Ajker Patrika

টাকার জন্য ঘুরছেন আড়াই লাখ গ্রাহক

  • ১,৬০০ কোটি টাকা পাওনা সারা দেশের গ্রাহকের।
  • রংপুর বিভাগের ৩০ হাজার গ্রাহক বিমার টাকা পাচ্ছেন না।
  • কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও কিনছে না কেউ।
শিপুল ইসলাম, রংপুর
টাকার জন্য ঘুরছেন আড়াই লাখ গ্রাহক

রংপুরের মাহিগঞ্জ পূর্ব খাসবাগ এলাকার মো. আলম মিয়া পেশায় মুদিদোকানি। যে আয় হতো, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলত। তবে সঞ্চয় থাকত না। নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ১৫ বছরে আগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সে ১২ বছর মেয়াদি বিমা করেন। তিন বছর আগে বিমার মেয়াদ শেষ হলেও টাকা পাননি তিনি। ৫৩ বছর বয়সী আলম এখন টাকার জন্য রংপুর-ঢাকা ঘুরছেন।

শুধু আলম নন, তাঁর মতো রংপুর বিভাগের ৩০ হাজার গ্রাহকের প্রায় ১২১ কোটি টাকা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিমার টাকার জন্য তাঁরা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ঘুরছেন। ওই ৩০ হাজার গ্রাহকসহ সারা দেশে বর্তমানে কোম্পানিটির ২ লাখ ৪৩ হাজার গ্রাহকের বিমার মেয়াদ পূর্তির ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের রংপুর বিভাগীয় অফিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাদের বীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে বিমা কোম্পানিটির দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা সম্পত্তি বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তা কেউ কিনতে সাড়া দেননি। তাই গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। শুধু রংপুর নয়, সারা দেশে ২ লাখ ৪৩ হাজার গ্রাহকের ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাওনা আছে।

কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ১২ বছর কোম্পানি লোপাট হয়েছে। ফলে গ্রাহকের বিমা দাবি দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি কিছুদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তার পর থেকে ২০০ কোটি টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়েছি, আস্তে আস্তে পরিশোধ করব।’

রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০০ সালে ইসলামি মনোভাবাপন্ন লোকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর জামায়াতপন্থী ও বিএনপিপন্থী পরিচালনা পর্ষদকে হটিয়ে প্রতিষ্ঠান দখলে নেয় আওয়ামীপন্থীরা। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের অধীনে প্রতিষ্ঠানটিতে লুটপাট চলে। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সালমান এফ রহমান প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি দখলে নেন। এরপর এর অবস্থা আরও করুণ হয়ে যায়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মো. ফখরুল ইসলাম। বর্তমানে আর্থিক সংকটের কারণে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না কোম্পানিটি। তবে দুই বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ করবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে গত সোমবার বিকেলে কথা হয় মুদিদোকানি মো. আলমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে দোকান করে খেতাম। এখন বয়স হয়েছে, কিছু করতে পারি না। বৃদ্ধ বয়সে যাতে ভালো করে চলতে পারি, তাই বিমা করেছিলাম। কষ্ট করে না খেয়ে ১০ হাজার করে টাকা দিতাম। কিন্তু ১২ বছর শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। তখন থেকে টাকার জন্য ঘুরছি। টাকা দিচ্ছে না। আজ বলল, আরও এক বছর সময় লাগবে। তত দিন বাঁচব কি না আল্লাহ জানে।’

বিমা কোম্পানিটির রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র বলেছে, এই বিভাগে দুই লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে তাদের। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রংপুরের ৮ জেলার ২৯ হাজার ৫৯৬ জন গ্রাহকের বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিমার বিপরীতে তাঁরা ১২০ কোটি ৯৭ লাখ ১১ হাজার ৪১৩ টাকা পাবেন। বিমা খাতের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকদের বিমার দাবি করা টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে গ্রাহকদের ঘোরাচ্ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁরা বারবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন কার্যালয়ে যোগাযোগ করে কেবল আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিই পাচ্ছেন, টাকা আর পাচ্ছেন না। গ্রাহকদের কেউ কেউ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।

২০২২ সালে ১২ বছর মেয়াদি বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার রাশেদা বেগমের। তিনিও তিন বছর ঘুরে আজ পর্যন্ত টাকা পাননি। সোমবার সেই টাকার খোঁজে ছেলে রাশেদুজ্জামানকে নিয়ে বিমা কোম্পানিটির বিভাগীয় কার্যালয়ে গেলে ঢাকায় যাওয়ার সুপারিশপত্র হাতে ধরিয়ে দেন কর্মকর্তারা। রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘মা অনেক কষ্ট করে এখানে টাকা জমিয়েছে। জমানো টাকা তুলে যাতে কোনো কিছু করতে পারে। কিন্তু তিন বছর ধরে টাকা দিচ্ছে না। শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, টাকা পাব। কিন্তু কবে পাব, তা বলে না। কিছুদিন আগে জমি বিক্রি করে টাকা দিতে চেয়েছিল। এখন ঢাকায় যেতে বলছে। আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।’

নগরীর রঘুর বাজার এলাকার প্রতিবন্ধী মোরশেদ আলম ১০ বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সে টাকা জমিয়েছেন। মুনাফা তো দূরের কথা, এখন মূলধনটাও পাচ্ছেন না তিনি। মোরশেদ আলম বলেন, ‘২০২৩ সালে আমার বিমার মেয়াদ শেষ হইছে। দুই বছর ধরি ঘুরাচ্ছে, কিন্তু আমার টাকা দিচ্ছে না। শুধু বলে, তোমার টাকা মার যাবে না। ব্যাংক দেউলিয়া হয়, বিমা দেউলিয়া হয় না। আমার কষ্টের টাকাটা কি পাব?’

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের রংপুর বিভাগীয় অফিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাদের বীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকে যে ডিপোজিট, এফডিআর ছিল, সেগুলো বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেনি। জমি কেনাবেচাসহ নানা দুর্নীতি করেছেন আগের মালিকেরা। সেই দুর্নীতির ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। গ্রাহকদের চাপ বাড়ায় আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি। মালিকপক্ষ বলেছে, তারা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, টাকা পায়নি। কারও টাকা মার যাবে না। সময় লাগবে দুই বছর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএমএফের পর্যবেক্ষণ: স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সংকুচিত।
  • এই হস্তক্ষেপ আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় বাধা।
  • পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে স্বায়ত্তশাসনকেই অন্যতম শর্তের ইঙ্গিত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আইএমএফের পর্যবেক্ষণ: স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। ঢাকায় সফররত সংস্থাটির সদস্যরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের পর্যবেক্ষণে, ব্যাংক লাইসেন্স বিতরণ থেকে শুরু করে খেলাপি ঋণকে ‘নীতি-সুবিধা’র আড়ালে বৈধ করা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছায়া স্পষ্ট, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি ও গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে আইএমএফ মিশনের সদস্যরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাস্তব পরিস্থিতি।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন তোলে। তাদের মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া এবং নিয়মের ফাঁকে খেলাপি ঋণ বৈধ করার প্রবণতাকেই আইএমএফ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখছে।

আইএমএফ প্রতিনিধিরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপরিহার্য। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা এখন প্রায় নামমাত্র হয়ে পড়েছে। ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা ও নীতিগত স্বচ্ছতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।

তাঁরা সতর্ক করেছেন, ব্যাংক খাতের এ কাঠামোগত দুর্বলতা ভবিষ্যতে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিনিধিদল ইঙ্গিত দিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারকে তারা চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।

বৈঠকে আইএমএফ সদস্যরা অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, সেটি এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটিতে। অথচ এত দিন সরকারি পরিসংখ্যানে এটি দেখানো হতো মাত্র ২ লাখ কোটি টাকার মতো। সুদের হার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখার নীতিকে তাঁরা ‘অবৈধ অর্থ পাচারে প্রণোদনা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রতিনিধিদল জানায়, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু গোষ্ঠী নাম-বেনামে ঋণ নিয়ে সেই অর্থ ডলার ক্রয়ে ব্যবহার করে বিদেশে পাচার করেছে। ফলে ২০২১ সালের মহামারিকালে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নেমে এসেছে ২০ বিলিয়নের ঘরে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, কিছু দুর্বল ব্যাংক কোনো কার্যকর তদারকি ছাড়াই প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এ অবস্থায় আইএমএফ ব্যাংক খাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় কঠোর জামানত ব্যবস্থা ও স্বচ্ছ তদারকি কাঠামো প্রবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, আইএমএফ মিশনের নিয়মিত পরিদর্শন চলছে। তারা মূলত ঋণ কর্মসূচির শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি যাচাই করছে। কিছু ইস্যুতে তাদের উদ্বেগ থাকলেও সার্বিকভাবে তারা অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুচরায় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পেঁয়াজ বাছাই করছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পেঁয়াজ বাছাই করছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কয়েক দিন চড়া থাকার পর রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমেছে। তবে পাইকারি বাজারে দেখা গেছে ওঠানামা। সকালে কিছুটা বেড়েছে, বিকেলে আবার নেমেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বিক্রেতা ও ব্যাপারীরা দোলাচলে আছেন। সরকারের আমদানির ঘোষণা এবং নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমার আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। ফলে কেউ মজুত পেঁয়াজ দ্রুত বিক্রি করতে চাইছেন, আবার কেউ আশা করছেন দাম বাড়বে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের আগোরায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১১৫ টাকায়, পাশের কাঁচাবাজারে দাম ছিল ১১৫-১২০ টাকার মধ্যে। আগের দিন এসব বাজারে দাম ছিল ১২০-১২৫ টাকা।

তবে কোনো কোনো বাজারে ১১০ টাকায়ও পেঁয়াজ মিলছে। মুগদা বাজারের বিক্রেতা কাউসার বলেন, ‘গত রোববার পাইকারিতে ৯৫ টাকায় কিনেছি। পরিবহন খরচ, কুলি খরচ, নষ্টের ঝুঁকি ও সামান্য মুনাফা যোগ করে ১১০ টাকায় বিক্রি করছি।’

শ্যামবাজারে সকালে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১০৫, মাঝারি মানের ১০২ এবং ছোট পেঁয়াজ ৯৮-১০০ টাকায়। তবে দুপুরের পর দাম কমে যথাক্রমে ১০০-৯৮ এবং ৯৬-৯৭ টাকায় নেমেছে। আগের দিন এই বাজারে দাম ছিল ৯৭-৯৮, ৯৫-৯৬ এবং ৯২-৯৩ টাকা।

রাজধানীর প্রায় সব বাজারে নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাতাসহ এসব পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, খেতের পেঁয়াজ ঘন হয়ে গেলে কৃষকেরা কিছু তুলে ফেলেন, যাতে বাকি গাছগুলো দ্রুত বড় হয় এবং কৃষক কিছু আয়ও পান। ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা এখন বেশি করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আনছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯১৪ টনের ক্রয়াদেশ ইসির

কেপিএম সরবরাহ করবে ব্যালট ছাপার কাগজ

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) থেকে ৯১৪ টন কাগজ কিনছে নির্বাচন কমিশন। কেপিএমে উৎপাদিত হচ্ছে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাগজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) থেকে ৯১৪ টন কাগজ কিনছে নির্বাচন কমিশন। কেপিএমে উৎপাদিত হচ্ছে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাগজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপার জন্য নির্বাচন কমিশন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) থেকে ৯১৪ দশমিক ০০৯ টন কাগজ কিনছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে ১৭৮ দশমিক ০০৯ টন কাগজ, অবশিষ্ট ৭৩৬ টন ধাপে ধাপে উৎপাদন করে ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ্ গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য রঙিন (সবুজ, গোলাপি, এজুরলেইড) ও বাদামি সালফেট কাগজের মোট ৯১৪ টন ব্যালট ছাপার কাগজের অর্ডার এসেছে। ব্যালট ছাপার জন্য এসব বিশেষ কাগজের মান, ঘনত্ব ও টেক্সচার নিয়ে মিলের প্রযুক্তিবিদেরা ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট মান নিশ্চিত করেছেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস (বিএসও), বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও এখন পর্যন্ত প্রায় ২,৮৯৪ টন কাগজের অর্ডার পেয়েছে কেপিএম, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আমরা ৯২৩ টন কাগজ সরবরাহ করেছি।’

কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মিলটির বার্ষিক কাগজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩,৫০০ টন, যার সম্ভাব্য বাজারদর ৪০-৪৫ কোটি টাকা। ৯ নভেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১,০৯৩ টন কাগজ এবং উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

কাপ্তাইয়ের এই কর্ণফুলী পেপার মিলস দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ১৯৫৩ সালে স্থাপিত এ মিলটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি পরীক্ষার উত্তরপত্র ছাপানোসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রয়োজনে কাগজ সরবরাহ করে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যন্ত্রপাতি সংস্কার, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়নের ফলে মিলটির উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক স্থিতিশীল হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নগদে ক্যাডেট কলেজের ভর্তি আবেদন ফি চার্জ ফ্রি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সব ক্যাডেট কলেজে ভর্তি আবেদন ফি সহজেই দেওয়া যাচ্ছে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে। বরাবরের মতো এবারও এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি খরচ প্রয়োজন হবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি ছেলেদের ও তিনটি মেয়েদের জন্য। ইতিমধ্যে এসব ক্যাডেট কলেজের ভর্তি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সব ক্যাডেট কলেজে যেকোনো আবেদনকারী নগদের মাধ্যমে ভর্তি আবেদন ফি দিতে পারবে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। তা ছাড়া নগদের এই ভর্তি ফির চার্জবিহীন পেমেন্ট সুবিধার ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ভর্তিপ্রক্রিয়া এখন আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে।

আবেদনকারী বা অভিভাবকেরা ক্যাডেট কলেজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট

অথবা https://cadetcollegeadmission.army.mil.bd/ -এ গিয়ে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন

করে ফি পরিশোধ করতে পারবে।

‘Apply Now/Sign Up’-এ ক্লিক করে নাম, মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড, ই-মেইল অ্যাড্রেস, জন্মতারিখসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর ‘User ID’ ও ‘Password’ দিয়ে লগইন করে ‘Payment’ অপশন থেকে ‘Nagad’ নির্বাচন করে দুই হাজার টাকা আবেদন ফি তাৎক্ষণিক পরিশোধ করা যাবে। নগদ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এই ফি প্রদানে কোনো সার্ভিস চার্জ বা ট্রানজেকশন ফি প্রযোজ্য হবে না। পেমেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন হলে আবেদনকারীর মোবাইলে সঙ্গে সঙ্গে একটি এসএমএস নিশ্চিতকরণ বার্তা পাঠানো হবে।

ক্যাডেট কলেজ ভর্তি ফি সম্পূর্ণ চার্জমুক্ত করার বিষয়ে নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মোহাম্মদ শাহীন সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা নগদের মাধ্যমে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি ফি প্রদান সম্পূর্ণ চার্জমুক্ত করেছি, যাতে সারা দেশের যেকোনো স্থান থেকে অভিভাবকেরা সহজে, দ্রুত ও সবচেয়ে কম খরচে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারে। শিক্ষাসংক্রান্ত যেকোনো ডিজিটাল পেমেন্ট আরও সহজ করতে নগদ বরাবরই কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখবে।’

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের মাধ্যমে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি ও টিউশন ফি দিচ্ছে। এই সুবিধা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য পেমেন্ট সলিউশন হিসেবে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত