Ajker Patrika

যশোরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে নাখোশ নাবিলপক্ষ, খুশি শাহীনপন্থীরা

জাহিদ হাসান, যশোর
যশোরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে নাখোশ নাবিলপক্ষ, খুশি শাহীনপন্থীরা

যশোরে সম্প্রতি সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এতে পাঁচ দিনে আড়াই শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ অভিযান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। এক পক্ষ বলছে, প্রতিপক্ষের হয়ে পুলিশ অভিযানের নামে তাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। অপর পক্ষের দাবি, পুলিশের অভিযানে প্রকৃত সন্ত্রাসীরাই ধরা পড়ছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা দুই অংশে বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্বে সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। অপর অংশের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। দলের জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন নিজ ধারায় চললেও শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে দলের সভা-সমাবেশে অংশ নেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, যশোর জেলায় গত দেড় মাসে ১৩ জন খুন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৬ ও ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন নিহত হন। একই সঙ্গে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এসব অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যশোর শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনে সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা মেহবুব রহমান ম্যানসেলসহ আড়াই শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে কাউন্সিলর মিলনকে গ্রেপ্তারের পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি জানায় যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সমর্থক সদর উপজেলা ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা। দাবি না মানা হলে কর্মবিরতিসহ লাগাতার কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। 

তবে এমপির অনুসারীদের এই ঘোষণার পর পুলিশ তাদের অভিযান আরও জোরদার করে। পুলিশ জানায়, ম্যানসেল ও মিলনের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এমনকি এমপি নাবিলের বাড়িতে হামলা মামলারও আসামি কাউন্সিলর মিলন।

এদিকে পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি শহরে মিষ্টি বিতরণ করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচিও করতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দুই পক্ষই নেতা-কর্মীদের নিয়ে শক্তির মহড়া দিয়েছে। নাবিলের সঙ্গে বিতর্কিত জনপ্রতিনিধিরা সভা-সমাবেশে অংশ নিলেও এ দিন তাঁদের দেখা যায়নি।

পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় পুলিশের অভিযান নিয়ে শহিদুল ইসলাম মিলন নানা অভিযোগ তুলে নাবিল অনুসারীদের সমালোচনা করেন। মিলন বলেন, ‘এই অভিযান অব্যাহত থাকুক। এখন শহরের মানুষ স্বস্তিতে রয়েছে।’

নাবিল অনুসারীদের কয়েক নেতার নাম উল্লেখ করে এই নেতা বলেন, ‘যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি তুলেছেন, তাঁরা দলের কেউ না। তাঁরা বিএনপি থেকে এসেছেন। এখনো তাঁদের সেই দলের রাজনীতি চর্চার অভ্যাস থেকে গেছে।’

মিলনের বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে ফেসবুক লাইভে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। আমরা সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছিলাম।

এরপর পুলিশ ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আমার বাড়ি পুলিশ দুই দিন ধরে ঘিরে রাখে, সদরের জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে যেয়ে পুলিশ হুমকি দিয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী কয়েক নেতার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতাকে হয়রানি করলেও এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কোনো অভিযান চালায়নি।’

১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যশোরের চলমান অভিযানের কারণ ব্যাখ্যা করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ইন্টেলিজেন্সের ভিত্তিতেই আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যশোরের যারা চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্ত, মাদকের গডফাদার ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাড়াশি অভিযান চলছে। কোনো জনপ্রতিনিধি কিংবা কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে এই অভিযান নয়। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত