Ajker Patrika

আসামিকে মাঝপথে ছেড়ে দেয় পুলিশ, এজাহারেও কাটছাঁটের অভিযোগ

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২২, ১৭: ৩৯
আসামিকে মাঝপথে ছেড়ে দেয় পুলিশ, এজাহারেও কাটছাঁটের অভিযোগ

চট্টগ্রামে এক ব্যবসায়ীকে মারধরে করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে ধরে নিয়ে মাঝপথে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসি করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে পরে ওই যুবককে আসামি করে থানা মামলা নিলেও এজাহারে আনা হয় কাটছাঁট। ব্যবসায়ী নিজে এই অভিযোগ তুলেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

গত অক্টোবর মাসে পতেঙ্গা মডেল থানার চরপাড়া মোড় এলাকার একটি ঘটনায় এমন অভিযোগ উঠেছে সেখানকার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন (৫৭) ওই থানারই বাসিন্দা। তিনি ২০২০ সালের আগস্টে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও চারজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলার বাদী।

অভিযোগের বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে পুলিশ আগে প্রাথমিক কিছু তদন্ত কার্যক্রম চালায়। পরে সত্যতা যাচাই করে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়। ওনার (জসিম উদ্দিন) ওপর হামলার ঘটনায় দেরিতে হলেও পরে আমরা মামলা হিসেবে নিয়েছি। উনি এসব অভিযোগ এখন কেন করছেন তা বুঝতে পারছি না। ওনার কোনো সমস্যা মনে হলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন।’

পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে মাঝপথে আসামি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে ওসি নাজমুন নুর দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ওই দিন ঘটেনি। পুলিশ এ ধরনের কাজ কেন করতে যাবে?’

এর আগে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই বছর আগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাটি করার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর হুমকি পেয়ে আসছেন। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে হুমকি, মারধর ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি নিছক একটি ঘটনা নিয়ে তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়। আসলে এগুলো আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে।’

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অভিযুক্ত যুবককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত জসিম বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর বিকেলে আইপিএস কেনার উদ্দেশ্যে বাসার কাছেই এক মার্কেটে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে জাকির হোসেন নামে স্থানীয় এক যুবক নিছক একটি অজুহাত দেখিয়ে আমার শার্টের কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে মারধর করেন। এ সময় আমার পকেটে থাকা সাড়ে ৩৫ হাজার টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেন। আশপাশে থাকা দোকানিরা সে সময় আমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই মুহূর্তে আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে পুলিশ হামলাকারীকে ধরে থানায় নেওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে তোলে। সেই সঙ্গে আমাকেও অভিযোগ দায়েরের জন্য থানায় যেতে বলে। পুলিশের কথামতো তাদের গাড়িতে উঠে থানার উদ্দেশে রওনা হই। কিছু দূর যাওয়ার পর কাটগড় গার্লস হাইস্কুল মোড়ের বিপরীতে একটি নির্জন জায়গায় পুলিশের গাড়িটি থামানো হয়। গাড়ি থেকে নেমে এসআই আকাশ মাহমুদ কার সঙ্গে জানি ফোনে কথা বলেন। পরে সেখানে দুটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন অজ্ঞাত যুবক আসেন। ওদের মধ্যে কথাবার্তা হওয়ার পর তাঁরা আসামিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। পুলিশ তাঁদের কোনো বাধা দেয়নি। আমি বাধা দিলে তাঁদের একজন রড দিয়ে আমাকে আঘাত করে চলে যান। পুলিশের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তাঁরা কোনো কথা বলেননি। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে পরে থানায় যোগাযোগ করতে বলে চলে যান।

জসিম বলেন, চমেক হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরি। এরপর আমার ওপর হামলার জন্য থানায় অভিযোগ দিতে তিন দিন ধরে ঘুরেও ওসিকে পাওয়া যায়নি। ১৬ অক্টোবর দুপুরে ওসি ফোন ধরার পর আমাকে কেইপিজেডে হোটেল এন্ডওয়ার্প নামে একটি আবাসিক হোটেলে আসতে বলেন। ওনার কথামতো আমি সেখানে যাই। আমাকে দেখামাত্র তিনি আমার কোনো অভিযোগ নেবেন না বলে জানান। একপর্যায়ে আমাকে বিভিন্ন মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে গালমন্দ করেন। কোনো উপায় না পেয়ে পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের দ্বারস্থ হই। ওনারা সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের পরে ওসিকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে থানার ওসি হামলার ১৮ দিন পরে ১৯ অক্টোবর নিজেদের মনগড়া এজাহার তৈরি করে মামলা নেন।

জসিম আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন পুলিশের ফোন পেয়ে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখানে হামলার ঘটনার বিষয়ে আমার বক্তব্য উল্লেখ করে যে এজাহার দিয়েছিলাম, সেটা গ্রহণ না করে ওনাদের তৈরি এজাহারে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলেন। এর আগে থানায় ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। পুলিশের গাড়িতে করে আসামিকে তুলে নিয়ে যাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারসহ অনেক কিছুই ওই এজাহারে নেই। এ ছাড়া শাকিল নামে আরও একজনকে এই মামলায় আসামি করা হলেও পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে আসামি নিয়ে যাওয়া অজ্ঞাত সেই তিন যুবককে আসামি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে তিনি আইনি প্রতিকার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামি জামিনে রয়েছেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জাকিরকে কারাগারে ও শাকিলকে জামিন দেন আদালত। গত বুধবার আদালতে আবেদন করে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন জাকির।

সিএমপি পুলিশের বন্দর জোনের উপকমিশনার শাকিলা সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার নলেজে নাই। থাকলে তখন অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত