Ajker Patrika

হালাল বন্ডের বাজারে অনাস্থা

  • সম্ভাবনাময় আর্থিক পণ্য, কিন্তু মূলধারার বিনিয়োগে নেই
  • সচেতনতা বাড়াতে দরকার সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ
  • সুকুকের ধারণা ছড়িয়ে দিতে পাঠ্যক্রমেই অন্তর্ভুক্তি জরুরি
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ১৩: ৫০
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশে শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ পণ্য ‘সুকুক’ চালু হয়েছিল ইসলামি আর্থিক মূল্যবোধকে মাথায় রেখে। এটি এমন একটি পণ্য, যেখানে সুদ নেই, দুর্নীতি নেই আর ঝুঁকিও তুলনামূলক কম। অনেকে একে ‘হালাল বন্ড’ বলেও চেনেন। বিশ্বের বহু দেশে যেখানে ইতিমধ্যেই সুকুক বড় বাজার তৈরি করেছে, সেখানে একেবারেই ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। গত পাঁচ বছরে এর আকার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে করপোরেট পর্যায়ে এসেছে মাত্র ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যদিও এসব সুকুকে বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৪.৬৫ থেকে ১০.৪০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা।

সুকুক, একটি সম্ভাবনাময় আর্থিক পণ্য, দেশের মূলধারার বিনিয়োগে জায়গা পাচ্ছে না। এর পেছনে মূলত বাজারে অজ্ঞতা ও উদাসীনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং নিয়ন্ত্রকদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুকুকের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। তবে অনাস্থা, অনিয়ম ও ধারণাগত দুর্ভাবনা এই পণ্যের সম্ভাবনা থামিয়ে রেখেছে।

সুকুক হলো শরিয়াহভিত্তিক একটি বিনিয়োগ পণ্য, যেখানে সুদের পরিবর্তে প্রকৃত সম্পদে অংশীদারির ভিত্তিতে মুনাফা দেওয়া হয়। মালয়েশিয়া বা আমিরাতের মতো দেশে এটি প্রকল্পে মালিকানা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এটি মূলত প্রকল্প সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তৈরি একটি বন্ড হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটস (বিআইসিএম)-এর সহকারী অধ্যাপক এস এম কালবীন ছালিমা এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো পণ্যই জনপ্রিয় হতে পারে না। সুকুক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ জরুরি।

বিশ্বে যেখানে বন্ড মার্কেটের আকার ১৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, সেখানে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক সুকুকের বাজার রয়েছে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ বাংলাদেশে পুরো বন্ড মার্কেটের (ট্রেজারি ও করপোরেট) আকারই হচ্ছে মাত্র ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি বা ২.১৯৬ ট্রিলিয়ন টাকা। সেই তুলনায় সুকুকের অংশ এমনই নগণ্য যে পুরো বাজারে এর অবস্থান প্রায় অদৃশ্য।

সরকার ২০২০ সালে প্রথমবার সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে ‘সেভ ওয়াটার সাপ্লাই টু দ্য হোল কান্ট্রি’ প্রকল্পে ৮ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করে, যা ৫ বছর মেয়াদি এবং ৪.৬৯ শতাংশ মুনাফা প্রদান করেছে। পরবর্তী সময়ে ‘নিড বেইজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট অব গভর্নমেন্ট প্রাইমারি স্কুল’ এবং ‘আইআরআইডিপি-৩’ প্রকল্পে যথাক্রমে ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। সবচেয়ে উচ্চ মুনাফার প্রকল্প ছিল ‘সিডব্লিউএসপি সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট প্রজেক্ট’, যেখানে ১০.৪০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। তবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা এখনো ২ শতাংশের নিচে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও মূলত বাধ্যবাধকতার কারণে অংশ নিচ্ছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে করপোরেট সুকুকের যাত্রা শুরু হয় বেক্সিমকোর ‘গ্রিন সুকুক আল ইসতিসনা’র মাধ্যমে, যার মাধ্যমে তারা বাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে এবং ৯ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়। পরে বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড (বিবিএমএল) ৩০০ কোটি টাকার সুকুক ইস্যু করে, যেখানে মুনাফার হার ছিল ৮ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সুকুক ইস্যুর জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প’, যার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ১০ বছর মেয়াদি ১ হাজার কোটি টাকার ‘আইসিবি ফার্স্ট মুদারাবা সুকুক’ ইস্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডও ৫০০ কোটি টাকার সুকুক ইস্যু করতে যাচ্ছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুকুক শরিয়াহসম্মত পণ্য এবং বাংলাদেশের ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। ইসলামিক অর্থনীতির বিস্তারে এটি হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সুকুক জনপ্রিয় করতে হলে রিটেইল পর্যায়ে এটি আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানের জন্য সুদমুক্ত আয়ের আকর্ষণ থাকলেও সুকুক সম্পর্কে সঠিক বার্তা এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি। বিআইসিএমের মতে, সুকুকের ধারণা ছড়িয়ে দিতে শিক্ষা পাঠ্যক্রমেই এর অন্তর্ভুক্তি জরুরি।

সুকুকের টেকসই বিকাশে দরকার একটি স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক এবং শরিয়াহ-পরিপালন নিশ্চিতকারী নিয়ন্ত্রক কাঠামো। অতীতে পক্ষপাতদুষ্ট ইস্যুগুলোর কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাই বন্ডের বিকল্প হিসেবে সুকুককে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ‘এসআরআই’, ‘রিটেইল’, ‘ব্লু’ ও ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল’ সুকুকের মতো উদ্ভাবনী মডেল চালু করতে হবে।

সুকুক বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র প্রসঙ্গে বলা যায়, পেনশন ফান্ড, সভরেন ওয়েলথ ফান্ড, ফান্ড ম্যানেজার, কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যক্তি বিনিয়োগকারী—সবার জন্যই এটি উপযোগী। কারণ এই বিনিয়োগ শরিয়াহ সুপারভাইজারি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত, ঝুঁকিমুক্ত এবং সামাজিক কল্যাণমুখী খাতে ব্যয় হয়।

এখন প্রশ্ন একটাই—এত সম্ভাবনা, এত মুনাফা, এত শুদ্ধতা থাকার পরও কেন এই খাত আজও প্রান্তিক, অবহেলিত, অবিশ্বাসে ঢাকা? উত্তর খুঁজতে গেলে বারবার ফিরে যেতে হয় পরিচালনার স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণকাঠামোর জবাবদিহি এবং রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার জায়গাটিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনে দেশীয় কোম্পানির কাছে আধিপত্য হারাচ্ছে স্টারবাকস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের একটি অভিজাত শপিং মলে ১৯৯৯ সালে চালু হয় স্টারবাকসের প্রথম শাখা। ছবি: সংগৃহীত
বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের একটি অভিজাত শপিং মলে ১৯৯৯ সালে চালু হয় স্টারবাকসের প্রথম শাখা। ছবি: সংগৃহীত

তিন দশক আগে এশিয়ার দেশ চীনে যাত্রা শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কফি চেইন স্টারবাকস। মার্কিন এই কফি ব্র্যান্ডের আগমন চা-প্রধান চীনের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে কফি সংস্কৃতির উত্থান ঘটায় এবং দ্রুতই স্টারবাকস হয়ে ওঠে পশ্চিমা প্রভাব ও সমৃদ্ধ জীবনযাত্রার প্রতীক। এক সময় দেশটির অর্থনৈতিক উত্থানের ঢেউয়ে চড়ে স্টারবাকস গড়ে প্রতি ১৫ ঘণ্টায় একটি করে নতুন শাখা খুলতে থাকে। চীন হয়ে ওঠে মার্কিন এই কফি জায়ান্টের বৈশ্বিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।

১৯৯৯ সালে বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের একটি অভিজাত শপিং মলে চালু হয় স্টারবাকসের প্রথম শাখা। উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘গোল্ডেন লায়ন’ নাচের আয়োজন। আধুনিক এসপ্রেসো মেশিনে তৈরি কফি দিয়ে প্রথমবারের মতো ক্যাপুচিনো চেখে দেখতে ভিড় করেছিলেন চীনারা।

সেই থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চীনে এক অপ্রতিরোধ্য অবস্থান ধরে রেখেছিল এই কফি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন দশক পর এসে এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা লেগেছে স্টারবাকসের গায়েও।

গত সোমবার স্টারবাকস ঘোষণা দিয়েছে, তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশে নিজেদের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার বিক্রি করবে এক চীনা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের কাছে।

চুক্তি অনুযায়ী, বয়ু ক্যাপিটাল নামে ওই চীনা প্রতিষ্ঠানটি স্টারবাকসের ৮ হাজারেরও বেশি আউটলেটসহ খুচরা ব্যবসায় সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শেয়ার অর্জন করবে। স্টারবাকসের থাকবে ৪০ শতাংশ অংশীদারত্ব এবং নতুন এই যৌথ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্র্যান্ড ও মেধাস্বত্ব লাইসেন্স দেবে তারা।

স্টারবাকসের এক শাখায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন গাড়িশিল্পে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী সি হুয়াঝেং। তিনি সিএনএনকে বলেন, “প্রথম যখন স্টারবাকস চীনে আসে, তখন এটি নিজেকে এক ধরনের ‘অ্যাক্সেসিবল লাক্সারি’ (যে বিলাসিতা সবাই উপভোগ করতে পারে) হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু এখন এত দেশীয় কফি ব্র্যান্ড এসেছে যে ওই পরিস্থিতিই বদলে গেছে।”

এখন স্টারবাকস চীনে তীব্র দেশীয় প্রতিযোগিতা, ব্যয়-সচেতন ভোক্তা বাজার এবং নিজেদের ব্র্যান্ডকে সমর্থন দিতে আগ্রহী তরুণ প্রজন্মের কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

চীনের কফির বাজার স্টারবাকসের আগমনের সময়কার চেহারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২৬ বছর আগে যখন চীনের অর্থনীতি মাত্রই উত্থান শুরু করছিল এবং কোটি কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে প্রবেশ করছিল, তখন দেশটিতে কফি পান করার কোনো মূলধারার সংস্কৃতি ছিল না।

সেই সময় স্টারবাকস ছিল কয়েকটি মার্কিন ফুড ও বেভারেজ চেইনের মধ্যে একটি, যারা ১৯৮০-এর দশকের চীনের উন্মুক্ত নীতির পর দেশটিতে নিজেদের জায়গা করে নিতে চেষ্টা করছিল।

কিন্তু গত কয়েক বছরে চীনের বাজারে একের পর এক নতুন ব্র্যান্ডের উত্থান ঘটেছে। এই ব্র্যান্ডগুলো বেশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করতে থাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে লাকিন কফি (Luckin Coffee)। ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা এই ব্র্যান্ডটি বিক্রয় ও আউটলেট সংখ্যার দিক থেকে স্টারবাকসকে ছাড়িয়ে গেছে।

বর্তমানে চীনে লাকিনের স্টারবাকসের তুলনায় তিন গুণ বেশি দোকান রয়েছে। তাদের কফির দাম স্টারবাকসের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কফি ব্র্যান্ড এখন পা রেখেছে স্টারবাকসের ঘরের মার্কেটেও। গত জুন মাসে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম আউটলেট খোলে লাকিন কফি।

এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সময়টিতে চীনে স্টারবাকসের সাফল্যের পেছনে কারণ ছিল পশ্চিমা বিলাসপণ্যের প্রতি দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ এবং স্থানীয় বাজারের উপযোগী করে পণ্য তৈরি করার কৌশলের ওপর। যার ফলে ব্র্যান্ডটি চীনের বড় শহরের বাইরের গ্রাহকদের কাছেও জনপ্রিয়তা পায়।

বেইজিংয়ের একটি স্টারবাকস শাখায় বসে ৭০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত লিউ জিশাং বলেন, বেইজিংয়ে প্রথম স্টারবাকস যখন খুলল, সে সময় কফির স্বাদে অভ্যস্ত হতে চীনা গ্রাহকদের কিছুটা সময় লেগেছিল। এছাড়া তখন স্টারবাকসে যাওয়া মানে শুধু কফি পান নয়, ওদের সংস্কৃতিটাও অনুভব করার বিষয়টি ছিল। তখন মানুষ ভাবতে শুরু করল, এটা তো বেশ ভালো।’

তবে এখন স্টারবাকসের যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তার পেছনে চীনের ভোক্তা ব্যয়ের স্থবিরতাও বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

লিউ বলেন, চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ধনীর সংখ্যা কমছে। বাড়ি, গাড়ি আর ঋণের চাপ মানুষের খরচ করার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্টারবাকসেও।

২০২৫ অর্থবছরে চীনের দোকানগুলোতে ১ শতাংশ বিক্রি কমে যাওয়ার প্রতিবেদন পেয়েছে স্টারবাকস।

এর পাশাপাশি, স্টারবাকস এখন মিক্সু বিংচেং (Mixue Bingcheng), চা-জি (ChaGee) এবং হেইটি (HeyTea)-এর মতো চাভিত্তিক পানীয় চেইনগুলোর উত্থানের কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আউটলেট থাকা খাদ্য ও পানীয় চেইনে পরিণত হওয়া মিক্সু এখন ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকসকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাদের জনপ্রিয় পানীয় ও কফির দাম মাত্র ২ থেকে ৮ ইউয়ান (প্রায় ৩০ সেন্ট থেকে ১.২০ ডলার), যা স্টারবাকসের দামের এক-তৃতীয়াংশও নয়।

এমনকি এই বছরের শুরুতে মিক্সু শেয়ারবাজারে যাত্রা শুরু করলে স্টারবাকসের নতুন মালিক বয়ু ক্যাপিটাল তাদের সমর্থন দেয়।

অন্যদিকে জেসমিন গ্রিন মিল্ক টি কিংবা চিজ ফোমসহ আঙুর মিশ্রিত চায়ের মতো অভিনব পানীয় দিয়ে দ্রুত বদলে যাওয়া রুচির তরুণ চীনা ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারছে প্রতিদ্বন্দ্বী চা-জি ও হেইটি ব্র্যান্ড।

তবু স্টারবাকস এখনো পরিবেশ ও ‘উচ্চমানের ব্র্যান্ড’ ভাবমূর্তির কারণে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় রয়ে গেছে বলে জানান ফাইন্যান্সে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী ক্যারি চেন। সপ্তাহে তিন থেকে চারবার স্টারবাকসে যান তিনি।

হ্যাজেলনাট টফি লাতের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনলাইন কোর্স করছিলেন চেন। তিনি বলেন, ‘ক্লায়েন্ট মিটিং বা আড্ডা দেওয়ার জন্য যদি স্টারবাকস বেছে নেন, তা মানে আপনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’

তবে বর্তমানে বাজারে স্টারবাকস স্বাদ ও অফার নিয়ে খুব বুঝেশুনে খেলছে বলে ধারণা তাঁর।

চীনে স্টারবাকসের বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করলে চেন বলেন, ‘দেশে স্টারবাকসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার যুগের হয়তো অবসান হয়েছে, তবে কোনো চীনা পার্টনারের সঙ্গে কাজ করলে ব্র্যান্ডটি হয়তো নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।’

চীনে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ জিন লু মনে করেন, বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটিতে স্টারবাকসের বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্ত মূলত তাদের দুর্বল ব্যবসায়িক কৌশল, তীব্র মূল্য প্রতিযোগিতা এবং দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে।

আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মর্নিংস্টারের বিশ্লেষক ড্যান সু মনে করেন, স্টারবাকস ও বয়ু ক্যাপিটালের নতুন এই যৌথ উদ্যোগকে সামনে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তবে এই অংশীদারিত্ব স্টারবাকসের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে।

তবে চীনে স্টারবাকস যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলোর অনেকটাই বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে এর নিজস্ব বাজার উত্তর আমেরিকাতেও একই অবস্থা। সেখানে স্বাধীন কফিশপ ও নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লু বটল (Blue Bottle)-এর চাপের মুখে পড়েছে সিয়াটলভিত্তিক এই কফি কোম্পানি। আবার অনেকে ম্যাকডোনাল্ডস বা ডানকিন-এর তুলনায় স্টারবাকসকে বেশি দামি মনে করে এড়িয়ে যান।

এই প্রেক্ষাপটই তুলে ধরছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্টারবাকসের কৌশলগত ভুল এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধাক্কায় কোম্পানিটি টালমাটাল সময় পার করছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছর নতুন সিইও হিসেবে ব্রায়ান নিকোল দায়িত্ব নেন। দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রায় শত শত দোকান বন্ধ করার পরিকল্পনা হাতে নেন তিনি, কফি চেইনটির মোট শাখার প্রায় ১ শতাংশ।

তবে ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্তের সুফল পাননি সিইও নিকোল। মেন্যু ছোট করা, দোকান সংস্কার ও বন্ধের পরও গত সপ্তাহে ঘোষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ অর্থবছরে কোম্পানির আয় বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ।

কোম্পানির হিসাব পূর্বাভাস দিচ্ছে, চীনে স্টারবাকসের খুচরা ব্যবসার মোট মূল্য ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। চীনে নতুন যৌথ উদ্যোগ প্রসঙ্গে সিইও নিকোল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ৮ হাজার কফি হাউস থেকে এক সময় ২০ হাজার হাউসে পৌঁছানোর রূপরেখা দেখতে পাচ্ছি।’

এদিকে বিনিয়োগ কমানোর ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে চীনা সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, এর ফলে স্টারবাকস হয়তো লাকিন কফির মতো আরও সাশ্রয়ী দামের পানীয় চালু করবে।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘আমি সাধারণত লাকিন কফি খাই, কারণ স্টারবাকস খুবই দামি। এক কাপ স্টারবাকসের দামে আমি লাকিনের তিন-চার কাপ কিনতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ

শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে এই ৫টি ব্যাংক মিলে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চূড়ান্ত রূপ নিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আজ বুধবার বিকেলে ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব বুঝে নেবেন প্রশাসকেরা।

ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর নিয়মিত এমডিরা বাদ পড়ছেন। এখন থেকে এসব ব্যাংক ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশের আওতায় চলবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক মিলে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।

সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি ইউনিয়ন ব্যাংকের। পর্যায়ক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীর ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, প্রশাসকেরা দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। আর এমডির চুক্তি বাতিল হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন। সোশ্যাল ইসলামীতে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে দায়িত্ব পাচ্ছেন আরেক নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। আর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেমকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রশাসকদের প্রথম কাজ হবে পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করা। সেনাকল্যাণ ভবনে এসব ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য স্থাপিত কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সব তথ্য সমন্বয় করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬
২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে না কোনো শাখা, অবকাঠামো বা এটিএম বুথ; গ্রাহকেরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় পাবেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা।

নতুন যুগের আবেদনকারীরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদনের শেষ সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এই ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে।

মূলধনে বড় শর্ত

২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং প্রচলিত ব্যাংকের মতোই সিআরআর (নগদ জমা অনুপাত) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত) বজায় রাখতে হবে।

এই ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা পর্যায়ের লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ থাকবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও আনতে হবে, যার পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।

অ্যাপেই পুরো ব্যাংকিং

প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হবে সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর। কোনো শাখা বা এটিএম থাকবে না; বরং গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব সেবা নিতে পারবেন। প্লাস্টিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে। গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব সেবা পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর আওতায়; যা ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

যোগ্যতার কঠোর মানদণ্ড

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য এই ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে ব্যাংকিং পেশায় অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।

ক্যাশলেস সমাজের পথে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।’ তিনি জানান, এসব ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

যাচাইয়ের পর অনুমোদন

প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণরা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নতুন বছরের প্রথমে শুরু হতে পারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম।

চ্যালেঞ্জ এখন দক্ষতার

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল তথা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্ত রাখা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।

এ বছর প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১০টি দেশ থেকে ৪৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

এরা মূলত ফ্যাব্রিক মিল (ডেনিম ও নন-ডেনিম), গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক, সুতা উৎপাদক, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ ও ট্রিমস, কেমিক্যালস, মেশিনারি বা প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত