসে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি প্রক্টর অফিসে যান। নিরাপত্তা অফিসের সামনে তিনি প্রক্টর ও সহকারীদের প্রক্টরদের দেখতে পান। নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাঁকে জানান শামীম মোল্লাকে করিডরে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। অনুরোধ করে গেটের তালা খুলিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখেন শামীম মোল্লা অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। ওই সময় প্রক্টর অফিসের সামনে কয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। একটু দূরে প্রায় ২০ জনের একটি জটলা ছিল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী আজকের পত্রিকাকে বলেন, শামীমকে মারধর থেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাসেল ও স্বাধীন। এ জন্য তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল মারধরকারীরা। শামীমকে নিরাপত্তা কার্যালয়ের সামনে আনলে এই দুজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয় মারধরকারীরা। তখন ওই দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে সরিয়ে প্রক্টর অফিসের মধ্যে নেওয়া হয়। রাতে শামীম মোল্লাকে পুলিশ নিয়ে গেলে তাঁরা বের হয়েছেন। 

শামীম মোল্লার বড় ভাই শাহীন মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জানতে পারেন তাঁর ভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর খোঁজ নিয়ে জানেন, তাঁকে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি সাভার থানা ও এনাম মেডিকেলে যান। সেখানে না পেয়ে আশুলিয়া থানায় যান রাত ১১টার দিকে। থানা থেকে তাঁকে জানানো হয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে নেওয়া হয়নি। তখন জানতে পারেন তার ভাইকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পৌনে ১২টার দিকে তিনি সেখানে পৌঁছে জানতে পারেন ভাই আর নেই! ভাইয়ের শরীরে হাত দিয়ে দেখেন ঠান্ডা। তার মানে কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি মারা গেছেন। 

শাহীন বলেন, শামীমকে ক্যাম্পাস থেকে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়। থানায় নেওয়া হয়নি। 

মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকলেও তাঁরা ঘটনার দায় এড়িয়েছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীন বলেন, ‘এখন তাঁরা যদি দায় এড়িয়ে যান, তাহলে কিছু বলার নেই! তবে (তাঁরা) মামলা দিয়েছেন। প্রক্টর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, এটা শুনেছি। মামলা অনুযায়ী বিচার হলেই হবে। কেউ যদি তাঁকে রক্ষা করতে না পারে তবে আর কী করার আছে!’ 

শামীম মোল্লা নিহতের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন। তবে তিনি এই কমিটিতে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন। 

চিঠির বিষয়ে আনিছা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অপারগতার কারণ হিসেবে হত্যার শিকার শামীম মোল্লাকে পেটানোর সময় স্বয়ং উপাচার্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার তথ্য পত্রিকার সংবাদের বরাতে চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন। সেই তথ্য উপাচার্য সরাসরি মৌখিক আলাপে অস্বীকার করেছেন। উপাচার্য হিসেবে তাঁর বক্তব্যের প্রতি তিনি (আনিছা পারভীন) আস্থা রাখতে চান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশীজন প্রকাশ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত। সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ব্যক্তিদের (প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরেরা) ঘটনার বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার খবরাখবরও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায়, তদন্ত কমিটির কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে, প্রভাব ও চাপ মুক্ত থেকে পরিচালনা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে তাঁর সংশয় ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

আনিছা পারভীন উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতেও একই কথা বলেছেন। 

ওই দিনের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শামীমকে আমার কার্যালয়ে নয়, নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলাম। তবে পুলিশ আসতে দেরি করে। আমরা সোয়া ৬টায় পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ এসেছিল পৌনে ৮টায়। শামীমকে পুলিশ নিয়ে গেছে প্রায় পৌনে ৯টার দিকে।’ 

পুলিশ আসার পরেও কেন শামীমকে হস্তান্তরে সময়ক্ষেপণ করা হয়—এ প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘পুলিশ ওখানে তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে।’ 

শামীম মোল্লাকে মারধরের সময় প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি থাকলেও প্রশাসন দায় এড়িয়ে গেছে—এ প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, ‘এখানে যেসব সাংবাদিক উপস্থিত ছিল তাদের কাছে শুনলে বোঝা যাবে আমরা কতটুকু চেষ্টা করেছি। আমি এখানে একদম ওনাকে (শামীম) আনা থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কেউ যেন তাকে প্রহার না করে। শিক্ষক হিসেবে অনেকে আমার কথা শুনেছে, আবার কেউ কেউ শোনেনি।’ 

তাহলে কি ঘটনাস্থলে মারধরকারীদের তুলনায় প্রক্টরিয়াল বডি বা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সংখ্যা কম থাকায় সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারেননি—এমন প্রশ্নে প্রক্টর বলেন, ‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা হয়েছে। আমাদের সদস্য মাত্র চারজন। একটা মবে এই কয়েকজন যথেষ্ট নয়। আবার নিরাপত্তা শাখার যারা ছিলেন তাঁরা নির্লিপ্ত ছিলেন। এইজন্য তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, তাঁরা সেখানে বলবেন কেন নির্লিপ্ত ছিলেন।’ 

অনেকটা একই কথা বলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বে অবহেলা ছিল। সে জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল টিমের যে তদন্ত প্রতিবেদন তাঁরা করেছেন, সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, (এজাহারে) অভিযুক্তদের ক্রম পরিবর্তন হয়েছে। সেটাও অত্যন্ত দুরূহ কাজ। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা যেটি মামলার জন্য জমা দিয়েছে সেখানে তিনি ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। সাময়িক ভাবে তাঁকে ট্রান্সফার করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ 

উপাচার্য আরও বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল টিমটা ইনকমপ্লিট (অসম্পূর্ণ) : এখানে প্রক্টর আর তিনজন। শামীম মোল্লাকে পুরোটা সময় নিরাপত্তা কার্যালয়ে রাখা হয়েছিল। আমাকে এই ভাবেই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এটা তদন্ত সাপেক্ষে আরও পরিষ্কার হবে।’ 

ক্যাম্পাসের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নিজের পদক্ষেপ সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘শামীম মোল্লা একজন মানুষ হিসেবে অন্যায়ের শিকার হয়েছে। প্রত্যেকটা মানুষকে সে যে দল, যে মত তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে। সে জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আমি প্রক্টরিয়াল রিপোর্ট নিয়ে যে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে তাদের চিহ্নিত করে বরখাস্ত করেছি, সনদ স্থগিত করেছি। মামলাও করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি (উপস্থিত) থাকা অবস্থায় (শামীমের ওপর) কোনো আঘাত হয়নি। এর বাইরে যেগুলো হয়েছে সেগুলো সবাই আমাকে বলেছে, কিন্তু সঠিক বলেছে কিনা সেটা তদন্ত করার পর বলা যাবে।’ 

ঘটনার সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্লিপ্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি একদম সত্যি নয়। ওখানে প্রক্টর ছিলেন, তিনি যে আদেশ দেবেন আমাদের সেটিই করার কথা। তবে তেমন কিছু হয়নি। বরং সাবেক ছাত্রকে প্রক্টরিয়াল বডি (প্রান্তিক গেট থেকে) ক্যাম্পাসে এনেছেন এবং তাঁর নিজের কক্ষে না রেখে সামনের কক্ষে রেখেছেন। তাঁদের সামনে থেকে শামীমকে নিরাপত্তা শাখার করিডরে নেওয়া হয়। এসব কিছুই প্রক্টরের উপস্থিতিতেই ঘটেছে। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ।’ 

 [তথ্য নিয়ে সহযোগিতা করেছেন জাবি সংবাদদাতা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত