Ajker Patrika

কাজ না করে ভুয়া ভাউচার

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া) 
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২২, ১৩: ৩৯
কাজ না করে ভুয়া ভাউচার

২০২০-২১ অর্থবছরে স্কুলে কোনো মেরামতের কাজ হয়নি। কিন্তু বরাদ্দের টাকা পেতে কাজ শেষ হওয়ার কথা বলে ভুয়া ভাউচার জমা দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার পারবভবানীপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনটি ঘটেছে। শুধু এই বিদ্যালয়ই নয়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য মাইনর ক্যাটাগরি ও রুটিন মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের টাকা তুলতে উপজেলার সব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ দুষছে সরকারি নীতিমালাকে। প্রধান শিক্ষকদের ভোগান্তি কমাতে সরকারি নীতিমালার পরিবর্তনের দাবি করেছেন শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, শিক্ষকেরা বাকিতে পণ্য ক্রয় করে স্কুলের উন্নয়নকাজ করেন। এতে তাঁরা হয়রানির শিকার হন। আগে আগে টাকা পেলে কাজ করা আরও সহজ হয়। তাই নীতিমালা পরিবর্তন করে আগে টাকা দেওয়া হোক।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, শেরপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৩৮টি। এর মধ্যে পিইডিপি-৪-এর আওতায় ৫২টি স্কুলে ২ লাখ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি স্কুলে লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্লান্ট (স্লিপ) ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা করে ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯২০ টাকা, ৯১টি স্কুলে রুটিন মেরামতের জন্য মোট ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ১৩৭টি স্কুলে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১০ হাজার টাকা করে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই স্কুলগুলো শুধু স্লিপ ফান্ডের টাকা বুঝে পেয়েছে। বাকি টাকা কাজের ওপর ভিত্তি করে পাওয়ার কথা।

পিইডিপি-৪-এর নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা, যা কোনো স্কুল এখনো করতে পারেনি। অনেক স্কুল এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি। তবে সব স্কুলই কাজ শেষের ভাউচার উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছে। অফিস কর্তৃপক্ষ ভাউচার অনুমোদন করে হিসাবরক্ষণ অফিসে জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছে।

উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের বিলনোথর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমার স্কুলে স্লিপ ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও এখনো তা হাতে পাইনি। তাই বারান্দার গ্রিল তৈরি বাবদ ৭৫ হাজার ও ভবন রং করা বাবদ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করেছি। তবে পুরো টাকার কাজের ভাউচার দিয়ে দিয়েছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী কাজ শেষে টাকা নিতে হবে। আমি তিন মাস আগে ১ লাখ টাকা সুদে নিয়েছি। এ পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা সুদ পরিশোধ করেছি। এদিকে প্রকৌশল অফিস থেকেও এখনো পরিদর্শনে আসেনি কেউ। তাই বাধ্য হয়েই কাজের আগে ভাউচার দিয়েছি।’

মেরামতকাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ভাউচার জমা দেওয়া হলেও কোনো কাজই বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি শেরপুরের শুভগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েপারবভবানীপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদুল করিম বলেন, ‘আমার স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে কোনো কাজ করিনি। তবে ভাউচার জমা দিয়েছি।’

শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, ‘উপজেলার কোনো স্কুলই এখন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। তবে নিয়ম অনুযায়ী, জুনের আগেই আমরা ভাউচার জমা দিয়েছি।’

এদিকে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য স্কুল নির্বাচনেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার শালফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন এখনো দাপ্তরিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া না হলেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মেরামতের জন্য টাকা। প্রকৌশলী অফিস থেকে মেরামতের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও ভবন সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি টাকা গ্রিল নির্মাণে ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শিক্ষা অফিস থেকে স্কুলগুলোর কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তাই কোনো স্কুল পরিদর্শনও করিনি। আমাকে জানালে অবশ্যই পরিদর্শনে যাব।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ছাইফুল আলম বলেন, ‘স্কুলগুলোকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এর মধ্যেই সবাই কাজ শেষ করবে। এরপর টাকাও বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

বগুড়া জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন বলেন, অর্থবছর শেষ হওয়ায় টাকা উত্তোলন করে রাখা হয়েছে। কাজের ওপর ভিত্তি করে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত