Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে: সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআই সভাপতি

এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে: সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআই সভাপতি
সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ০৭

২০১৪ সালের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যে হরতাল ও অবরোধের মতো কোনো রাজনৈতিক বাধা আসেনি।। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘাতের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। এরই মধ্যে এক দিনের হরতাল পালিত হয়েছে। ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর তিন দিনের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চলছে।

একই সময়ে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। বর্তমান ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকেরা।

রাজনৈতিক সহিংসতায় এরই মধ্যে পুলিশসহ প্রায় ১০ জন এবং শ্রমিক অসন্তোষে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও উদ্বেগ জানিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা–বাণিজ্যের সার্বিক বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সাজ্জাদ হোসেন। 

এফবিসিসিআই সভাপতি মনে করছেন, হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি চলতে থাকলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। রাজনৈতিক সহিংসতা চলতে থাকলে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও বড় সংকটে পড়বে। 

আজকের পত্রিকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বিরোধী দলগুলো হরতাল–অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? 

মাহবুবুল আলম: ২০১৪ সালের পর থেকে দেশ হরতাল, অবরোধ-মুক্ত ছিল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক ছিল। কয়েক দিন আগেও এফবিসিসিআই সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে। 

অর্থনীতির সব সূচক বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, ২০১৩-১৪ সালের দিকে এক দিনের হরতালে দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় এখন এক দিন হরতাল হলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। আমাদের বর্তমান অর্থনীতির আকার ৪৫৭ বিলিয়ন ডলার। আমরা এখন দেশের অর্থনীতি ট্রিলিয়ন ডলারে নিতে চাই। এই অবস্থায় হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি চললে আমাদের অর্থনীতি ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বে। 

এই হরতাল ও অবরোধের কারণে আমাদের সরবরাহ চেইনও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত— রপ্তানি ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে। একদিকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যদিকে হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যও অস্থিশীল হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতে চাপে আছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে যদি রাজনৈতিক সহিংসতা চলতে থাকে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। 

আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে এখন যেই সমস্যা আছে সেটা রাজনৈতিক। এই সমস্যা নিরসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এগিয়ে আসার জন্য বলছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। এই ব্যাপারে আপনার মতামত কী? 

মাহবুবুল আলম: সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান হচ্ছে, আমরা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাই। আমরা চাই, দেশে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করুক। দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সব দলের দায়িত্ব আছে। আমি মনে করি, এখানে সরকারের দায়িত্বটা বেশি। তবে সরকারের পাশাপাশি যারা বিরোধী দলে আছে তাদেরও দায়িত্ব আছে। আমি মনে করি, দেশে রাজনৈতিক সহিষ্ণু পরিবেশ থাকা উচিত, যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত না হয়। আমার আশা, সরকার এই দিকে দৃষ্টি দেবে এবং দেশের ব্যবসায়ীদেরই ব্যবসা পরিচালনা করতে সহায়ক পরিবেশ দেবে। বিরোধী দলের উচিত, হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা। 

আজকের পত্রিকা: হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি যদি ভবিষ্যতেও চলতে থাকে তাহলে পণ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হলে রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

মাহবুবুল আলম: যেকোনো দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে বিদেশিদের কাছে ইতিবাচক ধারণা যায়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ, রপ্তানি ক্রয়াদেশ। যদি কোনো ক্রেতা মনে করে আমি পণ্য কেনার জন্য অর্ডার দিলেও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ঠিকমতো পণ্য পাব না, তাহলে তারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের এই রাজনৈতিক সহিংসতার মাঝে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই ভাবমূর্তি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। আমি আগেও বলেছি। আবারও বলছি। 

অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ও রপ্তানির চাহিদা মেটাতে আমাদের অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। যদি অবরোধ ও হরতালের মতো পরিস্থিতির কারণে বন্দর  থেকে পণ্য আনা–নেওয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে অর্থনীতি সার্বিকভাবে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দিন শেষে জিনিসের দাম বাড়বে, ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

আজকের পত্রিকা: আপনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে রাজনৈতিক কারণে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা–বাণিজ্য সচল রাখার জন্য সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলাপ করার কথা ভেবেছেন কি না?

মাহবুবুল আলম: ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ নিয়ে দুই দলের প্রতি আমাদের আহ্বান ছিল— তারা সভা–সমাবেশ করে নিজেদের বক্তব্য পেশ করবে। কিন্তু এর মধ্যে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি চলে এসেছে। আমরা এখন দেখছি, এই রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণটা কী রকম। আমরা যদি দেখি, ভবিষ্যতে আরও কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচি আসছে, তাহলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেব। 

আজকের পত্রিকা: শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নিয়ে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পোশাক খাতে শ্রমিকদের আন্দোলন চলতে থাকলে রপ্তানি ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে। শ্রমিকদের দাবি–দাওয়ার বিষয়ে আপনার মতামত কী? 

মাহবুবুল আলম: তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির চলমান আন্দোলন নিয়ে আমি বিজিএমইএর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি সুরাহা করার জন্য বিজিএমইএ শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রোববার (২৯ অক্টোবর) থেকে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সকল পক্ষ একটা যৌক্তিক সমাধানে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি, সবাই পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে একটা সমাধানে আসবে। 

আজকের পত্রিকা: মজুরি বোর্ডে তৈরি পোশাক খাতের মালিক প্রতিনিধি বর্তমান ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। যেই মজুরি বিজিএমইএ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি দিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া ও চট্টগ্রামের মতো শহরে ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব? 

মাহবুবুল আলম: আমি তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোনো হোমওয়ার্ক করিনি। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অন্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে ১০ হাজার ৪০০ টাকা বেশি না। এই অবস্থায় অবশ্যই আমি চাইব, শ্রমিকেরা যাতে তাদের ন্যায্য মজুরিটা পায়। আমার আশা, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে সব পক্ষ তাদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবে। একই সঙ্গে বর্তমানে পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ, আনুষঙ্গিক খরচ এবং ব্যাংক ঋণ— এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের ওপর আমাদের রপ্তানি নির্ভর করছে। মালিকদের স্বার্থও অক্ষুণ্ন রেখে শ্রমিকদের মজুরি যথাযথভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে এই খাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। 

আজকের পত্রিকা: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশিদের মনোভাব কী দেখছেন; বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের। 

মাহবুবুল আলম: আমরা অনেক দিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে ছিলাম। গত দুই দিনে পরিস্থিতিটা হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে গেল। আমি এখনো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে ইতিবাচক–নেতিবাচক তেমন কিছুই শুনিনি। তবে তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। এত তাড়াতাড়ি তারা প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। একটু সময় লাগবে। আমি আশা করি, বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সব দলের নেতাদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। একটা সমঝোতায় তাঁরা আসবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের শুল্ক: থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দখলে যাচ্ছে ভারতের হারানো রপ্তানি বাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে। ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ধাক্কায় ভারতের রপ্তানি খাতে দীর্ঘস্থায়ী পতন দেখা দিয়েছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২ নভেম্বর) সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের রপ্তানি খাতে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ স্বল্প-মেয়াদি পতনের ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। গত এপ্রিল মাসে প্রথমে ভারতের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আগস্টের শুরুতে ২৫ শতাংশ এবং ওই মাসের শেষে রাশিয়ার তেল কেনার ‘শাস্তি’সহ শুল্ক বাড়িয়ে মোট ৫০ শতাংশ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রভাব ছিল তাৎক্ষণিক এবং মারাত্মক। এর প্রভাবে মাত্র পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৮৮০ কোটি ডলার থেকে কমে ৫৫০ কোটি ডলারে নেমে আসে।

এই পতনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে শুল্কমুক্ত পণ্যের ওপর, যা একসময় ভারতীয় পণ্য রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল। শুল্কমুক্ত এসব পণ্যের চালান প্রায় ৪৭ শতাংশ কমেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের শুল্কমুক্ত রপ্তানি মে মাসের ৩৪০ কোটি ডলার থেকে সেপ্টেম্বরে ১৮০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্মার্টফোন এবং ওষুধ খাত। ভারতের স্মার্টফোন রপ্তানি গত বছরের (২০২৪) এপ্রিল-সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২০২৫ সালের শুরুর দিকে ১৯৭ শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ মাসে এটি ৫৮ শতাংশ কমে গেছে। মে মাসে ২২৯ কোটি ডলার থাকলেও সেপ্টেম্বরে তা ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল রপ্তানি কমেছে ১৫ দশমিক ৭। গত মে মাসে এই খাতে রপ্তানি ছিল ৭৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। কিন্তু পাঁচ মাসে কমে সেপ্টেম্বর মাসে তা হয়েছে ৬২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

শ্রম-নির্ভর বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, রাসায়নিক, কৃষিজাত খাদ্যপণ্য ও যন্ত্রপাতি—এই খাতগুলো সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ। এখানে ৩৩ শতাংশ সংকোচন দেখা গেছে— গত মে মাসের ৪৮০ কোটি ডলার থেকে সেপ্টেম্বরে ৩২০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

রত্ন ও গয়না ভারতের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। যুক্তরাষ্ট্রে এগুলোর রপ্তানি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যাওয়ায় (৫০ কোটি ২ লাখ ডলার থেকে ২০ কোটি ২৮ লাখ ডলারে নেমে এসেছে) সুরাট এবং মুম্বাইয়ের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সোলার প্যানেল রপ্তানি কমেছে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। এই খাতে চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বহাল থাকার পরও রপ্তানিতে ভারতের অবস্থান অনেক নিচে নেমে গেছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ধাতু ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি ৩৭ শতাংশ, তামা ২৫ শতাংশ এবং যন্ত্রাংশ রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ। তবে জিটিআরআই মনে করে, এই পতন মার্কিন শিল্প চাহিদার সামগ্রিক মন্দার ফল।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে, রপ্তানি হারানো ভারতের এই খাতগুলো এখন থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম দখল করে নিয়েছে।

ভারতের ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকেরা ইতিমধ্যে সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেছেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে—অর্থায়নের খরচ কমাতে সুদের সমতা বৃদ্ধি, নগদ প্রবাহের চাপ কমাতে শুল্ক প্রত্যর্পণ (শুল্ক-করের অর্থ ফেরত দেওয়া) দ্রুত করা এবং এমএসএমই (ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ) রপ্তানিকারকদের জন্য জরুরি ঋণ সুবিধা চালু করা।

জিটিআরআই সতর্ক করে বলেছে, দ্রুত নীতিগত পদক্ষেপ না নিলে, ভারত ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা খাতগুলোতেও ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং চীনের কাছে দীর্ঘমেয়াদি বাজার হারাতে পারে। জিটিআরআইয়ের চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই শুল্কগুলো কেবল মুনাফার মার্জিনকেই সংকুচিত করেনি, বরং ভারতের রপ্তানি কাঠামোর মধ্যেকার গভীর দুর্বলতাগুলোও উন্মোচিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রয়টার্সের প্রতিবেদন /আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪০
ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানি পাওয়ার কোম্পানির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ছবি: বিজনেস লাইন/দ্য হিন্দু
ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানি পাওয়ার কোম্পানির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ছবি: বিজনেস লাইন/দ্য হিন্দু

বাংলাদেশ জানিয়েছে, ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মেটাতে আন্তর্জাতিক সালিসি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বিষয়টি জানিয়েছেন। আদানি পাওয়ারও এক বিবৃতিতে একই ধরনের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বেশ কিছুদিন ধরে বকেয়া বিল নিয়ে মতবিরোধ চলছে। ২০১৭ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যে বিদ্যুৎ-সরবরাহ চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তির শর্ত নিয়েই এই বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।

আদানির এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কিছু ব্যয়ের হিসাব ও বিল তৈরির পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তাই দুই পক্ষই বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া চালু করতে রাজি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রক্রিয়া দ্রুত, মসৃণ ও উভয়ের জন্য লাভজনক সমাধান এনে দেবে।’

তবে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেছেন, আলোচনা এখনো চলছে। তিনি বলেন, ‘আলোচনা শেষ হলে প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক সালিসি প্রক্রিয়ায় যাব।’

আদানি পাওয়ার ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় এক–দশমাংশ পূরণ হয়।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গত ডিসেম্বরে অভিযোগ করেছিল, আদানি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। কারণ, গড্ডা কেন্দ্র ভারতের কাছ থেকে যে কর-ছাড় সুবিধা পেয়েছিল, তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪.৮৭ টাকা (০.১২২০ ডলার) হারে মূল্য দিয়েছে। অন্য ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে যে বিদ্যুৎ আসে, তার গড় মূল্য ইউনিটপ্রতি ছিল ৯.৫৭ টাকা।

গত সপ্তাহে আদানি পাওয়ার জানায়, বাংলাদেশের কাছ থেকে তাদের পাওনা এখন অনেক কমে এসেছে। মে মাসে যেখানে বকেয়া ছিল প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার এবং বছরের শুরুর দিকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছিল, এখন তা কমে ১৫ দিনের ট্যারিফ সমপরিমাণে নেমে এসেছে।

সংস্থাটি সোমবার আরও জানায়, ‘আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি অটুট রাখবে এবং নির্ভরযোগ্য, প্রতিযোগিতামূলক ও উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে থাকবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টিকায় বদলাবে মাছ চাষের হিসাব

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগে প্রতিবছর মাছ চাষ খাত হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এবার সেই ক্ষতি ঠেকাতে সরকার নিচ্ছে ৪৩ কোটি টাকার টিকা প্রকল্প। দেশীয় প্রজাতির মাছকে রোগমুক্ত রাখতে প্রথমবারের মতো তৈরি হবে মিঠাপানির মাছের টিকা, যা মৃত্যুহার কমাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের সফল প্রয়োগ হলে মাছ চাষ খাত নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, বাড়বে উৎপাদন, বিনিয়োগ আর রপ্তানির সুযোগ।

দেশের মিঠাপানির খামারগুলোয় প্রতিবছর অজানা ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে বিপুল পরিমাণ মাছ মারা যায়। এই ক্ষতি থেকে চাষিদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকায়। এতে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেই হতাশার পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হচ্ছে ‘মিঠাপানির মাছের মড়ক প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন’ প্রকল্প; যা দেশের মাছ চাষে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১১ জেলার ৩৩ উপজেলায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশীয় প্রজাতির টেকসই উৎপাদন ধরে রাখতে এই প্রকল্প অপরিহার্য। এটি সফল হলে শুধু উৎপাদন বাড়বে না, বরং মাছ চাষে আত্মনির্ভরতা আরও সুদৃঢ় হবে।

সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ৫৭ শতাংশ আসে মিঠাপানির খামার থেকে। চার লাখ হেক্টরের বেশি পুকুরে এই চাষ পরিচালিত হলেও সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা ও রোগনিয়ন্ত্রণের ঘাটতিতে খামারগুলো ক্রমেই ঝুঁকিতে পড়ছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর ও রাজশাহীর মতো মাছ চাষের প্রধান এলাকাগুলোয় ভাইরাস সংক্রমণে কয়েক দিনের মধ্যেই ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে নিয়মিতভাবেই।

এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যেই সরকারের এই টিকা উদ্ভাবনের উদ্যোগ। প্রথম ধাপে ৯টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি—কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া, কার্প, শিং, মাগুর, পাবদা, ট্যাংরা ও গুলশায় এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ প্রকল্পে সহযোগিতা দেবে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখে খাওয়ার এই টিকা সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই মাছ চাষে নেতৃত্ব নিতে পারে। এতে একদিকে খামারিদের আর্থিক ঝুঁকি কমবে, অন্যদিকে মাছ চাষ খাত পাবে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি ও বিনিয়োগের নতুন গতি। মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সিরাজুম মুনির বলেন, চাষিরা বিক্রির ঠিক আগমুহূর্তে অনেক সময় ৭০-৮০ শতাংশ মাছ হারান। কার্যকর টিকা প্রয়োগ করা গেলে এই মৃত্যুহার নাটকীয়ভাবে কমবে।

প্রকল্পের আওতায় আধুনিক বায়োমলিকুলার প্রযুক্তিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শনাক্ত করা, জীবাণুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এবং তাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক টিকা তৈরি করা হবে। মুখে খাওয়ার টিকা উদ্ভাবনকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার; কারণ, এটি প্রয়োগে সহজ, খরচে সাশ্রয়ী এবং মাছের ওপর কোনো শারীরিক চাপ ফেলে না।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি ও একাডেমিক খাতেও চলছে গবেষণা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ ইতিমধ্যে উদ্ভাবন করেছে ‘বায়োফ্লিম’ নামে একটি টিকা, যা এরোমোনাস হাইড্রোফিলা ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্ষত, আলসার ও পাখনা পচা রোগ প্রতিরোধে ৮৪ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ওই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বায়োফ্লিম শুধু পাঙাশ নয়; রুই, কাতলা, কই, শিংসহ অন্যান্য প্রজাতিতেও কার্যকর। এটি বাণিজ্যিক পর্যায়ে গেলে দেশীয় ফিশ হেলথ ইন্ডাস্ট্রির নতুন বাজার তৈরি হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি ও পানিসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টিকা উদ্ভাবন সফল হলে এই খাত বিদেশি বিনিয়োগের নতুন দ্বার খুলে দেবে।

২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। বাজেট কাঠামো অনুসারে প্রতি অর্থবছরে ৭ থেকে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারের প্রত্যাশা, এই প্রকল্প শুধু রোগ প্রতিরোধে নয়, বরং উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহের গান্না বাজার: মৌসুমে দিনে কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

  • চাষাবাদ ২৯৪ হেক্টর জমি।
  • প্রথম দুই দিনে বিক্রি ৯ লাখ টাকার বেশি।
  • হলুদ ও কমলা গাঁদা ফুলের চাহিদা বেশি।
  • আরও রয়েছে গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চায়না গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ঝিনাইদহ 
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৫
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে জমে উঠেছে শীত মৌসুমের ফুলের বাণিজ্য। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে জমে উঠেছে শীত মৌসুমের ফুলের বাণিজ্য। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদন কেন্দ্র ঝিনাইদহে শীত মৌসুমের ফুলের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। গত শনিবার জেলার সদর উপজেলার গান্না বাজারে সকাল ৬টায় ফুলচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত ফুল বাজারে আনেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত বিক্রি চলে, এরপর পাইকারেরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা পৌঁছে দেন।

বাজার সূত্রে জানা গেছে, শীতকালে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় দাম তুলনামূলক ভালো থাকে। বাজারের প্রথম দুই দিনে ৯ লাখ টাকার বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে। ফুলচাষিরা আশা করছেন, ভরা মৌসুমে দিনে এই বিক্রি কোটি টাকায় পৌঁছাবে।

দেশের মোট ফুলের বড় একটি অংশ ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা জোগান দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন দিবস ও বিয়ে অনুষ্ঠান উপলক্ষে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ঝিনাইদহের এ বড় পাইকারি ফুল বাজারে। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল উৎপাদিত হয় এ জেলাতেই। এখানকার হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলের মান, আকার ও রং উন্নত হওয়ায় দেশের বড় বড় পাইকারদের নজর এ জেলার ফুলের দিকে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরে জেলায় ২৯৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলে বাজার ছেয়ে গেছে। চলছে ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিদের দর-কষাকষি। ভ্যান, সাইকেল এমনকি মোটরসাইকেলে করে ফুল নিয়ে আসছেন কৃষকেরা। বাজারের প্রথম দিনে রকমভেদে একগুচ্ছ গাঁদা ফুল ৮০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও দ্বিতীয় দিন রোববারে বাজারে কমেছে ফুলের দাম। বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে। এ ছাড়া খেতে রয়েছে গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চায়না গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুল। এসব ফুলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।

গান্না ফুল বাজারের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই কমবেশি ফুল বিক্রি হয়ে থাকে এ বাজারে। তবে শীত মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেশি। প্রথম দিনে একগুচ্ছ গাঁদা ফুলের ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও দ্বিতীয় দিনে দাম কমে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় নেমেছে। চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা ৫০ পয়সা, জারবেরা ৬-৮ টাকা, গোলাপ ৩-৫ টাকা করে।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগ ফুল চাষে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। তবে কোল্ডস্টোরেজের অভাবে কৃষক ফুল সংরক্ষণ করতে পারছেন না, যা মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত