Ajker Patrika

ক্রিপ্টোকারেন্সি রিজার্ভ নিয়ে ট্রাম্পের বৈঠক, নীতি ও নিরাপত্তা চান ব্যবসায়ীরা

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস ক্রিপ্টো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝে)। ছবি: এএফপি
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস ক্রিপ্টো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝে)। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানিয়ে গতকাল শুক্রবার একটি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সম্মেলনে তিনি সরকারের মালিকানাধীন ডিজিটাল সম্পদের মজুত তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এই রিসার্ভ তৈরির ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতি ও নিরাপত্তা চান ব্যবসায়ীরা।

ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব ক্রিপ্টো ব্যবসায় ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক উইটকফকে আমন্ত্রণ জানান। এই সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির সিইও মাইকেল সেলর, কয়েনবেসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ব্রায়ান আর্মস্ট্রং, বিনিয়োগকারী ক্যামেরন ও টাইলার উইংকলেভস এবং উদ্যোক্তা ডেভিড বেইলি।

সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত রিজার্ভ গড়ে তোলা। এই রিজার্ভে বিটকয়েনসহ অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ সংগ্রহ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই আদেশে বলা হয়, সরকারের কাছে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মজুত থাকবে।

এই আদেশ অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে ‘বাজেট-নিরপেক্ষ কৌশল’ তৈরি করা হয়, যার মাধ্যমে অতিরিক্ত বিটকয়েন সংগ্রহ করা হবে এবং তা করদাতাদের ওপর কোনো অতিরিক্ত খরচের চাপ পড়বে না। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চাই না করদাতাদের ওপর কোনো অতিরিক্ত খরচের চাপ আসুক।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে হোয়াইট হাউসের ক্রিপ্টোকারেন্সি উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকস বলেন, ফেডারেল সরকারের মালিকানাধীন বিটকয়েন দিয়ে রিজার্ভটির মূলধন তৈরি করা হবে, যা ফৌজদারি বা দেওয়ানি সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।

সাংবাদিকদের স্যাকস বলেন, বিটকয়েন রিজার্ভ প্রতিষ্ঠা আগেই করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করা হবে না এবং ক্রিপ্টো বিনিয়োগ থেকে গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে বাজারসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি পরিকল্পনাটি দেখে হতাশ হয়েছেন, যাদের প্রত্যাশা ছিল নতুন টোকেন কেনার। এর ফলে বিটকয়েনের মূল্য ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৮৬ হাজার ৩৯৪ ডলারে পৌঁছেছে।

এক্সোডাস নামক বিটকয়েন ওয়ালেট ডেভেলপার কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জে পি রিচার্ডসন বলেন, ‘এই (স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ) বিষয়টি আমাদের অনেকের জন্য সবচেয়ে বড় বিতর্কের কারণ হতে যাচ্ছে।’ তিনি ট্রাম্পের দ্বারা প্রস্তাবিত অন্যান্য কয়েনের মালিক হলেও তিনি মনে করেন যে, এই কয়েনগুলো স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়। ক্রিপ্টো এখনো একটি অপেক্ষাকৃত নবীন শিল্প এবং অন্যান্য কয়েন ছোট এবং একেবারেই আলাদাভাবে কাজ করে, যা আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এদিকে ট্রাম্প ও নির্বাহী সদস্যদের প্রশংসা করেছেন সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তারা। কিছু শিল্পনেতা বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে যেখানে তাঁরা নিরাপত্তা এবং গ্রাহক সুরক্ষা সমস্যার কারণে আক্রমণের শিকার ছিলেন, এখন তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আলোচনা দেখতে পাচ্ছেন।

ওয়েভ ডিজিটাল অ্যাসেটসের সহপ্রতিষ্ঠাতা লেস বোর্সাই বলেন, ‘প্রথমবারের মতো শিল্পনেতারা মনে করছেন যে, তাঁরা একটি সহযোগিতামূলক আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।’

ট্রাম্প ক্রিপ্টো-শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী এবং তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের একপ্রকার পথপ্রদর্শক মনে করছি। তিনি আরও বলেন, ‘এই দিন থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেই নিয়ম মেনে চলবে, যা প্রতিটি বিটকয়েন ক্রেতা জানে, “কখনোই তোমার বিটকয়েন বিক্রি কোরো না”।’

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, সরকার কখনোই তার নিজস্ব বিটকয়েন বিক্রি করবে না।

অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ‘আমরা ডলারকে বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে রাখব এবং স্থিতিশীল কয়েন ব্যবহার করব।’

ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এক্সইআরপি প্রযুক্তি কোম্পানির সিইও ব্র্যাড গার্লিংহাউস বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির জগৎ শুধু বিটকয়েনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর মধ্যে এক্সইআরপি অন্তর্ভুক্ত।

এ ছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা বলেছেন, তাঁরা এমন একটি প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আশাবাদী, যা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে একটি মূলধারার সম্পদ হিসেবে দেখছে এবং সরল ও স্পষ্ট নিয়মকানুন প্রণয়নের জন্যও আশাবাদী।

ট্রাম্পের পরিবার ইতিমধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি মিম কয়েন চালু করেছে এবং ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্স নামক ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মের শেয়ারও রয়েছে। তবে তার সহযোগীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো পরিচালনা বন্ধ করেছেন। নৈতিক আইনজীবীরা ট্রাম্পের উদ্যোগগুলো পর্যালোচনা করেছেন।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভ্যাট রিফান্ড এখন থেকে অনলাইনে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়, আগারগাঁও, ঢাকা। ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়, আগারগাঁও, ঢাকা। ফাইল ছবি

ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফেরত বা ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

এনবিআর জানায়, করদাতারা এখন থেকে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ডের আবেদন দাখিল, যাচাই-বাছাই ও অনুমোদন সম্পন্ন করে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে রিফান্ডের অর্থ পেতে পারবেন। এ জন্য অনলাইন ভ্যাট রিফান্ড মডিউল চালু করা হয়েছে।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেমের (আইভাস) সঙ্গে অর্থ বিভাগের আইবাস প্লাস প্লাস (iBAS‍+‍+) সিস্টেমের আন্তসংযোগ স্থাপন করা হবে। এতে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে রিফান্ডের অর্থ সরাসরি করদাতার নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা হবে।

এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন শেখ বলেন, অনলাইন ভ্যাট রিফান্ড মডিউলের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের লক্ষ্যে সব কার্যক্রম ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে।

অনলাইন রিফান্ড প্রক্রিয়া

নতুন মডিউলের মাধ্যমে করদাতারা অনলাইনে মূসক রিটার্ন দাখিলের সময় রিফান্ডের আবেদন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেট আবেদন যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ স্থানান্তর করবে।

এতে রিফান্ডের আবেদন বা চেক গ্রহণের জন্য করদাতাকে আর ভ্যাট অফিসে যেতে হবে না। ফলে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এরই মধ্যে অনিষ্পন্ন রিফান্ড আবেদনকারীদের নতুন মডিউলে মূসক-৯.১ ফরমের মাধ্যমে পুনরায় অনলাইনে আবেদন দাখিল করতে হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ভ্যাট কমিশনারেট পর্যায়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে। করদাতারা প্রয়োজনে স্থানীয় কমিশনারেটে যোগাযোগ করে অনলাইন রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পর্কে সহায়তা নিতে পারবেন।

গত আগস্টে এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট রিটার্ন প্রক্রিয়া পুরোপুরি অটোমেশনে চলে যাবে। কাগজে রিটার্ন নেওয়া হবে না।

যখন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কাঁচামাল বা সেবা কেনে, তখন ইনপুট ভ্যাট দেয়। আবার সেই পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে গ্রাহকের কাছ থেকে আউটপুট ভ্যাট নেয়। যদি ইনপুট ভ্যাটের পরিমাণ আউটপুট ভ্যাটের চেয়ে বেশি হয়, তখন অতিরিক্ত ভ্যাট রিফান্ড হিসেবে দাবি করতে পারে। তবে এত দিন এই ভ্যাট রিফান্ড না পাওয়ার অভিযোগ করতেন ব্যবসায়ীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ভ্যাট রিফান্ডের দাবিও তুলতেন তাঁরা।

ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফেরত বা ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ()। গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বছরের ব্যবধানে কলমানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

এক বছরের ব্যবধানে (অক্টোবর থেকে অক্টোবর) দেশের ব্যাংকগুলোর স্বল্পকালীন (কলমানি) ঋণ বিপুল হারে বেড়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কলমানি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ বা ৬৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে এক দিনের জন্য ওভারনাইট ধার বেড়েছে ৪৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা আর আন্তব্যাংক রেপোতে ধার বেড়েছে ৫৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে কলমানিতে এক দিন থেকে এক বছরের কম সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো ধার করেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮০ হাজার ২৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কলমানিতে ধার বেড়েছে ৬৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক দিনের জন্য ওভারনাইটে ধার ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, যা তার আগের বছরের অক্টোবরে ছিল ৭২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে ওভারনাইট ধার বেড়েছে ৪৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পলিসি রেট (নীতি সুদহার) বাড়ার প্রভাব কলমানি মার্কেটে পড়েছে। এখন ঋণের খরচ বেড়েছে। অনেক ব্যাংক নগদ টাকার চাপ সামলাতে চড়া সুদে ঋণ করে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অক্টোবরে ২ থেকে ১৪ দিনের জন্য শর্ট নোটিশে ধারের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। একইভাবে ১৫ দিন থেকে এক বছরের কম সময়ের জন্য টার্ম কল ঋণ গত অক্টোবরে ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৩৯৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট রয়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। তারল্যসংকটের মোকাবিলা করতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে চড়া সুদেও টাকা ধার নিচ্ছে। কারণ বাজারে খুব বেশি তারল্য নেই। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও রেপোর নিলাম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো খুব বেশি টাকা ধার করতে পারছে। সব মিলিয়ে কলমানি বাজারে চড়া সুদে যেসব ব্যাংক টাকা ধার নিয়েছে তারা ধার পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কলমানিতে সুদহার বেশি হলেও নিরুপায় হয়ে কলমানিতে লেনদেন করে অস্বস্তিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে কলমানির মধ্যে ওভারনাইটের গড় সুদহার (ডব্লিইএআর) ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, শর্ট নোটিশের গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং টার্ম কলে সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর আন্তব্যাংক রেপোতে সুদের গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে আন্তব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা। সে হিসাবে আন্তব্যাংক লেনদেন বেড়েছে ৫৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এখন কিছু ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। তবে অন্য ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তারাই ধার নিচ্ছে। এখন যেসব ব্যাংকের ধার প্রয়োজন, তাদের বেশির ভাগেরই পর্যাপ্ত জামানত নেই। তারা কলমানির ধারের টাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ডলারের দর বেড়েছে, এতে টাকার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে কিছু ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো তারল্যসুবিধা নিচ্ছে, স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করতে কলমানিতে ধার করছে। চাহিদা বাড়লে ধার বাড়ে, আবার চাহিদা কমলে ধার কমে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএমএফ-বিএনপি বৈঠক

সংস্কার, স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতায় গুরুত্ব

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার ও নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে বৈঠক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধিদল। ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার ও নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে বৈঠক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধিদল। ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল

বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্য পূরণে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতা অপরিহার্য বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঢাকা সফররত মিশন প্রতিনিধিদল। তারা আরও বলেছে, রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য আনতে করনীতিকে উৎপাদনমুখী করা এবং সামাজিক খাতে বরাদ্দের কার্যকারিতা বাড়ানো এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

গতকাল রোববার মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিউর নেতৃত্বাধীন আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়। বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার এবং সংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকটি ছিল ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সংলাপের সুযোগ। এতে আলোচনা হয় আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির মূল্যায়ন মিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো, রাজস্ব সংগ্রহ, করনীতি এবং সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা দিক নিয়ে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হরমোনাইজেশন, ভ্যাট ও করছাড় হ্রাসে নতুন টেকনিক্যাল সহায়তা, করপোরেট করকাঠামোর সংস্কার, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ।

তাই বিএনপিও বৈঠকে আইএমএফ মিশনের প্রস্তাব ও মনোভাবের সঙ্গে সায় জানিয়েছে। বিএনপি প্রতিনিধিদল জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে, দেশের টেকসই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে আর্থিক খাত, করনীতি এবং সামাজিক খাতে সমন্বিত সংস্কার অপরিহার্য। তারা বলছেন, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ আর্থিক প্রশাসন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি স্থায়ী করা সম্ভব নয়। এ সময় দলের পক্ষ থেকে করকাঠামো সহজীকরণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের করসুবিধা পুনর্বিবেচনা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করার প্রস্তাবও উঠে আসে। দল জানিয়েছে, নির্বাচিত হলে তারা দেশ ও জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে আরও বেগবান করবে।

আইএমএফ প্রতিনিধিদল বিএনপির উপস্থাপিত নীতি-দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কার প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে। তারা জানিয়েছে, স্বচ্ছ ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক সংলাপ ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উভয় পক্ষই আশা প্রকাশ করেছে, এ সংলাপ বাংলাদেশের রাজস্ব কাঠামো, সামাজিক খাত এবং অর্থনৈতিক নীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করবে—যেখানে থাকবে সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন

প্রাথমিক লাইসেন্স পেল সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

  • বোর্ড চেয়ারম্যান হলেন নাজমা মোবারেক।
  • সদস্য থাকছেন আরও ৬ জন।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রাথমিক লাইসেন্স পেল সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাথমিক লাইসেন্স লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পেল সংকটে থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে গঠিত হওয়া ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। একই সঙ্গে ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। এর মধ্য দিয়ে দেশের আর্থিক খাতে নতুন প্রজন্মের আরও একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বোর্ড সভায় ব্যাংকটির নামে এলওআই অনুমোদনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং উপস্থিত ছিলেন অন্য সদস্যরা।

সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে প্রস্তাবিত ব্যাংকের অনুকূলে এলওআই ও লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, যা বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এখন যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজিএসসি) থেকে ব্যাংকের নাম অনুমোদন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠালে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হবে।

নতুন ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে নাজমা মোবারেক ছাড়াও সদস্য হিসেবে থাকছেন অর্থসচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব মো. কামাল উদ্দিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহা. রাশিদুল আমিন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিভাগের যুগ্ম সচিব শেখ ফরিদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন গঠিত ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ হতে পারে সর্বোচ্চ ৬ মাস থেকে ১ বছর। এই সময়কালে বর্তমান পাঁচটি ব্যাংকের প্রশাসকেরা তাঁদের অ্যাসেট ও দায়দেনা যাচাই-বাছাই করবেন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারের অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেবে এবং ব্যাংকটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি সরকারের পক্ষ থেকে এবং ১৫ হাজার কোটি টাকা আমানতকারীদের শেয়ার হিসেবে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত