Ajker Patrika

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে টালমাটাল টাটার সাম্রাজ্য, নেপথ্যে কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

রতন টাটার মৃত্যুর এক বছর পর ভারতের বিশাল ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য টাটা গ্রুপ এক জটিল সংকটের ভেতরে পড়ে গেছে। যে প্রতিষ্ঠানকে রতন টাটা আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এক শক্তিশালী করপোরেট পরিণত করেছিলেন, সেই টাটা গ্রুপ এখন নানা কারণে টালমাটাল হয়ে পড়েছে। ব্রিটেনের বিখ্যাত জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার ও টেটলি টি এবং ভারতে অ্যাপলের আইফোন তৈরির কারখানা চালানো এই সাম্রাজ্য গৃহবিবাদে টলে উঠেছে।

গত কয়েক মাস ধরে টাটার ট্রাস্টিদের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার লড়াই প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের ভাঙন প্রকাশ্যে এনেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ভারত সরকারকেই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে—যাতে ২০১৬ সালের মতো আরেকটি নাটকীয় আইনি সংকট না সৃষ্টি হয়। সে সময় টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রিকে বরখাস্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো সাম্রাজ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

ভারতীয় মন্ত্রীরা কয়েক সপ্তাহ আগে অস্থায়ী সমঝোতার চেষ্টা চালালেও সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রতন টাটার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং টাটা ট্রাস্টস বোর্ডের ট্রাস্টি মেহলি মিস্ত্রিকে পদচ্যুত করা হয়েছে। তবে বিবিসি এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিরচা রায়ানু টাটা করপোরেশনের ইতিহাস নিয়ে বই লিখেছেন। তিনি এই সংঘাতকে দেখছেন ‘অমীমাংসিত ব্যবসায়িক প্রশ্নের/দ্বন্দ্বের পুনরুত্থান’ হিসেবে। মূলত কে টাটা গ্রুপ চালাবে এবং কতটা ক্ষমতা থাকবে প্রধান শেয়ারধারী টাটা ট্রাস্টসের (যারা মূল কোম্পানি টাটা সন্সের ৬৬ শতাংশ শেয়ার মালিক) হাতে—সেটিই আসল বিতর্ক।

টাটা গ্রুপের গঠন কাঠামো অনন্য। এর নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার রয়েছে একটি দাতব্য সংস্থার (টাটা ট্রাস্টস) হাতে। এই ট্রাস্ট টাটা সন্সের মূল হোল্ডিং কোম্পানির মালিক। এই কাঠামো প্রতিষ্ঠানটিকে কর ও নীতিগত সুবিধা দিয়েছে এবং দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্বৈত প্রকৃতি—অর্থাৎ একদিকে লাভজনক ব্যবসা, অন্যদিকে অলাভজনক মানবসেবা—প্রশাসনিক জটিলতা ও স্বচ্ছতার সমস্যাও তৈরি করেছে।

এই নতুন দ্বন্দ্ব এমন সময়ে দেখা দিয়েছে যখন টাটা গ্রুপ ব্যাপক ব্যবসায়িক প্রতিকূলতার মুখোমুখি। তারা এখন সেমিকন্ডাক্টর ও বৈদ্যুতিক যান (ইভি) শিল্পে নতুন বিনিয়োগের পথে হাঁটছে, পাশাপাশি চেষ্টা করছে ২০২১ সালে সরকারের কাছ থেকে কেনা দেউলিয়া বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করতে। কিন্তু সেই সংস্থাটিও চলতি বছর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আলোচনায় আসে।

টাটা গোষ্ঠী এখনো প্রকাশ্যে এই অস্থিরতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, টাটা ট্রাস্টের ট্রাস্টিদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে বোর্ড সদস্য নিয়োগ, অর্থ অনুমোদন ও টাটা সন্সকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনাকে ঘিরে। টাটা সন্স হলো টাটা গোষ্ঠীর মূল হোল্ডিং কোম্পানি, যার অধীনে রয়েছে ২৬টি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, মোট বাজারমূল্য প্রায় ৩২৮ বিলিয়ন ডলার।

টাটা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, টাটা সন্সের বোর্ডে ট্রাস্টিদের প্রভাব বাড়ানো এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষাই দ্বন্দ্বের মূল কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে টাটা ট্রাস্টের তিনজন প্রতিনিধি টাটা সন্সের বোর্ডে রয়েছেন। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ‘টাটা ট্রাস্টের প্রতিনিধিদের বড় ধরনের সিদ্ধান্তে ভেটো দেওয়ার অধিকার রয়েছে, কিন্তু তাদের ভূমিকা মূলত তদারকির, সিদ্ধান্তগ্রহণমূলক নয়। কিন্তু এখন কিছু ট্রাস্টি চান, তারা যেন বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তেও অংশ নিতে পারেন।’

তবে এর চেয়েও বড় বিতর্কের জায়গা হলো—টাটা সন্সকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার প্রশ্ন। কোম্পানিটির ১৮ শতাংশ শেয়ারধারী সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু অংশীদার এসপি গ্রুপ এই তালিকাভুক্তির পক্ষে জোরালোভাবে চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে, বেশির ভাগ টাটা ট্রাস্টি এ প্রস্তাবের বিপক্ষে। সূত্রের ভাষায়, ‘অনেকেই আশঙ্কা করছেন, পাবলিক লিস্টিং হলে ট্রাস্টের দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে। বাজারের ত্রৈমাসিক চাপের মুখে পড়বে টাটা সন্স। বিশেষ করে যখন গোষ্ঠীর অনেক নতুন ব্যবসা এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে।’

তবে এসপি গ্রুপ এই তালিকাভুক্তিকে ‘নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব’ হিসেবে দেখছে। তাদের দাবি, এতে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মূল্য বাড়বে, কোম্পানির স্বচ্ছতা ও শাসনব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। টাটা সন্স বা টাটা ট্রাস্টস—কেউই বিবিসির বিস্তারিত প্রশ্নের জবাব দেয়নি। তবে অধ্যাপক রায়ানুর মতে, এই দ্বন্দ্ব টাটা গোষ্ঠীর এক বাস্তব সংকটকে তুলে ধরে।

রায়ানুর ভাষায়, ‘টাটা সন্সকে শেয়ারবাজারে আনা হলে তা এক অর্থে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক বড় কনগ্লোমারেটের চলমান ধারা থেকে ভিন্ন হবে। সেখানে অনেকে এখন ফাউন্ডেশন মালিকানার পথে হাঁটছে, যাতে স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব বাড়ে। পরিহাসের বিষয় হলো, তারা টাটা গোষ্ঠীকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছে।’ তাঁর মতে, ‘তবে একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, বেসরকারি বা ঘনিষ্ঠ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের নজরদারির বাইরে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্ব বাড়াতে ও সুনাম নষ্ট করতে পারে।’

জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ ও টাটা সন্সের সাবেক চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিলীপ চেরিয়ান বলেছেন, এই সংঘাত এরই মধ্যে গোষ্ঠীটির পরিচালনা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং ভারতের প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম ‘টাটা গ্রুপের’ ব্র্যান্ড ইমেজে আঘাত হেনেছে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এটা সাম্প্রতিক সময়ে টাটার ভাবমূর্তিতে লাগা একের পর এক আঘাতের ধারাবাহিকতা।’ তিনি উল্লেখ করেন, বছরের শুরুতে ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা এবং সেপ্টেম্বরে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের (জেএলআর) এক গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে সাইবার হামলার কথা। যার ফলে যুক্তরাজ্যের গাড়ি উৎপাদন নেমে যায় গত ৭০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

এদিকে, টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)—যা গ্রুপের মোট আয়ের প্রায় অর্ধেকের উৎস—নিজস্ব সংকটে জর্জরিত। ব্যাপক ছাঁটাই, আর সম্প্রতি খুচরা বিক্রেতা মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল—সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছে।

চেরিয়ানের মতে, ‘বোর্ডরুমে এই লড়াইগুলো আরও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এখন শুধু শেয়ার পারফরম্যান্স নিয়েই নয়, বিনিয়োগকারীদের মনেও প্রশ্ন জাগবে—তারা আসলে টাটার কোন নেতৃত্বের সঙ্গে লেনদেন করছেন।’

এই অস্থিরতার মাঝেই খবর এসেছে, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। টাটা সন্সের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছে, ‘চেয়ারম্যান তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। কারণ এটা বোর্ডের ভেতরের বিভাজন নয়, বরং ট্রাস্টিদের মধ্যে। তবে এটি তার জন্য অপ্রয়োজনীয় এক বিভ্রান্তি।’

তবে টাটা গ্রুপের জন্য এমন সংকট নতুন কিছু নয়। নব্বইয়ের দশকে রতন টাটা যখন গ্রুপের নেতৃত্ব নেন এবং কাঠামোগত আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন, তখনো তীব্র দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। কয়েক বছর আগে সাইরাস মিস্ত্রিকে অপসারণের পর যে সংঘাত দেখা দিয়েছিল, তা-ও এখনো অনেকের স্মৃতিতে তাজা।

তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন, বলছেন অধ্যাপক রায়ানু। তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে টিসিএস দুর্বল কোম্পানিগুলোর টিকে থাকার ভরসা ছিল। তারও আগে এই ভূমিকা পালন করত টাটা স্টিল। কিন্তু এখন টিসিএসের ব্যবসায়িক মডেল নিজেই টালমাটাল অবস্থায় আছে, আর গ্রুপের মোট আয়ে তার অবদানও চাপের মুখে। ফলে টাটা গ্রুপের জন্য আগের মতো কোনো নোঙর বা স্থিতিশীলতা তৈরি হয়নি। এই কারণেই অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মোকাবিলা এখন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এসএমই মেলায় ১৬ কোটি টাকার অর্ডার পেলেন উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।

শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আপেল, মাল্টা, কমলাসহ তাজা ফলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।

অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেতাদের হাতে উপহারের ফ্রিজ-টিভি হস্তান্তর করল ওয়ালটন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত

ইলেকট্রনিকস পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিতে দেশব্যাপী চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনের ২৩তম সিজনে ওয়ালটন ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা বিএলডিসি ফ্যান কিনে গ্রাহকেরা পাচ্ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাইড বাই সাইড ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ফ্রি ও নিশ্চিত উপহার। গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতার হাতে উপহারের পণ্য তুলে দিচ্ছে ওয়ালটন।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ওয়ালটন প্লাজা থেকে ফ্রিজ কিনে সাইড বাই সাইড ফ্রিজ ও টিভি ফ্রি পাওয়া পণ্য ছয় ক্রেতার হাতে তুলে দিয়েছে ওয়ালটন। তাঁরা হলেন— মুন্সিগঞ্জের গোলাম রাব্বানি সিফাত ও গৃহিণী আফসানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের আজমির খান, রূপগঞ্জের সবুর হোসাইন এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তারিকুল ইসলাম ও আসমা জাহান বিথী।

গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের হাতে উপহার পাওয়া পণ্য তুলে দেন চিত্রনায়ক ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান। সে সময় আরও ছিলেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের প্রধান মো. ফিরোজ আলম প্রমুখ।

বিজয়ী ক্রেতাদের মধ্যে গোলাম রাব্বানি সিফাত, আফসানা, আজমির খান ও আসমা জাহান বিথী ফ্রিজ কিনে উপহার পেয়েছেন ওয়ালটনের অত্যাধুনিক সিক্সএনাইন মডেলের সাইড বাই সাইড স্মার্ট ফ্রিজ। অন্যদিকে তারিকুল ইসলাম ফ্রিজ কিনে ফ্রি পেয়েছেন ২১৩ লিটারের ফ্রিজ এবং সবুর হোসাইন ফ্রিজ কিনে পেয়েছেন ওয়ালটনের ৪৩ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন।

উপহারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রায়হান বলেন, ‘ওয়ালটন ক্রেতাদের সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং সম্মান করে। সারা দেশে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ওয়ালটন পণ্য কিনে নানান উপহার পাচ্ছেন যা তাদের যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাঝে কয়েকজনের হাতে করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠান করে প্রাপ্য পণ্য বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গ্রাহকদের জন্য আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সাধারণ ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপহারের পণ্য তুলে দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান বিজয়ীরা।

কর্মকর্তারা জানান, সিজন-২৩ এর আওতায় ক্রেতারা দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনে ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও বিএলডিসি ফ্যান কেনার পর পণ্যটির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এরপর ক্রেতাদের মোবাইলে ওয়ালটন থেকে উপহার পাওয়ার এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

পাশাপাশি ওয়ালটনের ক্রেতাদের জন্য তৈরি ‘আমার আওয়াজ’ মোবাইল অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ক্রেতাদের জন্যও এবারের ক্যাম্পেইনে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ২০২৬ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা থাকছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত