Ajker Patrika

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু ‘বিষক্রিয়ায়’, কেয়ারটেকার চাচাকে সন্দেহ

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ২২: ৩২
নিহত স্বপ্না, মনির হোসেন এবং তাদের প্রতিবন্ধী সন্তান নাঈম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত স্বপ্না, মনির হোসেন এবং তাদের প্রতিবন্ধী সন্তান নাঈম। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজারের আবাসিক হোটেলে সন্তানসহ দম্পতির মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে খাবারে বিষক্রিয়া বলেই মনে করছে পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। এজন্য মৃত সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনের চাচাতো চাচা ও ঢাকার হাসনাবাদে মনিরের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলামকে সন্দেহ করছে পুলিশ। কারণ তিনিই রেস্তোরা থেকে খাবার এনে দিয়েছিলেন, এ ছাড়া পরিবারটি খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পরও তাদের চিকিৎসার জন্য গাফিলতি করেছেন এই তত্ত্বাবধায়ক। তাই তাকে আটক করেছে পুলিশ। মৃত মনিরের ইতালীপ্রবাসী বড়ভাই সোমবার সন্ধ্যায় এসে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রমনা থানা-পুলিশ এটি তদন্ত করছে।

রমনা থানা-পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্তে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন ও সন্দেহজনক বলে কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যে পরিস্থিতিতে মনির, স্বপ্না ও নাঈমের মৃত্যু হয়েছে, তাতে রফিকুল ইসলামের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ২৮ জুন মনির হোসেন তার ছেলের চিকিৎসার জন্য রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। উদ্দেশ্য ছিল অটিস্টিক পুত্র নাঈমকে ইস্কাটনে নিউরো বিশেষজ্ঞ দেখানো। মগবাজারের সুইট স্লীপ আবাসিক হোটেল বুক করেন রফিকুল ইসলাম। হোটেলটির ১০৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন তারা। তিনিই রাতে খাবার এনে দেন তিনজনের জন্য। রাতেই খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। শুরু হয় বমি। সকালে মনির ফোনে রফিকুলকে জানালে তিনি তার মেয়ে ও জামাতাকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে আসেন। তবে তারা পাশের আদ্বদ্বীন হাসপাতালে না নিয়ে ফার্মেসি থেকে লোক ও ওষুধ এনে খাওয়ান। এতে কোনো উপকার না হওয়ায় অবশেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুধু স্বপ্নাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের দ্রুত নেওয়ার উদ্যোগও নেয়নি রফিকুল।

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রফিকুলকে ফোন করে তার স্ত্রীর মৃত্যুর কথা জানান, রফিক তাকে জানায়নি। হার্টের রোগী, তাকে জানালে ক্ষতি হবে, এমন কথা বলেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তারপরও হাসাপাতালের লোকজন তাকে ফোন দেয়, তখন মনির ফোন ধরে জানান, তিনিও অসুস্থ। এরপর হাসপাতালের স্টাফরা হুইলচেয়ারে করে মনিরকে নিয়ে আসেন, তখন তারও প্রাণ ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। আর ছেলেটি, ১৭ বছর বয়সী নাঈম, হোটেলের কক্ষে একাকী নিথর হয়ে পড়ে ছিল। তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আদ্বদ্বীন হাসাপাতালের চিকিৎসক সেলীম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রথমে হোটেল থেকে স্ত্রীকে হাসপাতালে আনা হয়, তবে সে ছিল মৃত। এর অনেক্ষণ পর স্বামীকে আনা হয়। তার প্রথমে পালস পাওয়া গিয়েছিল, তবে পরে তাকেও বাঁচানো যায়নি। অপরদিকে, ছেলেটিও হোটেলে মারা যায়।

পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে রফিক যে কথা বলেছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের মিল পাচ্ছে না পুলিশ। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটির প্রতিটি স্তরেই রফিকুল ইসলামের ভূমিকা অস্বাভাবিক। কেন হোটেলের পাশের হাসপাতালে না নিয়ে চিকিৎসার নামে সময়ক্ষেপণ করা হলো, কেন হোটেল ম্যানেজমেন্টকে কিছু জানানো হলো না—এসব প্রশ্নে তিনি কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এমনকি মৃতদের হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও তার উপস্থিতি ছিল না।

মনির হোসেন প্রায় তিন দশক ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। ঢাকার বাড়ি, দোকান ও পরিবহন ব্যবসার দেখভাল করতেন রফিকুল ইসলাম। প্রবাস থেকে ফেরা মনিরের সঙ্গে এই সম্পদ ও হিসাব সংক্রান্ত কোনো বিরোধ ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পারিবারিক সূত্র জানায়, রফিকুল প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ ভাড়া তুলতেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে মনির সেই হিসাব চাইছিলেন।

রফিকুল ইসলাম যে খাবার এনে দিয়েছিলেন, তা এরই মধ্যে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ পরীক্ষা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, খাবারে বিষজাতীয় কিছু মেশানো হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় রফিকুলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

মনিরের বড় ভাই নুরুল আমীন এরই মধ্যে ইতালি থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেছেন, তারা থানায় মামলা করবেন।

সোমবার (৩০ জুন) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. জাকিয়া তাসনিম বলেন, মরদেহে বিষক্রিয়ার উপসর্গ রয়েছে। রক্ত ও ভিসেরা নমুনা পরীক্ষার জন্য মহাখালী পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রমনা থানার এসআই মো. জালাল উদ্দিনের করা সুরতহাল রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়, তিনটি মরদেহেই কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এরই মধ্যে নয়টি আলামত সিআইডি ও মহাখালী পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ঘটনার সময় রফিকের কার্যক্রম সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টাকায় পয়সার কোনো হিসাব গরমিল সে করেছিল কি–না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, খাবারে বিষ জাতীয় দ্রব্য মেশানো হয়েছিল, কারণ মৃতদের পাকস্তলী থেকে উদ্ধার খাবারে বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেখা গেছে। এখন এই বিষ রফিকুল মিশিয়েছিল, নাকি কারও প্ররোচনায় সে করেছে, তা খোঁজা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্বে চাকরির বাজারে কম দামি ১২ ডিগ্রি, কদর বাড়ানোর উপায় কী

তোমার অন্যায়ে জেনো এ অন্যায় হয়েছে প্রবল

পোশাক কারখানায় রাতভর নির্যাতনে ইলেকট্রিশিয়ানের মৃত্যু, সহকর্মী গ্রেপ্তার

ভাটারা থেকে নিখোঁজ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহিরা সাভার থেকে উদ্ধার

হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত রাজশাহীর ৭ বন্দীর সাজা মওকুফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত