Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /আদানির বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ বাংলাদেশের

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ০০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর সুবিধার তথ্য গোপন রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে শিল্পগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে। এক নথির ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির আওতায় পূর্ব ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার হয়। তবে ঢাকা বলছে, তারা এখন এই চুক্তি পুনরায় আলোচনা করতে চায়।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ ও দুই পক্ষের মধ্যে আদান-প্রদানকৃত চিঠিপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ছয়জন বাংলাদেশি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এই চুক্তি সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো দরপত্র ছাড়াই অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং এটি বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ চুক্তির তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের কাছে বেশ কিছু বকেয়া পায়। আদানির দাবি, তারা বাংলাদেশের কাছে কয়েক শ মিলিয়ন ডলার পাবে। তবে এই বিষয়টি দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্ষমতা এখন পর্যাপ্ত। দেশ এখন আদানি পাওয়ারের সরবরাহ ছাড়াই চলতে পারবে। তবে সব অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এখনো পুরোপুরি কার্যকর নয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। হাসিনাকে গণতন্ত্র দমন এবং অর্থনীতির অপব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচনা করা হয়। তিনি গত দুই দশকের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন।

রয়টার্স প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছে, কর রেয়াত স্থানান্তর নিয়ে একটি অতিরিক্ত বাস্তবায়ন চুক্তিও বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির সঙ্গে করা হয়েছিল। এ ছাড়া রয়টার্স বাংলাদেশ সরকার যে ২৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে সেটিও প্রথম প্রকাশ করে। পাশাপাশি আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন কৌঁসুলিরা গত নভেম্বরে আদানির বিরুদ্ধে যে ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনেছে, তা বাংলাদেশ কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে—এই বিষয়টিও রয়টার্সই প্রথম প্রকাশ করে। এই অভিযোগে গৌতম আদানি ও আদানি গ্রুপের আরও সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশে অবশ্য আদানি পাওয়ার কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেনি। রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে) সব চুক্তিগত দায়বদ্ধতা মেনে চলেছে এবং ঢাকা চুক্তি পর্যালোচনা করছে এমন কোনো ইঙ্গিত পায়নি। কর সুবিধা এবং বাংলাদেশের উত্থাপিত অন্যান্য বিষয়ে কোম্পানিটি কোনো অবস্থান প্রকাশ করেনি। তবে আদানি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।

আদানি পাওয়ারের কয়লাভিত্তিক গোড্ডা প্ল্যান্ট মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্যই নির্মিত। কোম্পানিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ চুক্তিটি ভারতের বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। ২০১৯ সালে দিল্লি প্ল্যান্টটিকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ ঘোষণা করে। এ কারণে, প্রতিষ্ঠানটি আয়কর এবং অন্যান্য করের ক্ষেত্রে প্রণোদনা পেয়ে থাকে।

আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর যে চুক্তি ও বাস্তবায়ন সমঝোতা অনুসারে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর–সংক্রান্ত কোনো অবস্থা পরিবর্তিত হলে তা দ্রুত বাংলাদেশকে জানানোর কথা ছিল। পাশাপাশি, ভারতের সরকারের দেওয়া কর রেয়াত বা অব্যাহতির সুবিধা বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক ছিল।

তবে আদানি পাওয়ার এটি করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিপিডিবি ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ২২ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে এ সুবিধা প্রদান করার অনুরোধ জানিয়েছিল। বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সুবিধা প্রদান করা হলে বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি প্রায় দশমিক ৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হতো। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গোড্ডা প্ল্যান্ট ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিল। এই হিসাবে প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের সুযোগ ছিল।

ফাওজুল কবির খান জানান, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে।

শেখ হাসিনা সরকার ২০১০ সালের নভেম্বরে একটি আইন বাতিল করে। যা তাঁর প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই কিছু জ্বালানি চুক্তি অনুমোদনের সুযোগ দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার ক্লাইমেট এনার্জি ফাইন্যান্স থিংক ট্যাংকের পরিচালক টিম বাকলি বলেন, এসব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হবে না, এই বিষয়টি অস্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, নিলাম হলে সবচেয়ে সাশ্রয়ীমূল্য নিশ্চিত হয়।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ড. ইউনূসের সরকার হাসিনার সময় স্বাক্ষরিত বড় বড় জ্বালানি চুক্তিগুলো পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল নিয়োগ করে। এদিকে, বাংলাদেশের একটি আদালত আলাদাভাবে আদানি চুক্তি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শেখ হাসিনার আমলে হওয়া দুর্নীতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র চলতি বছরের ডিসেম্বরে ১ তারিখ ড. ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আদানির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উচিত বিদ্যুৎ চুক্তিটি ‘খতিয়ে দেখা’। এই শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে হাসিনার আমলে ‘তড়িঘড়ি করে’ আদানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল।

হাসিনা ভারত চলে যাওয়ার পর থেকে আর প্রকাশ্যে দেখা দেননি। ফলে এই বিষয়ে জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ রয়টার্সকে বলেন, তিনি আদানি পাওয়ার চুক্তি সম্পর্কে অবগত নন। তবে তিনি ‘নিশ্চিত যে, কোনো দুর্নীতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি কেবল অনুমান করতে পারি যে ভারত সরকার এই চুক্তির জন্য লবিং করেছিল। যার কারণে এটি সম্পন্ন হয়েছিল।’

এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয় বা অন্যান্য ভারতীয় কর্মকর্তারাও রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

এর আগে, গত ৩১ অক্টোবর আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে পাওনা অর্থ প্রদানের বিরোধের জেরে গোড্ডা প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়। রয়টার্সের হাতে আসা ১ জুলাইয়ের এক চিঠিতে কোম্পানি জানায়, তারা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পক্ষ থেকে মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। মেয়াদ বাড়ালে বাংলাদেশ প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারত। কোম্পানি জানায়, অর্থ প্রদান না হওয়া পর্যন্ত তারা আর কোনো ছাড় দেবে না।

আদানি পাওয়ারের দাবি, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা ৯০০ মিলিয়ন ডলার। বিপিডিবি বলছে, এই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার। ডলারের অভাবে বিপিডিবি যথাযথ অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে না বলে কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান।

অক্টোবর মাসে আদানি পাওয়ারকে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পরও সরবরাহ কমানোর বিষয়টি বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ করেছে বলে জানান বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম।

বিরোধের সূত্রপাত মূলত বিদ্যুৎ শুল্কের হিসাব নির্ধারণ নিয়ে, যেখানে ২০১৭ সালের চুক্তি দুটি সূচকের গড় ধরে মূল্য নির্ধারণ করেছে। গোড্ডা থেকে বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি খরচ বাংলাদেশে সরবরাহকৃত ভারতীয় বিদ্যুতের গড় মূল্যের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি ছিল, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয়ের সারাংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারের কাছে এমন সূচক ব্যবহারের দাবি জানাচ্ছে, যা শুল্ক কমিয়ে আনবে। গত বছর এক সূচকের সংশোধনের পর এটি উত্থাপিত হয়—বলে জানায় বিপিডিবির তিন সূত্র। তবে আদানি পাওয়ার এই বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে উভয় পক্ষ শিগগিরই বৈঠকে বসবে।

চুক্তিগুলোতে সিঙ্গাপুরে এই বিষয়ে সালিস বা আলোচনা করার কথা উল্লেখ থাকলেও ফাওজুল কবির খান জানান, বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে আদালতের তদন্তের ফলাফলের ওপর। তিনি বলেন, ‘যদি প্রমাণ হয় যে ঘুষ বা অনিয়ম হয়েছে, তাহলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যদি কোনো (চুক্তি) বাতিলের প্রক্রিয়া ঘটে আমাদের সেটি অনুসরণ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকরির ১০ মাস বাকি থাকতেই পদত্যাগ করলেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মইনুল খান। ছবি: সংগৃহীত
মইনুল খান। ছবি: সংগৃহীত

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ মাস আগেই স্বেচ্ছা অবসরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) চেয়ারম্যান মইনুল খান। এ জন্য তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।

বাণিজ্যসচিব বলেন, মইনুল খান আগেই অনানুষ্ঠানিকভাবে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া তাঁর পদত্যাগপত্রে আবেদনের তারিখ উল্লেখ আছে ৩০ অক্টোবর। এর অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও সংরক্ষিত রয়েছে।

বর্তমানে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন মইনুল খান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০ অক্টোবরের সরকারি আদেশ (জিও) অনুযায়ী, তিনি ২৬ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ দিনের ছুটিতে রয়েছেন।

বিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফিসের সহকর্মীদের কাছে দোয়া চেয়ে মইনুল খান স্বেচ্ছা অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সেখানে তিনি তিন দশকের বেশি সময় সরকারের বিভিন্ন পদে থেকে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৭ পর্যন্ত আইওএসএ সনদ পেল এয়ার এ্যাস্ট্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সর্বকনিষ্ঠ এয়ারলাইন হিসেবে ২০২৪ সালে আইএটিএ অপারেশনাল সেফটি অডিট (আইওএসএ) সনদ পায় বেসরকারি এয়ারলাইন এয়ার এ্যাস্ট্রা। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) প্রণোদিত আইএটিএ অপারেশনাল সেফটি অডিট (আইওএসএ) একটি বিশ্বমানের মানদণ্ড নিরূপণী অডিট যা এয়ারলাইনসের নিরাপদ পরিচালনা নিশ্চিত করে।

এক বছর পর ২০২৫ সালের জুন মাসে এয়ারলাইনটি পুনরায় আইএটিএ অপারেশনাল সেফটি অডিট (আইওএসএ) সম্পন্ন করে ২০২৭ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত আইওএসএ রেজিস্টার্ড এয়ারলাইন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ এ বিষয়ে বলেন, ‘এয়ার এ্যাস্ট্রার ফ্লাইট অপারেশন শুরু হওয়ার আগে থেকেই আমরা যাত্রীদের একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ফ্লাইট অভিজ্ঞতা উপহার দেওয়ার লক্ষে আইএটিএ অপারেশনাল সেফটি অডিট (আইওএসএ)-এর পরিকল্পনা শুরু করি। যার অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে আইওএসস সনদ প্রাপ্তি এবং তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর আমরা পুনরায় এই অডিটটি সম্পন্ন করি। এয়ার এ্যাস্ট্রা যাত্রীদের নিরাপদ এবং নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করার জন্য সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)-এর কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী তাঁদের নিরীক্ষকের মাধ্যমে চলতি বছরের জুন মাসে এয়ার এ্যাস্ট্রার অডিট সম্পন্ন হয়। গত এক দশকে, আইওএসএ (আইওএসএ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এয়ারলাইনসের অপারেশনাল ম্যানেজমেন্ট এবং কন্ট্রোল সিস্টেমের মূল্যায়ন করার জন্য সবচেয়ে স্বীকৃত সিস্টেমে পরিণত হয়েছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রা বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা এবং ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এয়ার এ্যাস্ট্রার বহরে বর্তমানে চারটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নিরাপদ টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণের টাকায় বিদেশে পড়াশোনা: রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

রূপালী ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের পরিবারের পাঁচজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে অ্যালায়েন্ট এনার্জি সল্যুশন (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী হাসান শরীফেরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ গজ আদালতের বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ নিষেধাজ্ঞা জারির এই আদেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের পরিবারের অন্য যেসব সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাঁরা হলে—ওবায়েদ উল্লাহর স্ত্রী মর্জিনা বেগম ওরফে মুনমুন মাসুদ, ছেলে জুনায়েদ জুলকার নায়েন ভিয়ান ও জুলুন সাফওয়ান এবং মেয়ে তাসমিয়া তারাল্গুন নাওমী।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ঋণের অর্থ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে, বিশেষ করে ছেলের বিদেশে শিক্ষার খরচে ব্যবহার করেছেন। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলোতে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে নগদ অর্থ জমা, ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অজানা উৎস থেকে অর্থ গ্রহণ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমহীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করেন, যা অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেহেতু তাঁর দুই সন্তান দেশত্যাগ করেছেন, তাই তিনিসহ তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেশত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান অ্যালায়েন্ট এনার্জি সল্যুশন (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী হাসান শরীফের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত কাজী হাসানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তিনি যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে অনুসন্ধানকালে জানা গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাঁর বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে বিক্রি হয়নি, সাবেক এমপিদের ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি পাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিদেশ থেকে আমদানি করা ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য নির্দেশনা দিয়ে আজ বুধবার একটি বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের কিছু সদস্যের বিশেষ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস নির্দেশনা চায়। এর জবাবে গাড়িগুলো খালাসের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে না এবং আমদানিকারকেরা স্বাভাবিক হারে শুল্ক-কর পরিশোধ করে গাড়িগুলো খালাস করতে পারবেন বলে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে নির্দেশনা প্রদান করে এনবিআর।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ওই ৩১টি গাড়ির মোট প্রদেয় শুল্ক-করের পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। উচ্চ মূল্যের এ সকল গাড়ির একক প্রতি প্রদেয় শুল্ক-করের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা এবং একক প্রতি প্রদেয় সর্বনিম্ন শুল্ক-করের পরিমাণ ৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে সব শুল্ক-কর পরিশোধ করে ওই ৩১টি গাড়ি আমদানিকারকেরা খালাস করেননি। বিধায় কাস্টমস আইন, ২০২৩ এর ধারা ৯৪(৩) অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলামে তোলা হয়। ওই নিলামে কোনো নিলামকারী গাড়িগুলোর যৌক্তিক মূল্য বিড না করায় গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়নি। পরবর্তীতে জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অতি মূল্যবান গাড়িগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের জন্য এই বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট গাড়ির আমদানিকারক ভবিষ্যতে প্রযোজ্য সমুদয় শুল্ক ও কর পরিশোধ করে গাড়িগুলো আইনানুগ পদ্ধতিতে খালাস করতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ এবং শুল্কায়ন সংক্রান্ত আইন, বিধি ও আদেশ যথাযথভাবে পরিপালন করে তা আমদানিকারকের অনুকূলে খালাস করতে পারবে।

প্রযোজ্য শুল্ক-কর আদায়পূর্বক গাড়িগুলো ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস আমদানিকারকের অনুকূলে খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ওই গাড়িগুলো সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট ফেরত প্রদান করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত