সেঁজুতি সাহা
পৃথিবীজুড়ে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে, তা কি মানবকল্যাণে কাজে লাগছে? মনে হয় এই আধুনিক যুগে এসেও আমরা যেন চিন্তাভাবনায় ঠিক ততটা মানবিক হয়ে উঠতে পারিনি। সভ্যতার এ পর্যায়ে এসেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখানো হয়, নিজের জন্য ভাবতে হবে, নিজের জন্য গবেষণা করতে হবে, নিজের যশ-খ্যাতি বাড়াতে হবে। অর্থাৎ, আমরা বেশির ভাগ সময়ই নিজের জন্য ভাবি। আমাদের মাথায় থাকে বড় বড় পাবলিকেশনস লাগবে, বড় জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করতে হবে, নিজের নামটা বড় করতে হবে। এ ধরনের চিন্তা-প্রক্রিয়ার কারণে সমাজের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের বোধ হারিয়ে যায়।
মনে রাখা উচিত, আমাদের সম্পদ সীমিত। আমরা দেশের সম্পদ ব্যবহার করেই কিন্তু গবেষণা করি, সেটা যে বিষয়েই হোক। এ জায়গা থেকেই ‘কেন গবেষণা করছি’, তা নিয়ে আরও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা উচিত। সেই সঙ্গে মাথায় রাখা দরকার যে, একটা প্রজন্ম আমাদের ভাষা দিয়েছে, আরেকটা প্রজন্ম আমাদের স্বাধীন একটা দেশ দিয়েছে। তাই এ প্রজন্মকে বুঝতে হবে যে, গবেষণা যেন শুধু নিজের জন্য না হয়। গবেষণা হতে হবে সমাজের জন্য, মানুষের জন্য। যেকোনো সম্পদ ব্যবহারের সময় নিজেকে হাজারবার প্রশ্ন করা উচিত, ‘এটা কেন করব’, মানুষের কাজে লাগবে তো! অর্থাৎ, গবেষণার ফলাফল অবশ্যই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সেটা সরাসরি হোক বা নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে হোক। এই জায়গায় এখনো অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। কিন্তু এটাকে শিক্ষাব্যবস্থায় ঢোকাতে পারলে, মানুষের মনে ঢোকাতে পারলে গবেষণার ফলাফল মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তারও আগে মানুষের মধ্যে দেশের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে।
আমি করোনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছিলাম। তবে এখন শুধু আমরাই নয়, বেশ কিছু দল জিনোম সিকোয়েন্স করছে। আমরা মিলেমিশেও বেশ কিছু জিনোম সিকোয়েন্স করছি। বাংলাদেশে বেশ কিছু মাস করোনার ভয়াবহতা কম ছিল। তবে এক-দুই সপ্তাহ থেকে করোনার ভয়াবহতা কিছুটা বাড়ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের বেশি। তাই এখন আমাদের পরিস্থিতিটা খুব ভালোভাবে তদারক করতে হবে। এখন করোনার যে ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে, তার নাম ওমিক্রন। এর প্রকোপ কতটা হবে, তা আমরা জানি না। এতটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশ অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মানলে এবং টিকার ডোজগুলো নিয়মিত নিলে খুব একটা সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্যে অনেক এগিয়েছে। অসম্ভব ভালো ভালো কাজ হয়েছে বাংলাদেশে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কথা ছিল। বাংলাদেশ কিন্তু ডেডলাইনের আগেই লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ পুরস্কৃতও হয়েছে। এ ছাড়া দেশে শিশুমৃত্যুর হার
অনেক কমেছে; বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমেছে। এমন আরও অনেক অর্জন এখন আমাদের দরকার।
শিশুস্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২৮ দিনের কম বয়সী নবজাতকদের মধ্যে মৃত্যুহার এখনো অনেকটা বেশি। এদিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি। নবজাতকের দিকে নজর দিতে গেলে অবশ্যই মায়েদের দিকেও নজর দিতে হবে। প্রতিটি ডেলিভারি যেন নিরাপদ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরেকটা বিষয় বাংলাদেশে মনে হয় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেটা হলো, ষাটোর্ধ্ব যে জনগণ, তাঁদের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। এই জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাঁদের অবহেলা করে এগোনো সম্ভব নয়। তাই তাঁদের জন্যও টিকার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তাঁরা সুস্থ থাকতে পারেন। শিশুদের মতো তাঁদের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যাঁরা এতগুলো বছর দেশকে দিয়েছেন, এখন তাঁদেরকে দেওয়ার পালা। তাই তাঁদের জন্য জাতীয় প্রকল্প থাকতে হবে।
বাংলাদেশে আমি অনেক দিন কাজ করছি, এমন নয়। ছয়-সাত বছর ধরে স্থায়ীভাবে আছি। এই সময়ে আমি একধরনের পরিবর্তন দেখছি, মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি। ছয় বছর আগে যখন ইন্টারভিউ বোর্ডে বসতাম, তখন নতুনদের মধ্যে যে ধরনের উৎসাহ ছিল, তা এখন আরও বেশি। এই প্রজন্মের গবেষণা করার উৎসাহ আছে। দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আছে। এখানে গবেষণার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটাই একমাত্র ব্যাপার নয়; মানসিকতারও ব্যাপার আছে।
প্রতিবছর অনেক স্নাতক বের হচ্ছেন। তাঁদের সবাই যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটা বলা যাবে না। গবেষণায় আমরা খানিকটা পিছিয়ে। তবে চেষ্টা চলছে। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। সুতরাং সুযোগ বাড়ছে। আবার সব সময় সুযোগটাই একমাত্র বিষয় নয়। কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। যেমন আমাদের মা-বাবার প্রজন্ম শুনে এসেছে, ‘চাকরি পেতে হবে, চাকরি পেতে হবে’! কিন্তু এখন আমরা জানি, শুধু চাকরি পাওয়া নয়, চাকরি দেওয়াও যায়। আমরা উদ্যোক্তা হতে পারি। গবেষক হয়েও কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এভাবেই সুযোগ খুঁজে নিতে হবে।
তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে নিবেদন দরকার, সেখানে মনে হয় ঘাটতি রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তরুণ বিজ্ঞানীদের ওপর একটা সামাজিক চাপও থাকে। বিসিএস দিতে হবে বা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে—এ ধরনের বিষয়গুলো তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানই যে সব সময় ভালো কাজ করছে, তা কিন্তু নয়। অথচ সমাজের চাপে তরুণ বিজ্ঞানীদের মাথায়ও সরকারি চাকরি করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিন্তা ঘোরে। দেখা যায় কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তিন বছর ধরে কাজ শিখে যখন দেশকে কিছু দেওয়ার সময় এল, তখনই তাঁরা চলে যাচ্ছেন। এই জায়গাগুলোয় পরিবর্তন এলেই এই তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগানো যাবে।
সব মিলিয়ে অনেক কিছু করার আছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চেষ্টা চলছে। উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা একটা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিল্ডিং সায়েন্টিস্ট ফর বাংলাদেশ’। এখানে বিভিন্ন ধারায় কাজ হয়। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ক্যাম্পেইন করা হয়। স্কুলের ছেলেমেয়েদের ফাউন্ডেশনে নিয়ে আসা হয়। গবেষণা আসলে কী, একজন বিজ্ঞানী দেখতে কেমন, বিজ্ঞানীরা কীভাবে গবেষণা করেন—এসব তাদের দেখানোর, বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, যাতে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বাস্তবিক জ্ঞানও পায়। এ জন্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বীয় জ্ঞান নিয়ে এখানে এসে পরীক্ষাগারে কাজ করতে পারেন। তাঁরা গবেষণা করবেন, ডেটা অ্যানালাইসিস করবেন, জিনোম সিকোয়েন্স শিখবেন। কারণ, জিনোম সিকোয়েন্স ছাড়া তো আমরা পরবর্তী মহামারিতে টিকে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারি না। তাই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে তাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা। তারা প্রস্তাব পাঠালে আমরা সাহায্য করব।
সুখবর হচ্ছে, সরকার চেষ্টা করছে গবেষণার প্রতি নজর দিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কিন্তু বলছেন, গবেষণার প্রতি নজর দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুও সব সময় বলেছেন, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই কিছু সাহায্য আসে গবেষণার জন্য। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তহবিল পাইনি। আমরা মূলত আন্তর্জাতিক তহবিল পাই। তবে দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কিন্তু গবেষণায় সরকারি তহবিল পাচ্ছে। এভাবেই ধীরে ধীরে গবেষণার দ্বার প্রশস্ত হচ্ছে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এ গবেষণা যেন মানুষের জন্য হয়। অনুলিখন: রোকনুজ্জামান মনি
সেঁজুতি সাহা, বিজ্ঞানী
পৃথিবীজুড়ে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে, তা কি মানবকল্যাণে কাজে লাগছে? মনে হয় এই আধুনিক যুগে এসেও আমরা যেন চিন্তাভাবনায় ঠিক ততটা মানবিক হয়ে উঠতে পারিনি। সভ্যতার এ পর্যায়ে এসেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখানো হয়, নিজের জন্য ভাবতে হবে, নিজের জন্য গবেষণা করতে হবে, নিজের যশ-খ্যাতি বাড়াতে হবে। অর্থাৎ, আমরা বেশির ভাগ সময়ই নিজের জন্য ভাবি। আমাদের মাথায় থাকে বড় বড় পাবলিকেশনস লাগবে, বড় জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করতে হবে, নিজের নামটা বড় করতে হবে। এ ধরনের চিন্তা-প্রক্রিয়ার কারণে সমাজের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের বোধ হারিয়ে যায়।
মনে রাখা উচিত, আমাদের সম্পদ সীমিত। আমরা দেশের সম্পদ ব্যবহার করেই কিন্তু গবেষণা করি, সেটা যে বিষয়েই হোক। এ জায়গা থেকেই ‘কেন গবেষণা করছি’, তা নিয়ে আরও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা উচিত। সেই সঙ্গে মাথায় রাখা দরকার যে, একটা প্রজন্ম আমাদের ভাষা দিয়েছে, আরেকটা প্রজন্ম আমাদের স্বাধীন একটা দেশ দিয়েছে। তাই এ প্রজন্মকে বুঝতে হবে যে, গবেষণা যেন শুধু নিজের জন্য না হয়। গবেষণা হতে হবে সমাজের জন্য, মানুষের জন্য। যেকোনো সম্পদ ব্যবহারের সময় নিজেকে হাজারবার প্রশ্ন করা উচিত, ‘এটা কেন করব’, মানুষের কাজে লাগবে তো! অর্থাৎ, গবেষণার ফলাফল অবশ্যই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সেটা সরাসরি হোক বা নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে হোক। এই জায়গায় এখনো অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। কিন্তু এটাকে শিক্ষাব্যবস্থায় ঢোকাতে পারলে, মানুষের মনে ঢোকাতে পারলে গবেষণার ফলাফল মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তারও আগে মানুষের মধ্যে দেশের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে।
আমি করোনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছিলাম। তবে এখন শুধু আমরাই নয়, বেশ কিছু দল জিনোম সিকোয়েন্স করছে। আমরা মিলেমিশেও বেশ কিছু জিনোম সিকোয়েন্স করছি। বাংলাদেশে বেশ কিছু মাস করোনার ভয়াবহতা কম ছিল। তবে এক-দুই সপ্তাহ থেকে করোনার ভয়াবহতা কিছুটা বাড়ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের বেশি। তাই এখন আমাদের পরিস্থিতিটা খুব ভালোভাবে তদারক করতে হবে। এখন করোনার যে ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে, তার নাম ওমিক্রন। এর প্রকোপ কতটা হবে, তা আমরা জানি না। এতটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশ অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মানলে এবং টিকার ডোজগুলো নিয়মিত নিলে খুব একটা সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্যে অনেক এগিয়েছে। অসম্ভব ভালো ভালো কাজ হয়েছে বাংলাদেশে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কথা ছিল। বাংলাদেশ কিন্তু ডেডলাইনের আগেই লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ পুরস্কৃতও হয়েছে। এ ছাড়া দেশে শিশুমৃত্যুর হার
অনেক কমেছে; বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমেছে। এমন আরও অনেক অর্জন এখন আমাদের দরকার।
শিশুস্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২৮ দিনের কম বয়সী নবজাতকদের মধ্যে মৃত্যুহার এখনো অনেকটা বেশি। এদিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি। নবজাতকের দিকে নজর দিতে গেলে অবশ্যই মায়েদের দিকেও নজর দিতে হবে। প্রতিটি ডেলিভারি যেন নিরাপদ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরেকটা বিষয় বাংলাদেশে মনে হয় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেটা হলো, ষাটোর্ধ্ব যে জনগণ, তাঁদের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। এই জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাঁদের অবহেলা করে এগোনো সম্ভব নয়। তাই তাঁদের জন্যও টিকার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তাঁরা সুস্থ থাকতে পারেন। শিশুদের মতো তাঁদের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যাঁরা এতগুলো বছর দেশকে দিয়েছেন, এখন তাঁদেরকে দেওয়ার পালা। তাই তাঁদের জন্য জাতীয় প্রকল্প থাকতে হবে।
বাংলাদেশে আমি অনেক দিন কাজ করছি, এমন নয়। ছয়-সাত বছর ধরে স্থায়ীভাবে আছি। এই সময়ে আমি একধরনের পরিবর্তন দেখছি, মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি। ছয় বছর আগে যখন ইন্টারভিউ বোর্ডে বসতাম, তখন নতুনদের মধ্যে যে ধরনের উৎসাহ ছিল, তা এখন আরও বেশি। এই প্রজন্মের গবেষণা করার উৎসাহ আছে। দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আছে। এখানে গবেষণার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটাই একমাত্র ব্যাপার নয়; মানসিকতারও ব্যাপার আছে।
প্রতিবছর অনেক স্নাতক বের হচ্ছেন। তাঁদের সবাই যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটা বলা যাবে না। গবেষণায় আমরা খানিকটা পিছিয়ে। তবে চেষ্টা চলছে। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। সুতরাং সুযোগ বাড়ছে। আবার সব সময় সুযোগটাই একমাত্র বিষয় নয়। কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। যেমন আমাদের মা-বাবার প্রজন্ম শুনে এসেছে, ‘চাকরি পেতে হবে, চাকরি পেতে হবে’! কিন্তু এখন আমরা জানি, শুধু চাকরি পাওয়া নয়, চাকরি দেওয়াও যায়। আমরা উদ্যোক্তা হতে পারি। গবেষক হয়েও কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এভাবেই সুযোগ খুঁজে নিতে হবে।
তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে নিবেদন দরকার, সেখানে মনে হয় ঘাটতি রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তরুণ বিজ্ঞানীদের ওপর একটা সামাজিক চাপও থাকে। বিসিএস দিতে হবে বা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে—এ ধরনের বিষয়গুলো তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানই যে সব সময় ভালো কাজ করছে, তা কিন্তু নয়। অথচ সমাজের চাপে তরুণ বিজ্ঞানীদের মাথায়ও সরকারি চাকরি করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিন্তা ঘোরে। দেখা যায় কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তিন বছর ধরে কাজ শিখে যখন দেশকে কিছু দেওয়ার সময় এল, তখনই তাঁরা চলে যাচ্ছেন। এই জায়গাগুলোয় পরিবর্তন এলেই এই তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগানো যাবে।
সব মিলিয়ে অনেক কিছু করার আছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চেষ্টা চলছে। উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা একটা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিল্ডিং সায়েন্টিস্ট ফর বাংলাদেশ’। এখানে বিভিন্ন ধারায় কাজ হয়। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে স্কুলে স্কুলে গিয়ে ক্যাম্পেইন করা হয়। স্কুলের ছেলেমেয়েদের ফাউন্ডেশনে নিয়ে আসা হয়। গবেষণা আসলে কী, একজন বিজ্ঞানী দেখতে কেমন, বিজ্ঞানীরা কীভাবে গবেষণা করেন—এসব তাদের দেখানোর, বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, যাতে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বাস্তবিক জ্ঞানও পায়। এ জন্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বীয় জ্ঞান নিয়ে এখানে এসে পরীক্ষাগারে কাজ করতে পারেন। তাঁরা গবেষণা করবেন, ডেটা অ্যানালাইসিস করবেন, জিনোম সিকোয়েন্স শিখবেন। কারণ, জিনোম সিকোয়েন্স ছাড়া তো আমরা পরবর্তী মহামারিতে টিকে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারি না। তাই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে তাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা। তারা প্রস্তাব পাঠালে আমরা সাহায্য করব।
সুখবর হচ্ছে, সরকার চেষ্টা করছে গবেষণার প্রতি নজর দিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কিন্তু বলছেন, গবেষণার প্রতি নজর দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুও সব সময় বলেছেন, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই কিছু সাহায্য আসে গবেষণার জন্য। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তহবিল পাইনি। আমরা মূলত আন্তর্জাতিক তহবিল পাই। তবে দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কিন্তু গবেষণায় সরকারি তহবিল পাচ্ছে। এভাবেই ধীরে ধীরে গবেষণার দ্বার প্রশস্ত হচ্ছে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এ গবেষণা যেন মানুষের জন্য হয়। অনুলিখন: রোকনুজ্জামান মনি
সেঁজুতি সাহা, বিজ্ঞানী
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫