Ajker Patrika

কৃষিপণ্যের রপ্তানি থেকে আয় আবার শতকোটির ঘরে

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২: ৩১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে পুনরায় বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের কাছাকাছি পৌঁছেছে দেশের কৃষি খাত। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।

এ নিয়ে এক দশকে তৃতীয়বারের মতো বিলিয়ন ডলারের দোরগোড়ায় পৌঁছাল কৃষিপণ্য রপ্তানি। এর আগে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ১০২ কোটি ৮০ লাখ এবং ১১৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পতনের কারণে আয় কমে আসে যথাক্রমে ৮৩ কোটি ৮০ লাখ এবং ৯৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলারে। যার থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টায় খাতটি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক ছিল ফল রপ্তানিতে নজিরবিহীন প্রবাহ, বিশেষত আমে ১৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। বিপরীতে, ভারতের হঠাৎ স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা, মানসনদের সংকট এবং পরিবহন জটিলতায় ধাক্কা খেয়েছে শুকনা খাদ্য ও মসলার চালান, যা কৃষি রপ্তানির সার্বিক গতিতে অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে তামাক পণ্য রপ্তানি থেকে। এ খাতে আয় হয়েছে ২৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শুকনা খাবার রপ্তানি, যা কমে হয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। আগের বছর এই আয় ছিল ২১ কোটি ৭১ লাখ ডলার। মসলা রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলারে, যা এক অর্থবছরে কমেছে ৩৫ লাখ ডলার।

এই দুটি খাতেই বড় একটি অংশ রপ্তানি হতো ভারতের বাজারে; বিশেষ করে স্থলবন্দর হয়ে। কিন্তু গত ১৭ মে ভারত হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর হয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার ও জুসজাতীয় পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে শুকনা খাদ্য ও মসলা রপ্তানিতে।

Untitled-2

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞার ফলে রপ্তানি ৩০ শতাংশ কমে গেছে। আগে এক দিনে পণ্য পৌঁছাত, এখন সময় লাগে ৭ থেকে ১০ দিন। খরচও বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।’

ফল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও সবজি রপ্তানি এক অর্থবছরে কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। সবজি রপ্তানি আয় ছিল ৮ কোটি ১১ লাখ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১১ কোটি ২৪ লাখ। বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সরকার আম রপ্তানিতে বিশেষ জোর দিয়েছে বলেই ফল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু পচনশীল পণ্যের পরিবহনসংকট এখনো পুরোনো জায়গাতেই রয়ে গেছে।’

প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ চর্বি রপ্তানিতে বছরজুড়ে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এ খাতে আয় হয়েছে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চা রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ, ভিনেগার ও বেভারেজ পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে পান রপ্তানি কমেছে ৩৪ শতাংশ, তেলবীজ ১৮ শতাংশ এবং চিনিজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৭ শতাংশ।

এ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদেশি মূলধারার বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের অন্যতম প্রধান বাধা হলো গ্যাপ (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস) না মানা। পোশাক খাতে যেভাবে কমপ্লায়েন্স মানতে হয়, কৃষি খাতেও একই মান বজায় রাখতে হবে। আমাদের কৃষিপণ্য এখনো মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঘিরে আবর্তিত, কিন্তু বৈশ্বিক ভোক্তা ধরে রাখতে হলে মানসনদ, সাপ্লাই চেইন ও পরিবহন কাঠামোয় বড় পরিবর্তন জরুরি।’

ইপিবি বলছে, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানিতে সামান্য ধীরগতি দেখা গেছে। এ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার, যেখানে মে মাসে ছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারতে স্থলবন্দর সংকট না থাকলে এবং কৃষিপণ্য মানোন্নয়নে কাঠামোগত সংস্কার ত্বরান্বিত হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পুনরায় নিশ্চিত করা সম্ভব।

আরো খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

বঙ্গবন্ধু জেন–জিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, হাসিনা সবচেয়ে অজনপ্রিয়: জরিপ

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত