Ajker Patrika

জাহাজভাঙা শিল্প: পাকিস্তান-তুরস্কের অগ্রগতিতে চাপে ভারত, শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২৩
চট্টগ্রামে একটি জাহাজ ভাঙতে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনসের সৌজন্যে
চট্টগ্রামে একটি জাহাজ ভাঙতে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনসের সৌজন্যে

শিপব্রেকিং বা জাহাজ ভাঙা শিল্পে দুই শীর্ষস্থানীয় দেশ বাংলাদেশ ও ভারত। কিন্তু পাকিস্তান ও তুরস্কের মতো দেশগুলোও ছোট পরিসরে এই খাতে কাজ শুরু করে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এতে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। তুরস্ক ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো ক্রমশ পরিত্যক্ত জাহাজগুলোর শেষ গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙার কাজ তুলনামূলক কমলেও দেশ এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

জাহাজ ভাঙা শিল্পের পর্যবেক্ষক এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে ভাঙার জন্য যে পরিমাণ জাহাজ আনা হয়েছিল, তার সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক কম। একই পরিস্থিতি বাংলাদেশেও। বিপরীতে, তুরস্ক ও পাকিস্তানে জাহাজ ভাঙার সংখ্যা বেড়েছে।

শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারতে ১৬৬টি জাহাজ ভাঙা হয়েছিল। ২০২৪ সালে তা কমে ১২৪-এ দাঁড়ায়। একইভাবে, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ১৭৩টি জাহাজ ভাঙা হলেও ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩২টিতে।

অন্যদিকে, তুরস্কে ২০২৩ সালে ৫০টি জাহাজ ভাঙা হলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ টিতে। পাকিস্তানের সংখ্যাও বেড়েছে, ২০২৩ সালে দেশটি মাত্র ১৫টি জাহাজ ভাঙলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে।

তবে এই শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, ভারত ও বাংলাদেশ মূলত বড় আকারের জাহাজ ভাঙার কাজে বিশেষ দক্ষ। আর অন্যান্য দেশগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

পুরোনো জাহাজ কিনে ভাঙার কাজ করা গ্লোবাল মার্কেটিং সিস্টেমসের ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি কিরণ থোরাট বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের বড় আকারের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা রয়েছে, যা তুরস্কের নেই। লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ (জাহাজ ভাঙার পর যে ওজন দাঁড়ায়) অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে, এরপর ভারত ও তুরস্কের অবস্থান।’

কিরণ থোরাট আরও বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ তুরস্কের কাছে বাজার হারাচ্ছে না। শিপ রিসাইক্লিং ব্যবসায় মূলত লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটি জাহাজ ভাঙার প্রকৃত পরিমাণ নির্দেশ করে। তুরস্কে পুনঃ প্রক্রিয়াকৃত জাহাজের সংখ্যা বেশি হলেও এগুলো বেশির ভাগই ছোট এবং কম ওজনের জাহাজ।’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে থোরাট বলেন, ‘বর্তমানে নয়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি ভারতে আরও বেশি জাহাজ আসার সুযোগ তৈরি করতে পারে।’

শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ভাঙা মোট লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজের প্রায় ৮০ শতাংশই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের (নগণ্য সংখ্যক) উপকূলে ভাঙা হয়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৪০৯টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে, যার মধ্যে ২৫৫টি দক্ষিণ এশিয়ার ইয়ার্ডে গিয়েছে। শিপব্রেকিং শিল্পে এখনো ব্যবসায়ীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ এবং ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে।

২০২৪ সালে ‘ডাম্পারস লিস্ট’ অর্থাৎ জাহাজ বাতিলের তালিকায় থাকা শীর্ষ দেশ চীন। দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, প্রায় ৫০টি জাহাজ বিক্রি করেছে। এটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন চীন তার নিজস্ব ড্রাই ডক সুবিধা থাকার পরও বর্জ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। উল্লেখ্য, চীনে ‘বিচিং’ প্রক্রিয়া অর্থাৎ, পুরোনো জাহাজ সমুদ্র উপকূলে ফেলে রাখা নিষিদ্ধ।

এদিকে, ভারতের গুজরাটের আলাঙ্গে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ডের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। চলতি মাসের শুরুতে সেখানে ৪৯ হাজার মেট্রিক টনের একটি বিশাল ফ্লোটিং প্রোডাকশন স্টোরেজ অ্যান্ড অফশোর ভেসেল ‘টাকুন্টাহ’ আনা হয়েছে। এটি স্বস্তির বার্তা নিয়ে এলেও, আলাঙ্গের দীর্ঘদিনের শিপব্রেকিং ব্যবসায়ী মুকেশ প্যাটেলের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

মুকেশ বলেন, ‘এটি আলাঙ্গে আসা সবচেয়ে বড় ফ্লোটিং প্রোডাকশন স্টোরেজ অ্যান্ড অফশোর ভেসেল। এটি আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। আমরা যখন আমাদের মোট সক্ষমতার ৫০ শতাংশেরও কম ব্যবহার করছি, ঠিক এমন এক সময়ে এই ভেসেলটি এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে আলাঙ্গের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।’

১৯৯২ সাল থেকে শিপব্রেকিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্যাটেল জানান, ২০১২ সালে সর্বোচ্চ ৪১৫টি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংকট তৈরি হলেও, ভারতীয় শিপব্রেকাররা এর সুবিধা নিতে পারেনি। খারাপ সরকারি নীতিই আলাঙ্গের বর্তমান সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। আগে আমাদের প্লটে একসঙ্গে ৮-১০টি জাহাজ থাকত, এখন সেই সংখ্যা কমে মাত্র ৩-৪ টিতে নেমে এসেছে। আমরা কৃতজ্ঞ যে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছি, অন্যথায় অনেক শিপব্রেকারই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।’ প্রসঙ্গত, প্যাটেল ২০২০ সালে ভারতের পুরোনো বিমানবাহী রণতরি ‘বিরাট’ ভাঙার কাজ করেছেন।

দিনকে দিন আলাঙ্গের ব্যবসা কমছে। ভারতের চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৮২টি জাহাজ ভাঙার জন্য এসেছে। গুজরাট মেরিটাইম বোর্ডের (জিএমবি) তথ্য অনুসারে, এই সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ে আসা ৯৭টি জাহাজের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম।

২০১১-১২ অর্থবছরে আলাঙ্গের জাহাজভাঙা শিল্প সর্বোচ্চ জাহাজ ভাঙার রেকর্ড গড়েছিল। সেই সময়ে ৪১৫টি জাহাজ, যার মোট ওজন ছিল সাড়ে ৩৮ লাখ টন—ভাঙার জন্য এসেছিল। এরপর থেকেই শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কর্মদক্ষতা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।

গত কয়েক বছরে পর্যাপ্ত জাহাজ আকর্ষণ করতে না পারায় শিপ-ব্রেকার হরেশ পারমার তিন বছর আগে তাঁর শিপব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ করে দেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি ব্যবসা পুনরায় চালু করার চেষ্টা করেও কিন্তু ব্যর্থ হন। তিনি বলেন, ‘আমি জানুয়ারিতে আমার ইয়ার্ড চালু করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে নোঙর করা একটি জাহাজ কেনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেটি বেশি মূল্যে পাকিস্তানে চলে যায়।’

পারমার আরও বলেন, ‘আলাঙ্গে শিপব্রেকিং কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এখানে থাকা ১৫৩টি শিপব্রেকিং প্লটের মধ্যে মাত্র ২০-২৫টি প্লটে জাহাজ ভাঙার কাজ চলছে। বাকিগুলো খালি পড়ে আছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিপ-ব্রেকাররা আমাদের তুলনায় পুরোনো জাহাজ বেশি দামে কিনতে পারছেন। আমাদের সরকারি নীতির কারণে, ভাঙা জাহাজ থেকে পাওয়া স্টিল দিয়ে সরাসরি টিএমটি বার তৈরি করা যায় না। প্রথমে তা গলিয়ে বিলেট তৈরি করতে হয়, তারপর তা থেকে টিএমটি বার বানাতে হয়। এতে প্রতি টনে আমাদের উৎপাদন খরচ ৫০০০-৬০০০ রুপি বেশি পড়ে। তুলনামূলকভাবে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ভাঙা জাহাজের স্টিল থেকে সরাসরি টিএমটি বার তৈরি করার অনুমতি আছে, ফলে তারা বেশি দামে পুরোনো জাহাজ কিনতে সক্ষম হচ্ছে।’

পারমার আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, লোহিত সাগর অঞ্চলে ইসরায়েল-সংক্রান্ত উত্তেজনার কারণে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে শিপিং কোম্পানিগুলো পুরোনো জাহাজগুলো ভাঙার জন্য পাঠানোর পরিবর্তে সেগুলো দিয়েই পণ্য পরিবহন চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাজারে পুরোনো জাহাজের সরবরাহ কমে গেছে।’

আলাঙ্গের শিপব্রেকাররা আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সুযোগ ভারত নিতে পারেনি। তারা বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ সংকটের কারণে ভারত লাভবান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে, আরও বেশি পুরোনো জাহাজ আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশেই চলে যাচ্ছে।’

বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিলের (বিআইএমসিও) সভাপতি নিকোলাস শুজ সম্প্রতি দ্য হিন্দু বিজনেসলাইনকে জানিয়েছেন, হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য সেফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস কার্যকর হতে যাচ্ছে এবং সব রিসাইক্লিং ইয়ার্ডকে এর শর্ত মেনে চলতে হবে। এই পরিবর্তন বৈশ্বিক শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।

তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু বিজনেসলাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ওষুধশিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএপিআইয়ের মতবিনিময় সভা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএপিআইয়ের মতবিনিময় সভা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের ওষুধশিল্প দ্রুত সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে নতুন প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে বাড়তি প্রতিযোগিতা, নীতিগত অনিশ্চয়তা, সুদের চাপ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বল্পতা শিল্পটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। গবেষণা-উন্নয়ন, উৎপাদন সম্প্রসারণ ও মূলধন সংগ্রহে পুঁজিবাজার হতে পারে বড় সহায়তা। তাই নীতিগত স্থিতিশীলতা, কর প্রণোদনা ও স্বচ্ছ বাজারকাঠামো নিশ্চিত করা জরুরি।

আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএপিআইয়ের মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও বিএপিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মুক্তাদিরের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা জানান, দেশের ওষুধশিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে ২৫৭টি কার্যকর ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ ১৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। জিডিপিতে ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের অবদান ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

বিএপিআই সভাপতি এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মুক্তাদির বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সরবরাহ, নীতিগত স্থিতিশীলতা ও করকাঠামোর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা জরুরি। বেসরকারি খাতে ঋণগ্রহণ ও রপ্তানি আয় কমছে, যা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আব্দুল মুক্তাদির বলেন, নীতিমালা ঘন ঘন পরিবর্তন করলে বিনিয়োগকারীর আস্থা নষ্ট হয়। পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির সমান করহার তালিকাভুক্তিকে নিরুৎসাহিত করে। পাবলিক কোম্পানির জন্য কর সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ মানে সম্পদের তারল্য বাড়ানো, যা ব্যাংক আমানতের তুলনায় বেশি সুবিধাজনক।

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারকে কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রবৃদ্ধিমুখী করতে রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে। দেশের দীর্ঘমেয়াদি মূলধন জোগানে পুঁজিবাজার হতে পারে অন্যতম উৎস।

মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ডিএসইতে বর্তমানে ৩৪টি ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত। স্থানীয়ভাবে ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। মূল বোর্ড ছাড়াও এসএমই এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) বিভিন্ন আকারের প্রতিষ্ঠান দ্রুত লিস্টিং করতে পারবে, যা ব্যাংকনির্ভরতা কমাতে সহায়তা করবে।

ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের এমডি ও বিএপিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স ও লিস্টিং সুবিধা নিতে পারছে না। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে কর সুবিধা, বিভিন্ন সম্মাননা, ব্র্যান্ড মর্যাদা ও ব্যবসায়িক অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। এই সুবিধা শিল্প খাতকে শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত করবে।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ওষুধশিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাভুক্তি হলে প্রবৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ভালো উদ্যোক্তারা বাজারে না এলে দুর্বল প্রতিষ্ঠান সুযোগ নেবে।

ডিএসই পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, অর্জিত মুনাফা কাজে লাগানোর কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ টেকসই নির্ধারণ করে। বড় কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজার আরও শক্তিশালী হবে।

ডিএসইর আরেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিশ্বের বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজ নিজ দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। তালিকাভুক্তি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আস্থা বাড়ায়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও এটি একটি বড় সুযোগ।

রেনাটা পিএলসির এমডি ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, তালিকাভুক্তি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায়। স্বচ্ছ আর্থিক তথ্য পাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাংলাদেশ ল্যাম্পস পিএলসির এমডি ও সিইও সিমিন রহমান বলেন, উচ্চ সুদ ও মুদ্রার অবমূল্যায়নে ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনুকূলে এলে লিস্টিং বিবেচনা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অ্যাগ্রোকেমিক্যাল খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বাধা কমায় নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজার সচেতনভাবে কাজ করলে নন-লিস্টেড অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হতে আগ্রহ দেখাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ

চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) সেপ্টেম্বর মাসে বাড়লেও অক্টোবরে এসে আবারও কমেছে দেশের মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবে সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ; সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। মূলত খাদ্যপণ্যের দাম কমায় অক্টোবরে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এখন বেশি।

আজ বুধবার মাসিক ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) মূল্যস্ফীতির এসব তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সিপিআইয়ের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৪ সালের অক্টোবরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, একই পণ্য গত অক্টোবরে কিনতে হয়েছে ১০৮ টাকা ১৭ পয়সায়।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল গড় মূল্যস্ফীতিকে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা। তবে মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকায় এই অর্থবছরের জন্য এ লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিপিআইয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৭ দশকি ০৮ শতাংশ হয়েছে; যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যদিও এক বছর আগে একই সময়ে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও এ সময় দেশের খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ; যা সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছিল ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

সর্বশেষ এ মাসে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হয়েছে। অক্টোবরে শহরে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এ সময় গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, কিন্তু একই সময়ে শহরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ; যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল উল্টো। ওই মাসে শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল।

অক্টোবরে গ্রাম এলাকায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল। একই সময়ে শহরের নাগরিকদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের ৭৫ লাখ গ্রাহকের আমানত কী নিরাপদ, যা জানালেন গভর্নর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২১
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

সংকটাপন্ন পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো পরিচালনা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক। তাঁদের কাজ হবে ব্যবসা পরিচালনা, আইটি নিরাপত্তা, মানবসম্পদ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ ও শাখার দায়িত্ব বণ্টন। মার্জারের পুরো প্রক্রিয়া শেষে নতুন ব্যাংকের নামে নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। ব্যাংক অকার্যকর হলেও আগের নামেই এলসি, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরী, মো. কবির আহাম্মদসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসিসহ সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে। পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে চাই। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে, তাই আমানতকারীদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও যাঁদের প্রয়োজন আছে, তাঁরাই শুধু অর্থ উত্তোলন করবেন। অযথা ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য ভিড় করবেন না।’

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর জানান, বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আমানতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগির একটি নির্দেশনা জারি করবে। ইসলামি ব্যাংক তার টাকার জন্য মুনাফা পাবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব সরকার নিলেও বেসরকারি নিয়মেই চলবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান বেতনকাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাবেন।

গভর্নর আরও বলেন, পাঁচ ইসলামি ব্যাংক মিলেই দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামি ব্যাংক হবে। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা; যা বর্তমানে দেশের যেকোনো ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।

শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনযায়ী সব কোম্পানির মালিককে লভ্যাংশের পাশাপাশি ক্ষতির ভাগও নিতে হয়। কিন্তু আমরা এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জরিমানা করছি না। শুধু শেয়ারমূল্যগুলো শূন্য বিবেচনা করছি। অন্য দেশে হলে তাদের থেকে জরিমানা আদায় করা হতো। এখন ব্যাংকগুলোর নেট অ্যাসেট ভ্যালু ঋণাত্বক ৩৫০ টাকা।’

গভর্নর আহসান মনসুর জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বলেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা ১০০ শতাংশ টাকা তুলতে পারবেন। বড় অঙ্কের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে। এর বিস্তারিত পরে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

তবে তিনি সবাইকে উদ্বেগে না পড়ে শুধু প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ তোলার অনুরোধ জানান।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না—জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে। এটা সরকারের জন্য সহায়ক হবে।

আহসান মনসুর এস আলম ও নাসা গ্রুপের শেয়ারের বিষয়ে জানান, শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আদালতের রায় যখন হবে, তখন সেটা কার্যকর করা হবে। আদালতের রায় মেনে শেয়ারের অর্থ ব্যাংকের মূলধনে যোগ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে কারখানা চালু করল সিকা বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে সিকা বাংলাদেশের ফ্যাক্টরির উদ্বোধন করা হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে সিকা বাংলাদেশের ফ্যাক্টরির উদ্বোধন করা হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি সিকা বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন কারখানা চালু হলো নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে (এমআইইজেড)।

গত সোমবার (৩ নভেম্বর) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সুইস রাষ্ট্রদূত রেটো রেংগলি উপস্থিত ছিলেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তফা কামাল।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশেষায়িত কেমিক্যাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিকা, নির্মাণ ও মোটরগাড়িশিল্পের জন্য বন্ডিং, সিলিং, ড্যাম্পিং, রিইনফোর্সিং এবং প্রোটেকশনের জন্য বিভিন্ন সিস্টেম, পণ্য উদ্ভাবন ও উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। শতাধিক দেশে সিকার সাবসিডিয়ারি ও ৪০০টির বেশি উৎপাদন কারখানা রয়েছে, যেখানে ৩৪ হাজারের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন।

এ সময় সিকা বাংলাদেশের প্রধান সঞ্জীবন রায় নন্দী বলেন, ‘সিকা বাংলাদেশ হলো সিকার ১০০তম সাবসিডিয়ারি। সিকা এখন বিশ্বজুড়ে সর্বত্র। আমাদের এই সফল বৈশ্বিক যাত্রায় টেকসই উন্নয়ন সব সময়ই উদ্ভাবনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। নির্মাণ খাত ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই সিকা দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং শক্তি ও উপকরণের কার্যকারিতা বাড়াতে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশের কনস্ট্রাকশন কেমিক্যালের বাজার বর্তমানে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। সিকা বাংলাদেশে তাদের এই উৎপাদন ফ্যাক্টরি স্থাপনে প্রায় ৫ দশমিক ১৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক বিনিয়োগ করেছে।’

প্রায় ৮ হাজার ৯৪ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত এই নতুন ফ্যাক্টরিতে দুটি প্রোডাকশন লাইন (লিকুইড অ্যাডমিক্সচার, অন্যান্য কংক্রিট এসেনশিয়াল এবং পাউডারভিত্তিক পণ্য) রয়েছে। এই ফ্যাক্টরির মাধ্যমে দেশের স্থানীয় বাজারে সাপ্লাই চেইন ইফিসিয়েন্সি আরও বাড়বে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য দেশজুড়ে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা ও প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও আরও বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ ছাড়া সিকা বাংলাদেশ বাজারে একটি নতুন ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাইল অ্যাডহেসিভ নিয়ে আসতে যাচ্ছে। এই ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টটি প্রচলিত মর্টারের তুলনায় অধিক দীর্ঘস্থায়ী ও বন্ডিং স্ট্রেন্থ দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত