Ajker Patrika

মাশুল বাড়াল চবক: আমদানি-রপ্তানিতে বাড়তি খরচের বোঝা

  • বন্দর ও অফডকে মাশুল বাড়ল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে।
  • ৪১% বর্ধিত মাশুল ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর।
  • বেসরকারি ১৯ কনটেইনার ডিপোতে ৮০-১০০% মাশুল বাড়ে ১ সেপ্টেম্বর।
  • প্রভাব পড়বে শিল্পোদ্যোক্তা থেকে ভোক্তা পর্যন্ত।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে দেশের ব্যবসায়ী মহলে আবারও উত্তাপ। দীর্ঘদিনের দাবি-আপত্তি সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষ সেবা খাতের মাশুল বা ট্যারিফ হঠাৎ করে বড় অঙ্কে বাড়িয়ে দিয়েছে। গড়ে এই বাড়তি চাপ দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশ। গত রোববার রাতে এ ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক নিশ্চিত করেছেন, প্রায় চার দশক পর এই পরিবর্তন আনা হলো। সর্বশেষ ট্যারিফ সমন্বয় করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো (অফডক) একযোগে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়ায়। ব্যবসায়ীরা তখন শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন; এর মধ্যে এল বন্দরের এই নতুন ধাক্কা।

বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির ইতিহাস রয়েছে। গত জুনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলে তাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তারা প্রস্তাব দেয় যেন বাড়তি মাশুল সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা কার্যকর করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বন্দরে ৫২টি খাতে মাশুল নেওয়া হয়। এর মধ্যে ২৩টিতে সরাসরি নতুন হার কার্যকর করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে কনটেইনার পরিবহন খাতে। আগে একটি ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য মাশুল ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা, যা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে নতুন নিয়মে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকায়। অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে প্রতিটি কনটেইনারে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। আবার আমদানি কনটেইনারে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৭২০ এবং রপ্তানিতে ৩ হাজার ৪৫ টাকা গুনতে হবে। প্রতি কেজি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা যোগ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, ট্যারিফ না বাড়ানো হোক। আর যদি বাড়াতে হয়, তবে সহনীয় পর্যায়ে থাকুক। কিন্তু ৪১ শতাংশ বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধাক্কা। এর পুরো চাপ আসবে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর।’ তাঁর মতে, উৎপাদনমুখী শিল্প থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তা পর্যন্ত সবার ওপর এর প্রভাব পড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি-রপ্তানিনির্ভর সমুদ্র বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। এর মাধ্যমে ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয় এবং প্রায় ৯৮ শতাংশ কনটেইনার ওঠানামা করে। তাই এই ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে সরাসরি সরবরাহে, যা পণ্যের দামের সঙ্গে রপ্তানির প্রতিযোগিতার ক্ষমতাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।

বন্দরের দাবি, প্রায় ৪০ বছর পর মাশুল বাড়ানো সময়ের দাবি। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, এতে বাণিজ্য ব্যয় বাড়বে, শিল্পে প্রতিযোগিতার জায়গা সংকুচিত হবে এবং শেষ পর্যন্ত এর ভার গড়াবে ভোক্তার ঘাড়ে। এখন দেখার বিষয়, নতুন এই সিদ্ধান্ত বাজারে কত দ্রুত ও গভীর প্রভাব ফেলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার পতনের আগের দিন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়: নাহিদ

ডিএমপি কমিশনারের বার্তা: ঝটিকা মিছিল হলে ওসি ও পরিদর্শক প্রত্যাহার

কুমিল্লায় ৪ মাজারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

দিয়াবাড়ির কাশবনে নারীর অর্ধগলিত লাশ, মৃত্যু ১০-১২ দিন আগে: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত