Ajker Patrika

লতিফার লাশ নিচ্ছে না কেউ, প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিতে চান না বাবা

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
লতিফার লাশ নিচ্ছে না কেউ, প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিতে চান না বাবা

রাজধানীর তুরাগে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে লতিফা আক্তার (২৮) নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে স্বামী। ঘটনার পর থেকে ঘাতক পলাতক। এদিকে এ ঘটনায় মামলার বাদী হওয়ার জন্য কোনো স্বজনকে পাচ্ছে না পুলিশ। তাই পুলিশ বাদী হয়েই মামলা করবে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানান। 

এর আগে তুরাগের দিয়াবাড়ি বউবাজারের পাশের অন্ধকার খালি মাঠে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যার পর স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় মেট্রোরেলের ১ ও ২ নং ব্রিজের ঢাল থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ৯টায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

লতিফা কক্সবাজারের সদর উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের ইমন শিকদারের মেয়ে এবং রাজবাড়ী জেলার কাউখালী উপজেলার বালুখালী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলামের স্ত্রী। বর্তমানে রবিউল রাজধানীতে বাসাবোর রাজারবাগের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। 

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই গৃহবধূর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। কিন্তু মামলার করার জন্য কোনো স্বজন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। 

মৃত্যুর আগে প্রতিবন্ধী ছেলেকে উদ্ধারের আকুতি জানানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা ওই ছয় বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলেকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু তাকে রাখার মতো কোনো স্বজন পাচ্ছি না। লতিফার প্রথম স্বামীও (সন্তানের জনক) সন্তানটিকে নিতে চাচ্ছে না। পরে আমরা লতিফার ভাড়া বাসার পাশের বাসার কক্ষে তাঁর সন্তানকে রেখে এসেছি। ওই কক্ষের বাসিন্দারাও সন্তানটিকে রাখতে চায় না। অনেক বুঝিয়ে কিছুদিনের জন্য রেখে এসেছি।’ 

সাঈদ বলেন, ‘লতিফাকে ছেড়ে তাঁর প্রথম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে রবিউলের সঙ্গে লতিফার বিয়ে হয়। পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। তাঁকে বেড়াতে নিয়ে আসার কথা বলে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খুন করে রবিউল।’ 

ছুরিকাঘাতের পর পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে আসা সাহেন শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা স্বামী–স্ত্রী দিয়াবাড়ির বউবাজের ঘুরতে এসেছিলেন। সন্ধ্যার দিকে বউবাজারের পাশের খালি মাঠে ওই গৃহবধূকে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন রবিউল। একপর্যায়ে ওই নারী দৌড়ে মেট্রোরেল স্টেশনের পাশে গিয়ে পড়ে যান। 

তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মোটরসাইকেল নিয়ে আসার পথে ওই নারীকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেই। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’ 

লতিফা আক্তার মৃত্যুর আগে আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার স্বামী মাদকাসক্ত ও জুয়া খেলত। তাই সংসার ঠিকমতো চালাতে পারত না। সংসারে কোনো খরচ দিত না। এই কারণে আমি তার সাথে থাকি না। তার সাথে না থাকার কারণেই সে আমায় মেরে ফেলার জন্য ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে গেছে।’ 

লতিফা আক্তার এ প্রতিবেদকের সামনে পুলিশকে বলেন, ‘বাসায় আমার প্রতিবন্ধী ছেলে ফয়সাল। আপনারা তাকে উদ্ধার করেন। না হলে ওকে মেরে ফেলবে।’ 

উত্তরার ওই হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ও নার্সরা আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ওই নারীর হাত–পা, বুক, পেট, পিঠ, গলাসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক জখম ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত