Ajker Patrika

এক মাসে তিন ইজিবাইক চালককে হত্যা, আতঙ্ক

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১১: ৪৮
এক মাসে তিন ইজিবাইক চালককে হত্যা, আতঙ্ক

পাঁচ সদস্যের পরিবারে উপার্জনক্ষম ছিল দুজন—সিয়াম সরদার ও তার বড় ভাই। বাবা বয়স ও অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল ইজিবাইক। সেই ইজিবাইকটিই কাল হয়ে দাঁড়াল পরিবারে। ছিনতাইকারীদের লোভের শিকার হয়ে মাত্র ১৭ বছরেই প্রাণ গেল সিয়ামের। 
১৭ মে রাতে সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের গঞ্জকুমারিয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে উদ্ধার করা হয় সিয়াম সরদারের অর্ধগলিত লাশ। ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের পরে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছেন সিয়ামের বাবা আবুল কালাম।

সিয়ামের বড় ভাই রিয়াদ একই পেশায় নিয়োজিত। তাঁদের বাবা ইতিপূর্বে চাকরি করলেও বর্তমানে তিনি কর্মক্ষম নন। আর তাই রিয়াদ ও সিয়ামকেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। ছিনতাইকারীদের লুটে নেওয়া ইজিবাইকটি ছিল তাঁদের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু এক ছেলেকে হারানোর পর আরেক ছেলেকে হারাতে চান না​ সিয়ামের মা। আর তাই রিয়াদকে ইজিবাইক নিয়ে বের হতে নিষেধ করেছেন তিনি।

সিয়ামের মতো এমন ইজিবাইক ছিনতাইকারীদের টার্গেটে পড়ে মাত্র এক মাসে প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুজন। তাঁদের একজন সদর উপজেলার চর সৈয়দপুরের এবং অন্যজন রূপগঞ্জ উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। নির্মম এসব হত্যাকাণ্ড বেড়ে চলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইজিবাইকচালকদের মধ্যে।

গত ২৫ এপ্রিল সদর উপজেলার চর সৈয়দপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় ইজিবাইকচালক আপনকে (১৭)। পরদিন চর সৈয়দপুর কাঠপট্টি এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নাহিদ (২৫) নামের এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে বেরিয়ে আসে হত্যার সূত্র। একটি মেয়েকে পছন্দ নিয়ে দুই বন্ধুর বিরোধ ও ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রির পরিকল্পনা করে আসামিরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয় আপনকে। পরে তার ইজিবাইক ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

১৭ মে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি ডোবা থেকে ইজিবাইকসহ চালক কোরবান আলীর (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, নিহতের শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই তাঁর ওপর হামলা চালায়। তিনি ইজিবাইক নিয়ে ডোবায় পড়ে গেলে চক্রটি ইজিবাইক ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। পরে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ইজিবাইক ছিনতাইকারীদের কবলে পরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭ জন। এর বাইরে আহত করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা অসংখ্য। গত বছরের জুলাই মাসে এই চক্রের প্রায় ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপরে আর কোনো ইজিবাইকচালক হত্যার খবর মেলেনি। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আবারও সক্রিয় হতে শুরু করেছে চক্রটি। এক মাসের কম সময়ে তিনটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে ইজিবাইক ছিনতাই ঘিরে।  

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ইজিবাইক ছিনতাই করতে পারলে ভালো দামে বিক্রি করতে পারে অপরাধীরা। এর জন্য বিভিন্ন গ্যারাজ মালিক ও ওয়ার্কশপের দোকান প্রস্তুত থাকে। তা ছাড়া ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ছিনতাইকারীরাও এসব টার্গেট নিয়ে থাকে। এসব গ্যারাজ মালিক ও ওয়ার্কশপের তালিকা প্রস্তুত করতে উদ্যোগ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।

ইজিবাইকচালকদের হত্যার পেছনে তাদের আর্থিক অসচ্ছলতা ও ঘাতকদের মাদকাসক্তিকে দায়ী করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইজিবাইকচালকদের প্রায় সকলেই নিম্ন বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। তারা সামাজিক ও আর্থিকভাবে দুর্বল থাকে। অন্যদিকে অপরাধীরা বিভিন্ন সময় জেলে গেলেও জামিনে বেরিয়ে পুনরায় একই অপরাধ ঘটায়। ফলে ভুক্তভোগীদের চেয়ে অপরাধীরাই বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়ে। সংঘবদ্ধ এসব চক্রের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হওয়া জরুরি।’

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপরাধী জামিনে বেরিয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই আছে। কারণ, যে যেই অপরাধে জড়িত, সে সাধারণত সেই ট্র্যাকেই থাকে। কারণ, অপরাধই তার মূল পেশা। বর্তমানে ইজিবাইকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এর ফলে চালকেরা ভাড়ার জন্য নির্জন ও দূরবর্তী স্থানে ট্রিপ নিয়ে যায়। এ সময় চক্রের সদস্যরা তাদের আক্রমণ করতে পারে। মূল শহরে এ ধরনের ঘটনা কম। নির্জন এলাকাতেই বেশি ঘটে। এ ক্ষেত্রে চালকদের সতর্ক হওয়া জরুরি।’

এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছি। এর আগে গ্রেপ্তারের পর এদের কর্মকাণ্ড কমে এসেছিল। শুধু ইজিবাইক নয়, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির সঙ্গে গ্যারাজ এবং ওয়ার্কশপে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর 
পাঞ্চ করে বিক্রির অভিযোগ পাই আমরা। এসব গ্যারাজের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে এই ছিনতাইকারী ও চোর চক্রকে নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষম হব আশা করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত