Ajker Patrika

পথশিশুকে অপহরণের পর আটকে রেখে ৪ বছর নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পথশিশুকে অপহরণের পর আটকে রেখে ৪ বছর নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১ 

রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে এক পথশিশুকে অপহরণ করে গৃহকর্মী হিসেবে চার বছর আটকে রাখেন এক ব্যক্তি। এই সময়ে পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে না দিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগে অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. আব্দুল্লাহ (৩৯)। গতকাল রোববার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাব জানায়, ২০১৮ সালে রাস্তায় ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি শুরু করে ভুক্তভোগী শিশুটি। প্রতিদিনের মতো ফুল বিক্রি করতে গিয়ে একদিন আর বাসায় ফেরেনি সে। মেয়েকে না পেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান করতে থাকে। খুঁজে না পেয়ে গুলশান থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরিও করেন। ডায়েরি করার ৪ বছর পার হওয়ার পরেও কোনো খোঁজ না পেয়ে তাঁরা র‍্যাব-৩ এ একটি অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র‍্যাব-৩। 

সোমবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুলশান এলাকার আজাদ মসজিদের সামনে ফুটপাতে পথশিশুটিকে ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি করতে দেখেন আব্দুল্লাহ। সেখান থেকেই টার্গেট করে বেশ কয়েক দিন অনুসরণ করতে থাকেন শিশুটিকে। 

এরপর একদিন বিকেলে ফুল বিক্রি করার সময় ডেকে নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে একটি মার্কেটে নিয়ে যান। নতুন জামা কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনে দিয়ে অপহরণকারী তাঁর স্টিলের কারখানায় নিয়ে যান। কারখানায় নিয়ে শিশুটিকে ৭ / ৮ দিন রাখার পর স্থানীয় এক দালালের কাছে গৃহকর্মী হিসেবে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রির জন্য বায়নাপত্র করেন। 

কিন্তু কারখানায় থাকার ফলে খাবার এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তার অবস্থা দেখে দালাল শিশুটিকে নিতে অস্বীকৃতি জানান। শিশুটি অতিমাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আব্দুল্লাহ শিশুটিকে নিজ বাসায় নিয়ে যান এবং গৃহকর্মীর কাজকর্ম করাতে থাকেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ জানান, তিনি মূলত অর্থের লোভে শিশুটিকে বিক্রির আশায় অপহরণ করেছিলেন। কিন্তু বিক্রি করতে না পারায় নিজ বাসায় গৃহকর্মীর কাজে রাখেন। 

ভুক্তভোগী শিশুর জবানবন্দিতে র‍্যাব জনেতে পারে, অপহরণের পর আটক থাকাকালীন শিশুটি বাবা মার কাছে যাওয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করলেও কোনো কাজ হয়নি। আব্দুল্লাহর বাসায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করত তাদের অনেকের কাছেই শিশুটি তার বাবা মার বস্তির ঠিকানা দিয়ে সেই ঠিকানায় তাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করত। এসব দেখে গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ এবং তার স্ত্রী শিশুটিকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। যখনই সে তার বাবা মায়ের নিকট ফিরে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করত তার ওপর নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যেত বলে জানায় র‍্যাব। 

এদিকে গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত