Ajker Patrika

অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা, অবদান বৃহৎ শিল্পের দ্বিগুণ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ১৯
অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা, অবদান বৃহৎ শিল্পের দ্বিগুণ
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতির অদেখা নায়ক হলো ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাত। এটি ঠিক ছোটদের বড় স্বপ্নপূরণের এক মঞ্চ। বৃহৎ শিল্প খাতের ঝলমলে আলোর আড়ালে থেকেও সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা তাঁদের সীমিত পুঁজি, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অদম্য উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থনীতির চাকা। এই খাতের অবদান জাতীয় আয়ের ৩৮ শতাংশ, যা বৃহৎ শিল্পের প্রায় দ্বিগুণ। তবে এর গুরুত্ব কেবল অর্থনৈতিক সূচকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। লাখো মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের আলো জ্বালিয়ে এই খাত শুধু জীবিকা নয়, স্বপ্ন আর স্বাবলম্বিতার এক অপার সম্ভাবনা তৈরি করছে। সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা যেন বটবৃক্ষের মতো—ছায়া দিচ্ছে, ফল দিচ্ছে, আবার শিকড় দিয়ে মাটিকে শক্ত করছে।

তারপরও সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা প্রতিদিন লড়াই করছেন। ঋণের কঠোর শর্ত, সরকারি সেবা পেতে হয়রানি এবং পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই—এসব যেন তাঁদের প্রতিদিনের সঙ্গী। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগের জটিলতায় অনেক উদ্যোগ শুরুই করতে পারেন না। আবার ব্যবসা সনদ বা অনুমোদনের কাগজপত্র জোগাড় করতে করতে অনেকের পুঁজি শেষ হয়ে যায়।

অনেকে ঋণের জন্য ব্যাংকে গেলে শুনতে পান, ‘জামানত ছাড়া হবে না।’ বাধ্য হয়ে তাঁরা উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেন। কেউ কেউ মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন, আর যাঁরা টিকে থাকেন, তাঁদের জন্য প্রতিটি দিন নতুন চ্যালেঞ্জ।

কিন্তু সব বাধার পরও এই খাতের উদ্যোক্তারা থেমে থাকেন না। তাঁদের মধ্যে একধরনের অদম্য জেদ আর সৃষ্টিশীলতার ঝলক আছে। একজন নারী উদ্যোক্তা তাঁর গ্রামে কারুশিল্প শুরু করেছেন, আরেকজন ছোট দোকান থেকে ব্যাগ তৈরি করে এখন বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন। এভাবে আরও কত হরেক স্বপ্ন অর্থনীতিতে লুকায়িত রয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বড় ভূমিকা রেখে চললেও কখনোই সেটি সবার সামনে আসে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানোর। ব্যাংকগুলোর উচিত সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া এবং প্রশাসনিক হয়রানি কমিয়ে ডিজিটাল সেবা সহজলভ্য করা। পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বড় করতে একটি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। তাঁদের সফলতা শুধু তাঁদের নয়, দেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি এগিয়ে নেবে। সিএমএসএমই খাতের উত্থান অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) সভাপতি মির্জা নুরুল গণী শোভন বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাজার সৃষ্টি, মেলা, আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ, শুল্কছাড় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনা সহজ করবে এবং কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে আরও অবদান রাখবে।

গোল্ডেন টাচের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অবাধ প্রবেশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। হয়রানি বা বাড়াবাড়ি বন্ধ হলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে এবং লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান পাবে। এর ফলে ছোট উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।’

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে তারল্যের প্রবাহ না বাড়ালে অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। তাই তাদের জন্য ব্যাংক, ইক্যুইটি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো জরুরি।

সিএমএসএমই খাতের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজার। এর মধ্যে কুটির শিল্পের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৪, মাইক্রো শিল্পের ১ লাখ ৪ হাজার ৭, ক্ষুদ্র শিল্পের ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩১৮ এবং মাঝারি শিল্পের সংখ্যা মাত্র ৭ হাজার ১০৬টি। উল্লেখ্য, বিসিক এই তথ্যের ভিত্তি হিসেবে ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার ডেটা ব্যবহার করেছে।

small-business-01

খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত চিত্রটি ভিন্ন এবং বর্তমানে এই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় সোয়া কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৪৫০টি। এগুলোর মধ্যে কার্যকর বড় শিল্পকারখানার সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৮৫৬টি।

কুটির থেকে বৃহৎ শিল্পের বৈশিষ্ট্য

কুটির শিল্প বলতে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝায়, যাদের স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ টাকার নিচে এবং শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ জনের বেশি নয়। মাইক্রো শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা, শ্রমিকের সংখ্যা ১ থেকে ২৫। ক্ষুদ্র শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা, শ্রমিকের সংখ্যা ২৬ থেকে ১২০ জন। মাঝারি শিল্পের জন্য স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং শ্রমিকের সংখ্যা ১২১ থেকে ৩০০ জন। বৃহৎ শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি এবং শ্রমিকের সংখ্যা ৩০০ জনের বেশি।

সিএমএসএমই ও বৃহৎ শিল্পে ব্যাংকঋণের চিত্র

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সিএমএম খাতে ব্যাংকগুলো মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এই খাতের জন্য বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ মোট ব্যাংকঋণের মাত্র ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে বৃহৎ শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৩ শতাংশ, যার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের চিত্রে দেখা যায়, সিএমএসএমই খাতে খেলাপি ঋণের হার মাত্র ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। অপরদিকে বৃহৎ শিল্প খাতে এই হার ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সব সময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কম মনোযোগ দেয়। যদিও ঋণের একটি নির্ধারিত অংশ সিএমএমই খাতে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে, ব্যাংকগুলো তা অনেক সময় পূরণ করে না, ফলে একদিকে সিএমএসএমইরা বঞ্চিত হয়, যা দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে সবকিছু বিবেচনা না করে বড়দের বড় ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকগুলোও বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।

ঋণ পেতে ছোটদের যত জটিলতা

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র ১৮ শতাংশ দেয় দেশের এসএমই খাতে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান পায় মাত্র ৯ শতাংশ ঋণ, ফলে ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণের সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এসএমই ঋণের সম্ভাব্য বাজার ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ খাতের জন্য কম সুদের বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। তবে ব্যবসা সনদ, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ ও প্রণোদনা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছেন না।

বিনাস ক্র্যাফটস অ্যান্ড ডিজাইনসের স্বত্বাধিকারী সাফিনা আক্তার বলেন, ‘ছোট ব্যবসা করতে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। বড়দের সঙ্গে টিকতে জনবল ও অন্যান্য সম্পদ প্রয়োজন, যা আমাদের নেই। ব্যাংকে ঋণ চাইতে গেলে কাগজপত্র এবং জামানতের প্রয়োজন পড়ে, যা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে পাওয়া কঠিন।’

কিষাণঘর অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকঋণের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। দুই কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েও এসএমই বা কৃষিঋণ পাওয়া যায় না। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন কৌশলে ঋণ দিতে উৎসাহী নয়।’

দেশে ৯০ শতাংশ শিল্পই কুটির

বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কুটির শিল্প হলেও ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। তারা মূলত বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, সিএমএসএমই খাতে ঋণ বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানও অনেক বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী সতর্ক করে বলেন, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো না বাঁচলে দেশের অর্থনীতি সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করে ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য ঋণের সুযোগ বাড়াতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসএমই খাতে প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, যদি এসএমই উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পান, তবে তাঁরা তাঁদের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন, যা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করবে এবং কর্মসংস্থান বাড়াবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসএমইগুলোর জন্য চমৎকার নীতি প্রণয়ন করা হলেও সেগুলো বাস্তবায়নে দুর্বলতা রয়েছে। এসএমই নীতিতে নতুন বাজার বৃদ্ধি ও রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা সে অনুযায়ী কাজ করতে পিছিয়ে রয়েছে।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এসএমই বিকাশে সরকারের আর্থিক এবং প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যায় না। ২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালার বাস্তবায়নের জন্য ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার বাজেট থাকলেও কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি।’

নীতিসহায়তার অভাবে রুগ্‌ণ

বিসিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বিসিকের আওতাধীন সিএমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৮৭টি হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্প। তবে উৎপাদনে আসার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশীয় ও রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে গত জুন পর্যন্ত রুগ্‌ণ ও বন্ধ শিল্পকারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৭টি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সরকারের নীতিসহায়তার ঘাটতি বাস্তবতার কারণে এই শিল্পগুলোর কিছু অংশ রুগ্‌ণ ও কিছু বন্ধ হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেতাদের হাতে উপহারের ফ্রিজ-টিভি হস্তান্তর করল ওয়ালটন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত

ইলেকট্রনিকস পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিতে দেশব্যাপী চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনের ২৩তম সিজনে ওয়ালটন ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা বিএলডিসি ফ্যান কিনে গ্রাহকেরা পাচ্ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাইড বাই সাইড ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ফ্রি ও নিশ্চিত উপহার। গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতার হাতে উপহারের পণ্য তুলে দিচ্ছে ওয়ালটন।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ওয়ালটন প্লাজা থেকে ফ্রিজ কিনে সাইড বাই সাইড ফ্রিজ ও টিভি ফ্রি পাওয়া পণ্য ছয় ক্রেতার হাতে তুলে দিয়েছে ওয়ালটন। তাঁরা হলেন— মুন্সিগঞ্জের গোলাম রাব্বানি সিফাত ও গৃহিণী আফসানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের আজমির খান, রূপগঞ্জের সবুর হোসাইন এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তারিকুল ইসলাম ও আসমা জাহান বিথী।

গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের হাতে উপহার পাওয়া পণ্য তুলে দেন চিত্রনায়ক ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান। সে সময় আরও ছিলেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের প্রধান মো. ফিরোজ আলম প্রমুখ।

বিজয়ী ক্রেতাদের মধ্যে গোলাম রাব্বানি সিফাত, আফসানা, আজমির খান ও আসমা জাহান বিথী ফ্রিজ কিনে উপহার পেয়েছেন ওয়ালটনের অত্যাধুনিক সিক্সএনাইন মডেলের সাইড বাই সাইড স্মার্ট ফ্রিজ। অন্যদিকে তারিকুল ইসলাম ফ্রিজ কিনে ফ্রি পেয়েছেন ২১৩ লিটারের ফ্রিজ এবং সবুর হোসাইন ফ্রিজ কিনে পেয়েছেন ওয়ালটনের ৪৩ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন।

উপহারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রায়হান বলেন, ‘ওয়ালটন ক্রেতাদের সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং সম্মান করে। সারা দেশে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ওয়ালটন পণ্য কিনে নানান উপহার পাচ্ছেন যা তাদের যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাঝে কয়েকজনের হাতে করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠান করে প্রাপ্য পণ্য বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গ্রাহকদের জন্য আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সাধারণ ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপহারের পণ্য তুলে দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান বিজয়ীরা।

কর্মকর্তারা জানান, সিজন-২৩ এর আওতায় ক্রেতারা দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনে ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও বিএলডিসি ফ্যান কেনার পর পণ্যটির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এরপর ক্রেতাদের মোবাইলে ওয়ালটন থেকে উপহার পাওয়ার এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

পাশাপাশি ওয়ালটনের ক্রেতাদের জন্য তৈরি ‘আমার আওয়াজ’ মোবাইল অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ক্রেতাদের জন্যও এবারের ক্যাম্পেইনে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ২০২৬ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা থাকছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের ওপর কেন ৫০ শতাংশ শুল্ক দিল মেক্সিকো, নয়াদিল্লির ক্ষতি কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৩
ভারতের ওপর মেক্সিকোর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির বেশ বড় রকমের ক্ষতিই হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ওপর মেক্সিকোর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির বেশ বড় রকমের ক্ষতিই হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এই শুল্ক বহাল থাকলে মেক্সিকোর বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। মূলত, ভারতের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকায়, তা পুষিয়ে নিতেই ট্রাম্পের মতো করেই ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর মেক্সিকোর এই শুল্ক।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের খবরে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর জবাবে নয়াদিল্লিও জানিয়েছে, তারা নিজেদের রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে পারে। এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এই কথা জানিয়েছেন।

এর আগে, এ সপ্তাহের শুরুতে মেক্সিকোর সিনেট এক নতুন শুল্ক ব্যবস্থা অনুমোদন করে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াসহ যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নেই, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই শুল্ক বসানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত মেক্সিকোর সঙ্গে তাদের অংশীদারত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ এক বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি করতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে দুই দেশের ব্যবসা ও সাধারণ মানুষ লাভবান হয়।’

এই শুল্কের প্রভাব কমাতে ভারত ইতিমধ্যেই মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে মেক্সিকোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে, যাতে ভারতীয় রপ্তানি সুরক্ষিত করার জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। ভারতীয় ওই কর্মকর্তা জানান, ‘বাণিজ্য দপ্তর মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারস্পরিক সুবিধাজনক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।’

দুই দেশই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে তৈরি হচ্ছে। আলোচনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা যায়, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই শুল্ক থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করতে পারে।

ইতিমধ্যেই বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল ও মেক্সিকোর উপ-অর্থমন্ত্রী লুইস রোসেন্ডোর মধ্যে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও প্রযুক্তিগত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও যোগ করেন, ‘গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে চললেও, ভারত তার রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার নিজের হাতে রেখেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই শুল্কের প্রভাব নির্ভর করবে ‘মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতীয় রপ্তানির গুরুত্ব কতখানি এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলি শুল্কের ছাড় পেতে বা এই বাড়তি খরচ মেক্সিকোর উপভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে কতটা সক্ষম, তার ওপর।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সতর্কবার্তার পরই এই শুল্ক বাড়ানো হলো, যেখানে বলা হয়েছিল যে, সস্তায় চীনা পণ্য মেক্সিকো হয়ে আমেরিকাতে ঢুকছে। মেক্সিকো এটিকে তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা, চাকরি সংরক্ষণ এবং সস্তা আমদানির কারণে তৈরি হওয়া বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখিয়েছে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সাহাই বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে অটোমোবাইল, অটো যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস, অরগানিক কেমিক্যাল, ওষুধ, টেক্সটাইল এবং প্লাস্টিকের মতো ক্ষেত্রগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সাহাই পিটিআইকে বলেন, ‘এত বেশি শুল্ক আমাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা তৈরির ঝুঁকি বাড়াবে।’

এদিকে, ২০২৪ সালে ভারত মেক্সিকোতে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যেখানে মেক্সিকো থেকে আমদানি হয়েছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ভারত ও মেক্সিকোর মধ্যে চলমান আলোচনা, যার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার সম্ভাবনাও যুক্ত, তা এই ক্রমবর্ধমান শুল্কের মুখে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষা করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেডের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন এক সূত্র আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার পর যেহেতু ফয়সাল করিম মাসুদ প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত, সেহেতু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাঁর বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করবে। আমরাও তাঁর আর্থিক কোনো অপরাধ আছে কি না, সেগুলোর অনুসন্ধান করব।’

এনবিআরের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে এবং অনেক আলোচনা রয়েছে যে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার জন্য এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য ভারত থেকে অনেক ফান্ডিং হচ্ছে। ফলে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য মূলত হিসাবগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে।’

জানা গেছে, ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য।

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। পুলিশের বিবৃতিতে সন্দেহভাজন তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদির সঙ্গে দেখা গেছে। তবে কয়েক দিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণই যে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত