Ajker Patrika

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট: থেমে থেমে চলছে কলকারখানা

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট: থেমে থেমে চলছে কলকারখানা

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আগের সরকারের রেখে যাওয়া বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুরোপুরি না পাল্টাতে পারলেও অন্তত কিছুটা স্বস্তির জায়গায় আনতে পেরেছেন তাঁরা। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও মনে করেন, নানা দিক সামলে তুলনামূলকভাবে একটি স্থিতিশীল অবস্থা গড়ে উঠেছে। তবে তিনি খোলাখুলি স্বীকার করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে এখনো বড় দুর্বলতার জায়গা রয়ে গেছে।

সেই দুর্বল খাতগুলোর শীর্ষে আছে শিল্প। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিল্প খাত এখনো হাঁপাচ্ছে। ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে একের পর এক কারখানা থেমে গেছে, আর যেগুলো চালু আছে, সেগুলোর উৎপাদনশক্তি অর্ধেকে ঠেকেছে। গ্যাস আর বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বড় শিল্পাঞ্চলগুলোতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে হু হু করে। তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারে—দাম বাড়ছে পণ্য ও সেবার, আর রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতার জায়গা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক পালাবদলের পর শিল্প খাত সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছে নিরাপত্তা সংকটে। আগে থেকেই ছিল গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি, তার সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিকসংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর। অনেক কারখানা এখনো চালু হয়নি, চাকরি হারিয়েছেন প্রায় এক লাখ শ্রমিক। আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেছে আরও অনেক কারখানা। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও গ্যাসের অভাব আর নিরাপত্তার শঙ্কায় শিল্প খাত এখনো নিঃশেষ ও নিশ্চুপ।

এরই মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মালিকেরা বলছেন, একটি অঞ্চলে গ্যাসের যদি কিছুটা সরবরাহ বাড়েও, অন্য জায়গায় তা কমে যায়। এই এলোমেলো বিতরণ ব্যবস্থায় কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন পরিকল্পনা ধরে রাখতে পারছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান ৩-৪ ঘণ্টা করে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে, আবার কোথাও দিনে ৮-১০ ঘণ্টাও গ্যাস না থাকায় কার্যত উৎপাদন হচ্ছে না।

ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় সব খাতেই। বিশেষত তৈরি পোশাকশিল্প, রফতানিমুখী প্লাস্টিক, সিরামিকস এবং স্টিল খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠছে। অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আগের অর্ডার হারাচ্ছে, আবার নতুন অর্ডার নিতে পারছে না, কারণ সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণের সুদহার এক লাফে ১৫ শতাংশে উঠলে শিল্পোদ্যোক্তারা পড়ে যান দ্বৈত চাপে—জ্বালানির অনিশ্চয়তার সঙ্গে যোগ হয় ঋণ পরিশোধের চাপ। কারখানা নির্মাণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য নেওয়া ঋণ সময়মতো শোধ না করায় অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রেটিং নেমে গেছে, যা বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন কর্মসংস্থানও থমকে গেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘দেরিতে হলেও এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আশাব্যঞ্জক উন্নতি হলেও—শিল্পে জ্বালানি সংকট এখনো দূর হয়নি। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার অনেক জায়গায় সংকটের মোকাবিলা করেছে, কিন্তু মূল যে চ্যালেঞ্জ—গ্যাস, ঋণের উচ্চ সুদ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—এসব এখনো পেরোনো যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত