Ajker Patrika

উৎকোচের মচ্ছব, জামিন পেলেও টাকা ছাড়া মেলে না কারামুক্তি

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১৪: ২৬
উৎকোচের মচ্ছব, জামিন পেলেও টাকা ছাড়া মেলে না কারামুক্তি

চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী ও স্বজনদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে নানা অবৈধ সুবিধা দেওয়ার চর্চা আবার শুরু হয়েছে। জামিনে মুক্ত আসামি ও বন্দীদের পার্সেল জমা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, বন্দী বেচাকেনা, মোবাইল ব্যবহারসহ টাকার বিনিময়ে নানা অবৈধ সুবিধা দেওয়ার মতো অপরাধে জড়াচ্ছেন কারা কর্মকর্তা ও রক্ষীরা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই উৎকোচের ভাগ পান ঊর্ধ্বতনরাও কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশাপাশি দপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরাও এই অনিয়মে জড়িত। 

এর আগে সাবেক জেলার সোহেল রানার বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন, কারাগারের ভেতর অমিত মুহুরি হত্যা, আসামি পলায়নসহ নানা আলোচিত ঘটনার পর চট্টগ্রাম কারাগারের ভেতরে বেশ কয়েক মাস কড়াকড়ি ছিল। তবে আবার সেই আগের মতো ঢিলেঢালা অবস্থা। অনিয়মই নিয়ম হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি অনুসন্ধানে বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে। 

গত ৩ মার্চ পূর্ব মাদাবাড়ী ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হানিফের জামিন আদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। এ সময় সিটিএসবির ক্লিয়ারেন্সের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তবেই মুক্তি দেন ডেপুটি জেলার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। 

গত ১৩ এপ্রিল জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি (হাজতি নং-৮৩৫৯ / ২১) পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সবুজও ওই কর্মকর্তাকে উৎকোচ দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পান। 

একইভাবে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মো. আরমান নামে এক হাজতি (নং-৮৬৮৭ / ২১) জামিন আদেশ থাকা সত্ত্বেও উৎকোচ দিয়ে তবেই মুক্তি পেয়েছেন। 

কারাগারে থাকা বন্দীদের জন্য স্বজনদের দেওয়া কাপড়-চোপড়, শুকনো খাবার জমা রাখা হয় একটি শাখায়। সেখান থেকে পরে স্বজনদের পাঠানো পার্সেল বন্দীদের দেওয়া হয়। এ বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণে উৎকোচ নেওয়া হয়। 

এ ছাড়া চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়মানুযায়ী বন্দীরা সপ্তাহে একদিন স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন। সেই কথোপকথনের রেকর্ড কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরে পিসি কার্ড বা প্রিজনার ক্যাশ কেনার মাধ্যমেও ৫ মিনিট কথা যায়। কিন্তু প্রতি ৫ মিনিটের জন্য অসাধু কারারক্ষীরা নিচ্ছেন ৫০০ টাকা। সেখানে নিয়োজিত কারা গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও এই বাণিজ্যে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

কারা সূত্রে জানা গেছে, কারা অভ্যন্তরে সরকারি মোবাইল ফোন ব্যবহার সুযোগ থাকলেও কিছু আসামি ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার করছেন। মূলত চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মোবাইল। এই বন্দীরা আবার টাকার বিনিময়ে অন্য বন্দীদের কথা বলার সুযোগ দেন। এর মধ্যে ০১৮২৪২৮৮৮২৭ নম্বরটি কারাগারের ভেতরে চাঁদাবাজি ও হুমকি প্রদানের কাজে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছিল বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সিমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ ওয়ার্ডগুলোতে বিশেষ অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। 

একজন কারা গোয়েন্দা সদস্য বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছেনএ সময় শেখ রাসেল ওয়ার্ডের বাথরুমের ছাদ, সাংগু ওয়ার্ড ও ৩২ নম্বর সেল থেকে তিনটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, জিল্লুর ভান্ডারিসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম খোকন, বখতিয়ার, এরশাদ, আলমগীর ওরফে ডাকাত আলমগীরসহ দাগি সন্ত্রাসীদের শেখ রাসেল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডটিতে চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সোর্স এহতেশামুল হক ভোলাকেও রাখা হয়েছিল। এই ওয়ার্ডে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী শহীদুল ইসলাম খোকন অন্য বন্দীদের মোবাইলে কথা বলার সুযোগ করেন দেন। এর জন্য কারারক্ষীদের সঙ্গে যোগসাজশে বিকাশে টাকা লেনদেন করতেন তিনি। 

আরেকটি অভিনব বাণিজ্য চলে চট্টগ্রাম কারাগারে। অবস্থাপন্ন নতুন বন্দীদের ভাগাভাগি নিয়ে দর-কষাকষি চলে কারাগারের মেট ও রাইটারদের মধ্যে। ভালো ওয়ার্ডে নেওয়া ও নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে তাঁরা সেই বন্দীদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন। টাকা আদায়ের জন্য বন্দীদের নির্যাতন করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

চেকের মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিকে দলিল, দস্তাবেজ, ওকালতনামায় ডিসি অফিসের অনুমতির প্রয়োজন হয়। টাকা না দিলে কারা কর্তৃপক্ষ এর জন্য সময়ক্ষেপণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

কারা সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাবেক বেসরকারি কারা পরিদর্শক, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষও বন্দী এবং স্বজনদের অর্থের বিনিময়ে সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক একেএম ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অতীতে চট্টগ্রাম কারাগার নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে ছিল। এটা আপনারা সবাই দেখেছেন। এরপর আমরা চেষ্টা করেছি কারাগার একটা স্বচ্ছতা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নিয়ে আসতে। এ ক্ষেত্রে সফলতাও অর্জিত হয়েছে।’ 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নবনিযুক্ত জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর প্রতিদিনই কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিজিট করছি। সবকিছুর খবর নিচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে এখনো মোবাইলে কথা বলা কিংবা উৎকোচ গ্রহণসহ অন্যান্য অনিয়মের বিষয়টি চোখে পড়েনি। এ ধরনের অনিয়মে কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে আমি শক্ত হাতে দমন করব। এ বিষয়ে আরও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত