Ajker Patrika

পশ্চিমাদের প্রস্থানে ইরাকের তেল বাণিজ্যে আধিপত্য বাড়ছে চীনা কোম্পানির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে চীনা তেল উত্তোলন কোম্পানি। ছবি: মানি কন্ট্রোল
ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে চীনা তেল উত্তোলন কোম্পানি। ছবি: মানি কন্ট্রোল

বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য ইরাক। সম্প্রতি ইরাকে নিজেদের কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে চীনের স্বশাসিত তুলনামূলক ছোট ও বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলো। যেখানে আন্তর্জাতিক বড় বড় তেল কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ইরাক থেকে নিজেদের কার্যক্রম কমিয়ে আনছে, সেখানে বিপরীত পথে হাঁটছে চীনের এই কোম্পানিগুলো।

চীনের এই কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ইরাকে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই খাতে কাজ করা চারটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, তারা ইরাকে দৈনিক উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে।

বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে লড়াই করতে থাকা ইরাকের জন্য এ বিষয়টি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে দেশটির তেল উৎপাদন খাতে চীনের বেসরকারি খাতের ক্রমাগত জায়গা করে নেওয়া উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। ইরাকের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা চীনের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি ঠেকানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, ইরাকের তেল খাতে স্বশাসিত চীনা কোম্পানিগুলোর আধিপত্য স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল জায়ান্টগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালিত ছোট ছোট চীনা তেল কোম্পানিগুলোর কাছে ইরাক এখন একটি বড় সুযোগ। পশ্চিমা বা বড় চীনা কোম্পানির জন্য যেসব প্রকল্প তুলনামূলকভাবে ছোট ও কম লাভজনক, সেগুলোতে কম খরচে এবং দ্রুতগতিতে উন্নয়ন ঘটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল ও গ্যাস খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ কম থাকায় এই বিদেশমুখী উদ্যোগ অন্য ভারী শিল্প খাতের মতোই চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাজার ও দক্ষতা ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করছে।

জিও-জাদে পেট্রোলিয়াম কর্প, ইউনাইটেড এনার্জি গ্রুপ, ঝংমান পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস গ্রুপ ও অ্যান্টন অয়েলফিল্ড সার্ভিসেস গ্রুপের মতো তুলনামূলকভাবে অখ্যাত কোম্পানিগুলো গত বছর ইরাকের তেল অনুসন্ধানের সুযোগ পেয়ে সবার নজরে আসে।

এই কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা জানান, ইরাকে বিনিয়োগের পরিবেশ আগের চেয়ে তুলনায় অনেক উন্নত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় বাগদাদ এখন একইসঙ্গে চীনা ও পশ্চিমা উভয় ধরনের কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে আগ্রহী।

২০২৯ সালের মধ্যে তেল উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দৈনিক ৬০ লাখ ব্যারেলে নিয়ে যেতে চায় ইরাক। বর্তমানে দেশটির উৎপাদনের বড় একটি অংশই আসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) পরিচালিত হাইফায়া, রুমাইলা ও ওয়েস্ট কুর্না ১-এর মতো বিশাল তেলক্ষেত্রগুলো থেকে।

এক বছর আগে তেল প্রকল্পের জন্য আগের নির্ধারিত ফি ভিত্তিক চুক্তি থেকে সরে আসে ইরাক। এ সময় লাভ ভাগাভাগি নির্ভর মডেল চালু করে দেশটির সরকার। এক্সনমোবিল ও শেলের মতো পশ্চিমা তেল জায়ান্টদের কার্যক্রম সীমিত হওয়ার পর প্রকল্পে গতি আনার লক্ষ্যে নেওয়া এই পদক্ষেপ চীনের স্বশাসিত বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলোর জন্য এক বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়।

এই ছোট চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় চীনা কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি চটপটে ও অভিযোজনযোগ্য। আবার পশ্চিমা অনেক বিনিয়োগকারীর তুলনায় তারা ঝুঁকি নিতে অনেক বেশি আগ্রহী।

ইরাকের রাষ্ট্রীয় বসরা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা আলি আব্দুলআমির জানান, চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক অর্থায়ন প্রস্তাব করে, তুলনামূলক সস্তা চীনা শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে খরচ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি পেতে কম লাভেও কাজ করতে রাজি থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘চীনা কোম্পানিরা দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ, সময়সীমা মেনে চলে এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জপূর্ণ এলাকাতেও কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। পশ্চিমা কোম্পানির তুলনায় তাদের সঙ্গে কাজ করা অনেক সহজ ও কম জটিল।’

চীনা কোম্পানিগুলো নির্বাহীরা জানান, পশ্চিমা কোম্পানির যেখানে একটি তেলক্ষেত্র উন্নয়নে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে, সেখানে চীনের ছোট কোম্পানিগুলো ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারে।

জিও-জাদে পেট্রোলিয়াম-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ডাই শিয়াওপিং বলেন, ‘চীনের স্বশাসিত কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনাগত খরচ পশ্চিমা কোম্পানির তুলনায় অনেক কম এবং তারা রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে।’

তিনি আরও জানান, এই কোম্পানিগুলোর কারণে ইরাকে একটি বড় তেলক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক একটি কূপ খননের গড় খরচ গত এক দশকে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন তা প্রায় ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে।

ইরাকের জন্য এই চীনা কোম্পানির সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও উচ্চমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু আপস করতে হচ্ছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন ইরাকি বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের মে মাসে চীনা কোম্পানি জিও-জেডের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম দক্ষিণ বসরার টুবা তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন ও একটি ২ লাখ ব্যারেল দৈনিক ক্ষমতাসম্পন্ন রিফাইনারি নির্মাণে বিনিয়োগের চুক্তি করে। জিও-জেড কোম্পানির সিইও ডাই শিয়াওপিং জানান, প্রায় ৮৪৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা টুবা ক্ষেত্রের উৎপাদন ৪০ হাজার ব্যারেল দৈনিক করা হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় একটি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স ও দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে বলে জানান ডাই।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছোট চীনা প্রতিষ্ঠান ঝেনহুয়া অয়েল ২০০৮ সালে সিএনপিসির সঙ্গে যৌথভাবে ৩ বিলিয়ন ডলারের আহদাব তেলক্ষেত্র উন্নয়নে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ওই প্রকল্পটি ছিল ইরাকে প্রথম বড় বিদেশি বিনিয়োগ। এখন ঝেনহুয়া ২০৩০ সালের মধ্যে এর উৎপাদন দ্বিগুণ করে ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল দৈনিক করার লক্ষ্য নিয়েছে।

চীনা কোম্পানি ঝংমান পেট্রোলিয়াম চলতি বছরের জুনে ঘোষণা দেয়, ২০২৪ সালে পাওয়া মধ্য ইউফ্রেটিস ও পূর্ব বাগদাদ উত্তর ব্লকের উন্নয়নে তারা ৪৮১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।

তবে, এই সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলোর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এতে ইরাকের উচ্চতর প্রযুক্তি সংযোজন ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাধা তৈরি হতে পারে। বসরা অয়েলের সাবেক অপরিশোধিত তেল বিভাগের প্রধান মুওয়াফাক আব্বাস বলেন, ‘চীনা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও কারিগরি মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারা প্রায়ই চীনা কর্মীদের ওপর নির্ভর করে এবং ইরাকি কর্মীদের নিম্ন বেতনের পদে সীমাবদ্ধ রাখে।’

তবে কিছু পশ্চিমা কোম্পানি আবার ইরাকে ফিরছে। ২০২৩ সালে ফরাসি কোম্পানি টোটালএনার্জি ২৭ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ঘোষণা করেছে। আর ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বিপি কিরকুকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলে চারটি তেলক্ষেত্র পুনর্গঠনে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে এনবিআরের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের হেল্পডেস্ক থেকে আগামী শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত