Ajker Patrika

মানব পাচার ও চোরাচালানের নিরাপদ রোড আমজাদ হাটের বসন্তপুর

মো. জামাল উদ্দিন, ফুলগাজী (ফেনী)
মানব পাচার ও চোরাচালানের নিরাপদ রোড আমজাদ হাটের বসন্তপুর

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা আমজাদহাট ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রাম দিয়ে মানব পাচার, চোরাচালান ব্যবসা-বাণিজ্যের অবৈধ পথ হিসেবে বিশ্বস্ত নিরাপদ রোড় হিসেবে পরিচিত। এই স্থানটি তারাকুসা বিওপি ক্যাম্প এবং খেজুরিয়া বিওপি ক্যাম্পের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। 

এই স্থান দিয়ে প্রতিনিয়ত সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সোনাগাজী, মাইজদী, চট্টগ্রাম সহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে বিনা পাসপোর্টে বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ দালাল চক্রের মাধ্যমে যাওয়া-আসা করে। মানুষজন প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার জন্য অবৈধ পথে সীমান্ত পার করে দেওয়ার বিনিময়ে প্রতিজনকে গুনতে হয় ৮ হাজার টাকা। 

গত কিছুদিন যাবৎ বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ রোডে শুধু মানব পাচার সীমাবদ্ধ নয়। গরু, মাদক, শাড়ী কাপড়, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ সহ যাবতীয় জিনিসপত্র চোরাইপথে আনা-নেওয়া করা হয়। আমজাদ হাট ইউনিয়নের ৫ / ৬ জনের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই অবৈধ পথে চোরাচালান ও মানবপাচারের মাদক ব্যবসা করে বলে সন্ধান পাওয়া যায়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক যুবক জানান, এই এলাকার বসন্তপুর জায়গাটি ভারতের একেবারে সীমান্ত এলাকা। প্রতিদিন রাত ১২টার পর থেকেই এই স্থান দিয়ে মানবপাচার থেকে শুরু করে সব কর্মকাণ্ড গঠিত হয়। প্রতি জন মানুষকে এপার থেকে ওপারে পার করতে ৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তিন হাজার টাকার লাইনম্যানকে (সোর্স) এবং পাঁচ হাজার টাকায় যে পার করে তাঁকে দিতে হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ে এলাকাবাসী কেউ মুখ খুলতে রাজি না। তারা এমন ভাবে সিন্ডিকেট উৎপেতে রেখেছে, যদি কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় তাঁদের ওপর বিভিন্ন ভাবে হামলা করে তাঁদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। 

বসন্তপুরের এক বৃদ্ধা বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি সরকারের নিকট আবেদন জানাই, আমাদের এই বসন্তপুর দিয়ে যে ভাবে চোরাচালান হচ্ছে, এটা যদি বন্ধ না করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারের দিকে পতিত হবে। এটি বন্ধের জন্য সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এলাকার মুরুব্বি। 

গত বুধবার রাত আনুমানিক ৩টার সময়, চাঁদপুরের এক ব্যক্তিকে ভারত থেকে বসন্তপুর দিয়ে বাংলাদেশের নিয়ে আসা হয়। সি এন জিতে আসার সময় উপস্থিত খেজুরিয়া ক্যাম্পের টহলরত বিজিবি সদস্যরা একটি সিএনজিকে দূর থেকে দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দিলে পাচারকারী ও আগত যাত্রীসহ ৪ জন পালিয়ে যান। বিজিবি সদস্যরা ধাওয়া করে তাঁদের ধরতে পারেননি। 

ওই ঘটনার থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন জানান, সলিমুল্লাহ প্রকাশ সলু, নবী, সোহাগ, সাইফুল, মনির সহ এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মানব পাচার, মাদক, কাপড় ভারত থেকে গরু আনা সহ বিভিন্ন চোরাচালান এর সঙ্গে তারা জড়িত বলে জানান তিনি। 

সিন্ডিকেটের সদস্য হাড়ীপুষ্করনী গ্রামের বেন্টক মিয়ার ছেলে সলিমুল্লাহ প্রকাশ সলু (৩২)। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। একজন লোক ভারতে পাচার করতে কত টাকা নেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সলিমুল্লাহ প্রকাশ সলুর বলেন, `আমরা সীমানা পার করতে প্রতি জন থেকে ১০ হাজার টাকা নেই, কেউবা ৮শ টাকা কেউ ১৫শ করে টাকা দেয়, এর বেশি কেউ দেয় না। ৮ হাজার টাকার কথা যারা বলে তাঁরা মিথ্যা কথা বলছে।' 

ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু মাদক শাড়ি আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, `আমরা কখনো মাদক আনা-নেওয়া করিনি, করোনাকালীন সময়ে ভারতে খুব কড়াকড়ি। কিন্তু তার আগে আমরা ভারত থেকে এই পথে গরু নিয়ে আসতাম। ও সময় মোটা অঙ্কের টাকা ইনকাম করা হতো। আজ প্রায় ৮ বছর এই কাজের সঙ্গে জড়িত বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে সিন্ডিকেটের অন্যান্যদের ফোন করা হলে তাঁরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে ফোন কেটে দেন। 

ফুলগাজী থানা তথ্য মতে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করার সময় চারজনকে গ্রেপ্তার করে ফুলগাজী থানার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় বিজিবি। যার মধ্যে একজন পুরুষ ও তিনজন মহিলা। 

খেজুরিয়া ক্যাম্পের বিজিবি কমান্ডার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, `এ চক্রটি এখানে অনেক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব তৎপর রয়েছি। তাদেরকে আমরা হাতেনাতে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করতেছি। গেল ৪ / ৫ দিন আগে ৬টি গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে আনার সময়, বিজিবি সদস্যরা আটক করেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ মাছ পাচার করার সময় ইলিশ মাছ আটক করে বিজিবি সদস্যরা। 

অবস্থান কঠোর থাকার পরেও তারা এই অবৈধ ব্যবসা কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাঁদের অনেকগুলো সোর্স থাকে। আর আমাদের সমস্যা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকায় যাতায়াতের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। অনেক ক্ষেত্রে কাঁদাযুক্ত কাঁচা রাস্তা, আমরা ইচ্ছা করলে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারি না। এই সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে তাঁরা এই সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যায়। আমরা আমাদের অবস্থান কঠোর ভাবে রেখেছি যে কোন সময় তারা ধরা পড়ে যাবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত