Ajker Patrika

জ্বালানি সনদ চুক্তি: জনস্বার্থ রক্ষা করে কি?

তানজিমউদ্দিন খান
আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১৭: ১২
জ্বালানি সনদ চুক্তি: জনস্বার্থ রক্ষা করে কি?

এ বছরের শুরুতে ইউরোপীয় কমিশনের সংশোধন প্রস্তাবকে ঘিরে জ্বালানি সনদ চুক্তি (এনার্জি চার্টার ট্রিটি বা ইসিটি) আবার আলোচনায় এসেছে। জ্বালানি খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিনিয়োগকারী কোম্পানি, ব্যক্তি কিংবা অংশীদার বা অন্য কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় পক্ষকে রক্ষায় ১৯৯৪ সালে প্রণীত হয় এই চুক্তি। অন্য কথায়, এই চুক্তিতে সইয়ের মাধ্যমে যেকোনো রাষ্ট্র জ্বালানি খাতে বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট সবার বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক স্বার্থ রক্ষার আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নিশ্চয়তা দেয়।

ইসিটি-সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণার সূচনা ঘটে ১৯৯১ সালে ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় কাউন্সিলের এক সভায়। সভায় সেই সময়কার ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুড লুবার প্রথমবারের মতো একটি নিজস্ব ইউরোপীয় জ্বালানি মণ্ডলী (এনার্জি কমিউনিটি) গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবের হাত ধরেই আবির্ভূত হয় জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারীর নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষায় ইউরোপীয় জ্বালানি সনদ। তবে এই সনদের আইনগত প্রয়োগ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না, ছিল ঐচ্ছিক।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মধ্য এশিয়া এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে জ্বালানি খাতে পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনার কারণে এর ব্যাপ্তি আর ইউরোপকেন্দ্রিক থাকল না। এটাই চার বছর পর হয়ে গেল আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক জ্বালানি সনদ চুক্তি বা ইসিটি, যা ১৯৯৮ সাল থেকে কার্যকর হয়। বর্তমানে ৫৩টি দেশ ও অর্থনৈতিক জোট এ চুক্তির আওতায়।

তবে এতে ইউরোপীয় জ্বালানি সনদটি অবলুপ্ত হয়নি। ওই সনদ এখন হালনাগাদ হয়ে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক জ্বালানি সনদ (আইইসি) নামে একটি রাজনৈতিক ঘোষণা ও প্রতিজ্ঞা হিসেবে টিকে আছে। এতে সইয়ের মাধ্যমেই রাষ্ট্র ইসিটি সইয়ের পথে একধাপ এগিয়ে যায়।

৫০টি ধারা নিয়ে প্রণীত ইসিটি মোট আট ভাগে বিভক্ত। মোটাদাগে চারটি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এর আইনি কাঠামো। সেগুলো হলো: (১) স্বদেশি-বিদেশিনির্বিশেষে সমাচরণ (ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট); ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ বাণিজ্যনীতির ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা; (২) বিভিন্ন জ্বালানি উপাদান, পণ্য, সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে পাইপলাইন, গ্রিডের মাধ্যমে বা অন্যান্য উপায়ে স্থানান্তর ও পরিবহন; (৩) আন্তরাষ্ট্রীয় ও স্বাগতিক রাষ্ট্র বনাম বিদেশি বিনিয়োগকারী দ্বন্দ্ব নিরসন; (৪) অধিক কার্যকরভাবে জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত এবং জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের কারণে পরিবেশগত ঝুঁকি হ্রাস।

আইইসি সচিবালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে আইইসি সই করে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সচিবালয়ের এক কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের বরাতে জানা যায়, বাংলাদেশ আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক ইসিটি সইয়ের প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। অবশ্য ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারিতেই আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অষ্টম আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যেকোনো সময় স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।

ইতিমধ্যে নানা সুবিধার কারণে দেশি-বিদেশি কোম্পানির জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিবেচনাহীনভাবে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিনির্ভর উন্নয়ন ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই খাত মূল চালিকাশক্তি হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। সে জন্যই পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি ফাস্ট সাপ্লাই এনহ্যান্সমেন্ট (স্পেশাল প্রভিশন) অ্যাক্ট ২০১০ প্রণয়নের মাধ্যমে এই খাতকে দেওয়া হয়েছে আইনগতভাবে জবাবদিহি আর সিদ্ধান্ত প্রণয়নে স্বচ্ছতা থেকে দায়মুক্তি; গৃহীত হয়েছে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১০, যা সংশোধিত হয়েছে ২০১৬ সালে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য দায়মুক্তি আইনটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানে ২০১০ (সংশোধিত ২০১৬) লক্ষ্য ঠিক করা হয়, ২০৪১ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশই আসবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। যেমন: মোট উৎপাদনের ৩২ শতাংশ আসবে কয়লা এবং ৪৩ শতাংশ আসবে গ্যাস/এলএনজি থেকে এবং বাকি বিদ্যুৎ অন্যান্য উৎস থেকে। যদিও বাংলাদেশ জলবায়ু-সংক্রান্ত প্যারিস সমঝোতা চুক্তি (প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র এবং গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত ২৬তম জলবায়ু সম্মেলনে ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ বর্তমান পর্যায় থেকে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ হারে কমাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশে জ্বালানি খাতই কার্বন নিঃসরণের (৫৫%) জন্য মূলত দায়ী।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিনির্ভর উন্নয়ন ধারণার বাস্তবায়ন এবং এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এর প্রতি মনোযোগী হয়েছে অনেক বেশি। তাই চীন, হংকং, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, কাতার, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মরিশাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যুক্ত হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে শুধু বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল, যা ছিল মোট বিনিয়োগের ৩২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২১ সালেও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পেট্রোলিয়ামসহ জ্বালানি খাত বিদেশি বিনিয়োগের দিকে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন হচ্ছে, ইসিটি নামের এই আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নিজের স্বার্থ, নাগরিকের অধিকার ও প্রকৃতি সুরক্ষায় কতটুকু কার্যকর? এর উত্তর খুঁজতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার প্রধানত দুটি বিষয়ে। প্রথমত, এই আইনি কাঠামোতে কী আছে তা বোঝা এবং দ্বিতীয়ত, যেসব রাষ্ট্র বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারী সুরক্ষার আইনি কাঠামোতে অনুস্বাক্ষর করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা কী?

এখানে বলা প্রাসঙ্গিক, জ্বালানি সনদ চুক্তিটির ৫০টি ধারার অধিকাংশ নিয়েই রয়েছে নানা বিতর্ক। সব কটি বিতর্কিত ধারা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনাসহ অনুস্বাক্ষর-পরবর্তী বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ এই সীমাবদ্ধ পরিসরে সম্ভব নয়। তাই এই চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অধিক আলোচিত-সমালোচিত বিষয় এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে মরিয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রাষ্ট্রের জন্য অধিক প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হবে। যেমন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সার্বভৌমত্ব ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি; ন্যায্যতা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আচরণগত সমদর্শিতার বিধান; প্রতিবেশগত উদ্বেগ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জ্বালানি রূপান্তর; বিনিয়োগ দ্বন্দ্ব নিরসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে স্বাগতিক রাষ্ট্রের জন্য অসম ও ভারসাম্যহীন অবস্থা।

ক. সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সার্বভৌমত্ব এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি

জ্বালানি সনদ চুক্তিটির ধারা ১৮ চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের জ্বালানি সম্পদের ওপর তার সার্বভৌমত্ব ও অধিকারের নিশ্চয়তা দিলেও এর ঘোষণাপত্রটি বিপরীত কথা বলে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সার্বভৌমত্ব নীতিটি যেন চুক্তির অন্য বিধান প্রয়োগে অন্তরায় না হয়। একইভাবে চুক্তির ধারা ৫, ১১ ও ১৪ অনুযায়ী, কোনো স্বাগতিক রাষ্ট্রেই বিদেশি বিনিয়োগকারীকে তাদের নিজস্ব কোনো পণ্য ব্যবহারে বাধ্য করার অধিকার রাখে না। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় কাউকে কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও স্বাগতিক রাষ্ট্র বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিতে পারে না। অথচ, বিনিয়োগকারী ব্যবসার পুঁজি, মুনাফা, উদ্বৃত্ত অর্থ, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন রকম পারিশ্রমিক, উপহার ইত্যাদি বিনা বাধায় নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আইনগত অধিকার রাখে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে বা হঠাৎ করে কোনো কারণে অথবা বর্তমান শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিদেশি বিনিয়োগ বা বিনিয়োগকারীর ওপর কোনো কর ধার্য করলে কিংবা ভিন্ন কোনো অবস্থান নিলে, সেই প্রতিষ্ঠান স্বাগতিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত অধিকার রাখে। এমন মামলার উদাহরণও আছে। ভোক্তার জন্য জ্বালানি মূল্য কমানোয় ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ায় ব্রিটিশ সাবসিডিয়ারি অ্যাপ্লাইড এনার্জি সার্ভিসেস (এইএস) স্বাগতিক রাষ্ট্র হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে এবং অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এভোলিউশন মাইনিং (ইভিএন) বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে এ চুক্তির আওতায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (আইসিএসআইডিতে) ক্ষতিপূরণ মামলা করে। এর রায় স্বাগতিক রাষ্ট্রের পক্ষে গেলেও আইনানুযায়ী ট্রাইব্যুনালের খরচ উভয় পক্ষকেই সমভাবে বহন করতে হয়েছে। হাঙ্গেরির মামলাটির পেছনে মোট ব্যয় হয়েছিল ৫৯০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা (১ ডলার= ৯৩.২৯ দরে)। রায় স্বাগতিক রাষ্ট্রের বিপক্ষে গেলে এ ব্যয় নিঃসন্দেহে কয়েক গুন বেড়ে যাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং স্বত্ব নিরসন-সংক্রান্ত ধারা-১২ ও ১৩, বিনিয়োগকারী কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ন্যায্য বাজার দর (ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু) নীতি প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এটি ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারণকে স্বাগতিক রাষ্ট্রের জন্য আরও জটিল ও বিপজ্জনক করেছে। জার্মানি পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে ক্রমান্বয়ে সরে আসার সিদ্ধান্তে সুইডেনভিত্তিক কোম্পানি ভ্যাটেনফল এবি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২৯০০ কোটি ডলার বা ২৭ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল।

এ চুক্তির সবচেয়ে বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্য হলো—বিনিয়োগসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে অতি ব্যয়বহুল আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করা। মামলা করতে চাইলে অন্য আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থার মতো রাষ্ট্রের অনুমতি নেওয়া বা প্রাথমিক ধাপে দ্বন্দ্ব নিরসনে স্বাগতিক রাষ্ট্রের আদালতে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। বরং ধারা ২৬ (৩) (অ) অনুযায়ী এই চুক্তি স্বাক্ষরের মানে হলো স্বাগতিক রাষ্ট্র শর্তহীনভাবে বিনিয়োগসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে সরাসরি আন্তর্জাতিক সালিসে অংশগ্রহণে সম্মতি দিয়েছে।

চুক্তিটির আরেকটি বিতর্কিত ধারা হলো ৪৭ (৩)। একে অনেকেই ‘মড়ার জীবিত ভূত’ (জম্বি) বলে ডাকে। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে এলেও পরবর্তী ২০ বছর বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারী সুরক্ষার আইনি কাঠামো বলবৎ থাকবে। এর ফল ভোগ করেছে ইতালি। রাষ্ট্রটি এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার এক বছর পর ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি রকহপার কর্তৃক মামলার শিকার হয়। ইতালি উপকূলীয় অঞ্চলে গ্যাস বা খনিজ খনন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে কোম্পানিটি ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা ঠোকে।

স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এই চুক্তি রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে বিদেশি বিনিয়োগকারীর বাণিজ্যিক স্বার্থের অধীনস্থ করে। বাংলাদেশের মতো বিদেশি বিনিয়োগে মরিয়া রাষ্ট্রের জন্য এ এক কঠিন বাস্তবতা।

খ. ন্যায্যতা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আচরণগত সমদর্শিতার বিধান

জ্বালানি সনদ চুক্তির ন্যায্যতা এবং বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আচরণগত সমদর্শিতার বিধান আছে ধারা ১০-এ। এটি নিশ্চিত করে যে বিনিয়োগকারীর ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, এর রক্ষণাবেক্ষণ, বিনিয়োগের ব্যবহার এবং এ থেকে প্রাপ্ত লাভের ভোগ যেন কোনোভাবে চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের ‘অকারণবশত ও বৈষম্যমূলকভাবে’ গৃহীত কোনো পদক্ষেপে বাধাগ্রস্ত না হয়।

কিন্তু ‘অকারণবশত ও বৈষম্যমূলকভাবে’ গৃহীত পদক্ষেপের কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় এটি কে কীভাবে ব্যাখ্যা করছে, তার ওপর নির্ভর করছে। যেমন: এই বিধানসংক্রান্ত ‘মেক্সিকো বনাম স্প্যানিশ কোম্পানি তেকনিকাস মেদিওআম্বিয়েনতালেস তেকমেদ’ মামলায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ দ্বন্দ্ব নিরসন-সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল ২০০৩ সালের প্রদত্ত রায়ে কোনো বিনিয়োগ থেকে ব্যক্তি বা কোম্পানির প্রাথমিক আকাঙ্ক্ষার (বেসিক এক্সপেক্টেশনস) ক্ষতিকে ন্যায্যতা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আচরণগত সমদর্শিতার বিধানের লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করেছে। আবার, ২০১০ সালে লিমান কাস্পিয়ান ওয়েল বিভি ও এনসিএল ডাচ ইনভেস্টমেন্ট বনাম কাজাখস্তান মামলা নিরসনে গঠিত আরেক ট্রাইব্যুনাল এ বিধানকে ব্যাখ্যা করে বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় ন্যূনতম মানদণ্ডের চেয়েও আরও বেশি ন্যায্যতা (ফেয়ারনেস) আর সমদর্শিতাকে (ইক্যুইটেবলনেস)।

ফলে স্বাগতিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীর অযাচিত সুবিধা নেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়। বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমও এতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আবার ধারা ২৪ নিশ্চিত করেছে, জ্বালানি খাতে কার্যক্রমের কারণে স্বাস্থ্য বা পরিবেশগত কোনো ক্ষতি মোকাবিলায় রাষ্ট্র যেন বিনিয়োগকারীর জন্য কোনো বাধা তৈরি না করে। চুক্তিটির ধারা ২৪ (২) ক্ষতিগ্রস্ত এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি যুক্ত করলেও এ ক্ষেত্রে তারা বিবেচনা করেছে শুধু তাদের, যাদের এ খাতে বিনিয়োগ আছে। এর ধারা ৭ জ্বালানি উপাদান, যন্ত্রপাতি, পণ্য পরিবহন, প্রকল্প বিস্তার বা স্থানান্তরসহ পাইপলাইন, অবকাঠামো নির্মাণের সব দায়িত্ব দিয়েছে স্বাগতিক রাষ্ট্রের ওপর। সম্প্রতি কানাডীয় কোম্পানি ট্রান্সকানাডা টার স্যান্ড পাইপলাইন প্রকল্পটি বাতিলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি স্বাক্ষর করেনি।

গ. প্রতিবেশগত উদ্বেগ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জ্বালানি রূপান্তর

জ্বালানি সনদ চুক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীকে সুরক্ষায় আইনি কাঠামো প্রয়োগে যত কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে, প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষাসংক্রান্ত জনস্বার্থের ব্যাপারে ঠিক ততটাই নমনীয়। যদিও চুক্তিটির প্রারম্ভিকায় পরিবেশগত সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত ইউএনএফসিসিসির কথা স্মরণ করা হয়েছে। বৈপরীত্যের প্রকাশ পেয়েছে চুক্তির ধারা ১৯ (১)-এ। সেখানে পরিবেশগত প্রভাব কমানোর কথা বলা হলেও অদ্ভুত কিছু শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই বলা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক কার্যকারিতা’র ওপর ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়নের ওপর পরিবেশের বিরূপ প্রভাব কমাতে। কিন্তু পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর জ্বালানি খাতের কর্মকাণ্ডের প্রভাব কমানোর কথা বলা হয়নি। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব নিরূপণ, পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থার ধরন নির্ধারণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর চাপানো হয়েছে। আবার পলিউটারস পে প্রিন্সিপাল প্রয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এটি এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ চক্রের পুঁজি বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মুক্তবাজারবিমুখী না হয়।

পরিবেশ ও প্রতিবেশগত উদ্বেগ নিরসনে এমন নমনীয় আইনি কাঠামোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোনো চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরোতে চাইলেও তা বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। বৈশ্বিক মোট বিনিয়োগের ৬১ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানিতে হওয়ায় বিনিয়োগকারীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো রাষ্ট্র নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতে চাইলে তা জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগকারীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে এই চুক্তিকে আইনগতভাবে ব্যবহার করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মামলার হুমকিতে ফ্রান্স সম্প্রতি জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে একটি নমনীয় আইন গ্রহণ করেছে। আবার, ২০২১ সালে নেদারল্যান্ডস কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ সরে আসার আইন পাস করলে জার্মান-ভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি ইউনিপার ১ বিলিয়ন ইউরো ও আরডব্লিউই এজি ১৪০০ কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে আইএসআইডিতে। বিশ্বজুড়ে ৪৫টি রাষ্ট্র এ ধরনের মামলার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ২০টি রাষ্ট্র সনদ চুক্তির স্বাক্ষরকারী।

ঘ. দ্বন্দ্ব নিরসনে অসম ও ভারসাম্যহীন অবস্থা

সনদ চুক্তির ধারা ২৬ অনুযায়ী, স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র ও অন্য একটি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে রাষ্ট্র-বিনিয়োগকারী দ্বন্দ্ব নিরসন পদ্ধতি প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। এতে শুরুতে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে বিনিয়োগসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়। এর মধ্যে সমাধান না হলে চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের নিজস্ব আদালত বা পূর্বস্বাক্ষরিত কোনো চুক্তি অনুযায়ী প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল অথবা আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা যায়, দ্বন্দ্ব নিরসনে মোট ৬১টি মামলার ক্ষেত্রে প্রথম দুটি মাধ্যমের ব্যবহার হয়নি বললেই চলে। এই মামলাগুলোর সালিসির জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলো বেছে নিয়েছে মূলত আইসিআইডি (৩৪), ইউনাইটেড নেশনস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ল (ইউএনসি আইটিসি) আরবিট্রেশন রুলস (১৫) এবং দ্য স্টকহোম চেম্বার অব কমার্সকে (১২)।

এরই মধ্যে ‘মড়ার জীবিত ভূত’ (জম্বি) আখ্যা পাওয়া ধারাটি আলোচনায় এসেছে। চুক্তিটি স্বাগতিক রাষ্ট্রকে স্থানীয়ভাবে বা নিজস্ব উপায়ে সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ করে না, যার পূর্বশর্ত হলো মামলার জন্য রাষ্ট্রের অনুমোদন নেওয়া। এমনকি স্বাগতিক রাষ্ট্র সালিসির জন্য নিজস্ব আইনি কাঠামো ব্যবহারেরও অধিকার রাখে না। সঙ্গে রয়েছে সালিসের ব্যয় সমভাবে ভাগের বিধান।

প্যানেল সদস্যদের বাছাইয়ের যোগ্যতা এবং তাঁদের স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তাদানের বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। দেখা যায়, খুব অল্পসংখ্যক সালিসকারী পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে সালিসকারীদের কেউ কেউ আবার অন্য কোনো মামলায় আইনজীবী হিসেবে সক্রিয় থাকেন। ফলে নিজেদের দেওয়া রায় উল্টে নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহারের সুযোগ থাকে। আবার এঁদের কেউ কেউ উপদেষ্টা হিসেবে বাদী, বিবাদী অথবা তৃতীয় কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করেন। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ জন সালিসকারী মোট সালিসির ৪৪ শতাংশে অংশ নিয়েছেন।

দ্বন্দ্ব নিরসনের এই প্রক্রিয়াকে অ্যালেন অ্যান্ড ওভেরি, কিং অ্যান্ড স্পালডিং, আরনল্ড অ্যান্ড পোর্টার এবং ফ্রেশফিল্ডস অ্যান্ড ওয়েইল নামের অভিজাত পাঁচটি আইনি প্রতিষ্ঠান করায়ত্ত করে রেখেছে। এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে প্রকাশিত মোট মামলার প্রায় অর্ধেকই তারা পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে অ্যালেন অ্যান্ড ওভেরি তাদের পরিচালিত ১৬টি মামলার পাঁচটি থেকেই আয় করেছে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আবার শুধু একটা বিনিয়োগ সালিসী পরিচালনায় একটি রাষ্ট্রের গড় ব্যয় ৪৯ লাখ ডলার বা ৪৫ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারী বা কোম্পানির জন্য এ পরিমাণ ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। এই ব্যয় বহন বড় কোম্পানির জন্য সহজ হলেও এশিয়া, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর জন্য সহজ নয়।

সবকিছু মিলিয়ে এই বিতর্কটা তোলা যায় যে, সনদ চুক্তির আওতায় বিনিয়োগ দ্বন্দ্ব নিরসন পদ্ধতি পুরোপুরি স্বাগতিক রাষ্ট্রের জন্য একটা অসম ও ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। জ্বালানি রূপান্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জীবাশ্ম জ্বালানিবিরোধী গৃহীত পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে ধনী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই পদ্ধতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ আইনি কাঠামো তৈরিই হয় শক্তিশালীর প্রভাবকে আইনি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যাতে সবার জন্য সমান সুযোগ ও সবার স্বার্থ ভারসাম্যপূর্ণভাবে সুরক্ষিত হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো।

শেষ কথা
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের জন্য ওপরের বিশ্লেষণের প্রাসঙ্গিকতা কী? বাংলাদেশের করণীয়ই-বা কী? এ তো স্পষ্ট, বিদেশি বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে ইসিটির আইনি কাঠামো বেশ একপেশে ও ভারসাম্যহীন। দ্বন্দ্ব নিরসনের নামে স্বাগতিক রাষ্ট্রের জন্য এটা এক আইনি ফাঁদ। আবার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন, ২০১০-এর কারণে এ খাত এরই মধ্যে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ঊর্ধ্বে উঠে এক স্বেচ্ছাচারী কাঠামোতে আবদ্ধ। আবার পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১০ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়ন-মরিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের মূল্যবোধগত অবস্থানকে হাস্যকর করে তুলেছে। এর সঙ্গে নতুন করে ইসিটি হলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রাণ-প্রকৃতিবিরোধী অন্যায্য অবস্থান বিদেশি বিনিয়োগকারীর অনুকূলে আরও শক্তিশালী হবে এবং তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। এতে রাষ্ট্র থেকে সমাজ আরও বিচ্ছিন্ন হবে এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। এর পরিবর্তন চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন, ২০১০-এর বিরোধিতার পাশাপাশি বাংলাদেশ যেন ইসিটি সই না করে, সে বিষয়েও জোর দিতে হবে। এটা করতে হবে জনস্বার্থ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদ থেকে রক্ষার তাগিদ থেকেই।

তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত