Ajker Patrika

পেঁয়াজের বাজারে আবারও অরাজকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পেঁয়াজের বাজারে আবারও অরাজকতা

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। এই খবরে বাজারকে অস্থির করে তুলেছেন দেশের অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। একদিনের ব্যবধানে দাম বাড়িয়ে বাজারভেদে ১৮০-২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ছিল ৯০-১২০ টাকার মধ্যে। হঠাৎ পেঁয়াজের বাজারে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। যে যেমন পারছে দাম বাড়াচ্ছে। 

মুদি দোকানি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শনিবার সকালে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। দুপুরে তা বেড়ে ১৮০-১৯০ টাকা হয়।’ 

রাজধানীর বনশ্রীর মেসার্স মোহাম্মদীয় জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, শুক্রবার তিনি প্রতিকেজি দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। শনিবার তা ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাইকারিতে দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় তারাও সে অনুযায়ী বিক্রি করছেন। 

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তদারকির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১২০-১৫০ টাকা। শনিবার তা বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০৫-১২৫ টাকা। গত শুক্রবার প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১১০-১৩০ টাকা। শনিবার তা বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকায়। যা এ সপ্তাহ আগে ছিল ৯০-১১০ টাকা। 

ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষক আবদুল মাজেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রতিকেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। শনিবার তা ১২৫-১৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু হয়েছে। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে বাজারে পুরোদমে নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। 

বাজার নিয়ন্ত্রণে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে। এখন মিশর, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে।’ 

শ্যামবাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা পেঁয়াজে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে এমন কথা গণমাধ্যমে প্রচার করেছেন। শুধু প্রচারণা করেই শেষ নয় গত মার্চ থেকে আমদানি বন্ধও রেখেছেন। ফলে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের মজুত নির্ধারিত সময়ের আগেই শেয় হয়ে যায়। ফলে এখন ভোক্তাদের সেটির মাশুল গুনতে হচ্ছে।’ 

ভারত রপ্তানি বন্ধের খবরে বাজারে পেঁয়াজে অস্বাভাবিক দাম বাড়ছে। এ বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে—জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোববার এ বিষয়ে সিনিয়র সচিবের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত থাকবে।’ 

রপ্তানি বন্ধের খবরে চট্টগ্রামে খুচরা বাজারের পেঁয়াজ নিমেষেই শেষ হয়ে গেছে। আজ শনিবার পাইকারি বাজারেও ধীরে ধীরে পেঁয়াজ উধাও হয়ে যায়। শুক্রবারের ১০০-১১০ টাকার পেঁয়াজ শনিবার সকালে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ক্রেতারা রীতিমতো হতবাক। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, এটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রীতিমতো পকেট কাটা। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছে। পাহাড়তলি ও খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে তাঁরা মনিটরিং করেছে।’ 

জেলা প্রশাসক প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আজকে যে পেঁয়াজের দাম বাড়ল সেগুলো তো আগের কেনা। তাহলে কেন দাম বাড়বে?’ 

এই বিষয়ে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের মেসার্স মিতালী ট্রেডার্স এর মালিক মো. মোস্তফা বলেন, ‘হঠাৎ ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অবশ্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করার মত পেঁয়াজ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত