Ajker Patrika

মাশুল বাড়ানোর প্রতিযোগিতা

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। সেই বন্দর ঘিরে এখন মাশুল বাড়ানোর একের পর এক ঘোষণা যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বন্দরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবা খাতে হু হু করে বেড়ে চলেছে চার্জ ও সারচার্জ। ব্যবসায়ীদের আপত্তি, পুনর্বিবেচনার আহ্বান কিংবা সরকারের মধ্যস্থতার চেষ্টা—কোনোটি এই মাশুল বৃদ্ধির ধারা থামাতে পারছে না।

সর্বশেষ এই মাশুল বৃদ্ধির মিছিলে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্সভিত্তিক শিপিং কোম্পানি সিএমএ সিজিএম, যারা তাদের ওয়েবসাইটে নতুন করে ‘ইমার্জেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ’ নামে অতিরিক্ত চার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতে ২০ থেকে ৪০ ফুটের বিভিন্ন আকারের কনটেইনারে প্রতি ইউনিটে ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০৫ ডলার পর্যন্ত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ৫২০ থেকে ৩৭ হাজার ৪১৪ টাকা) সারচার্জ দিতে হবে। এ নতুন হার কার্যকর হবে ২৬ অক্টোবর থেকে, যা বাংলাদেশের সব আমদানি ও রপ্তানি চালানে প্রযোজ্য হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের যেকোনো স্থানে স্থানীয়ভাবে পরিশোধযোগ্য হবে।

ঘোষণা অনুযায়ী, ২০ ফুট কনটেইনারে ৪৫, ৪০ ফুটে ৭০, ৪০ ফুট হাইকিউবে ১০৫ এবং ৪৫ ফুট হাইকিউবে ১৪৫ ডলার সারচার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। রেফার কনটেইনারে ২০ ফুটে ৪০, ৪০ ফুটে ৬০ এবং ৪০ ফুট হাইকিউবে ১১০ ডলার দিতে হবে। ওওজি (আউট অব গেজ) কনটেইনারে ২০ ফুটে ১১০, ৪০ ফুটে ১৬৫ এবং ৪০ ফুট হাইকিউবে ২৪৫ ডলার সারচার্জ ধার্য করা হয়েছে। বিপজ্জনক পণ্যবোঝাই (হ্যাজার্ডাস) কনটেইনারের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ ফুটে ১৪০, ৪০ ফুটে ২১৫ এবং ৪০ ফুট হাইকিউবে ৩০৫ ডলার।

এর আগে বছরের শুরু থেকেই বন্দরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও একের পর এক মাশুল বাড়িয়েছে। জানুয়ারিতে প্রথমে বার্থ অপারেটররা চার্জ বাড়িয়ে বক্সপ্রতি ১৭৫ টাকা করে। এরপর ১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানি খাতের অন্যতম সহায়ক চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে (অফডক) ৩০-৪০ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল কার্যকর হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৫ অক্টোবর থেকে ২১টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে নতুন মাশুল কার্যকর হচ্ছে, যেখানে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩০-৪০ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। আর এখন সেই সারিতে যুক্ত হলো বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর সারচার্জ ঘোষণা।

বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এই প্রবণতা এখানেই থেমে থাকছে না। এখন অন্য শিপিং এজেন্টরাও অতিরিক্ত চার্জ আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘এখন সবাই যেন চার্জ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বন্দরসংশ্লিষ্ট যেকোনো সেবায় অতিরিক্ত মাশুল কার্যকর হলে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ে, আর শেষ পর্যন্ত এর বোঝা গিয়ে পড়ে সাধারণ ভোক্তার ওপর।’

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলারের বিনিময়হারের অস্থিরতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির প্রভাবে যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তখন এসব বাড়তি ব্যয় রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতাকে আরও কঠিন করে তুলছে।’

অন্যদিকে ফ্রান্সভিত্তিক সিএমএ সিজিএম কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে সরাসরি কিছু জানাতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ‘ইতিমধ্যে বন্দরে বিভিন্ন ধরনের ট্যারিফ বেড়েছে। জাহাজ নোঙর, কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও অন্যান্য সেবার খরচও বেড়ে গেছে। এই বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে সিএমএ সিজিএমকে নতুন সারচার্জ আরোপে যেতে হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭৫ কোটি টাকার কর ফাঁকি: এনবিআর কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর

ধর্ষণের আলামত নষ্ট, ধুনট থানার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে পরোয়ানা

হিমাগারে ডেকে নির্যাতন: রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার তিন ছেলে-মেয়ের জামিন, পুলিশের ‘দুর্বল’ ভূমিকা

ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজ ও চার্চের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট আছে, তারাই অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা করে: আসিফ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত